ট্রাম্প এখন কার্যত আইনের ঊর্ধ্বে

ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, তিনি আইনের ঊর্ধ্বের মানুষ। ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? তিনি কীভাবে এমনটা দাবি করতে পারেন? তাঁর এই দাবি কি ধোপে টিকবে?

আমেরিকার গণতন্ত্রের অন্যতম একটি মৌলিক বিষয় সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকে খোদাই করে লেখা আছে, ‘আইন সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করবে’। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদেও সুস্পষ্ট করে লেখা আছে, ‘আইনের চোখে সবাই সমান’।

কিন্তু এ মুহূর্তে আমেরিকার প্রশাসনের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, তারা ট্রাম্পকে আইনের ঊর্ধ্বে বিবেচনা করছে। দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় বলেছে, অপরাধ তদন্তের বিষয় থেকে প্রেসিডেন্টের রক্ষাকবচ আছে। অর্থাৎ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ক্রিমিনাল প্রসিকিউশন আনা যাবে না। তার মানে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট যদি আইনবিরোধী কিছু করেন এবং সে বিষয়ে যদি তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা না হয়, তাহলে সে অপরাধ থেকে তিনি পার পেয়ে যাবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচার করতে হলে আগে তাঁকে অভিশংসন করতে হবে। অভিশংসন প্রস্তাব যদি আইনসভায় পাস না হয়, তাহলে অপরাধের তদন্ত কার্যক্রম চালাতে হলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

একজন প্রেসিডেন্টকে বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। তিনি যাতে জাতির সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত না হন, সেই বিবেচনায় সংবিধান তাঁকে সব ধরনের মামলা থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে। সংবিধানের এই বিধি ট্রাম্পকে বেপরোয়া করে তুলেছে বলে ভাবা হচ্ছে।

সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, ট্রাম্প আপাতত আইনের ঊর্ধ্বে। কারণ, তাঁকে অভিশংসন করার প্রস্তাব সিনেটে আটকে যাবে। তিনি কী করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে কী কী প্রমাণ পাওয়া গেছে, কার্যত সেগুলো কোনো বিষয় নয়। বাস্তবতা হলো তিনি যতক্ষণ গদিতে আছেন, ততক্ষণ তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে।

প্রেসিডেন্টের কাজকর্মে ব্যাঘাত যাতে না ঘটে, সে জন্য তাঁকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত হলে তাঁর কাজের কি খুব ব্যাঘাত হবে?

আমরা জানি ট্রাম্প চুলের স্টাইল ও সাজগোজ ঠিক রাখা, টেলিভিশন দেখা, টুইট করা, রাগারাগি করা এবং প্রচার–প্রচারণায় তাঁর বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেন। এসব কাজ বাধাগ্রস্ত হলে জাতির কী এমন ক্ষতি হবে?

প্রেসিডেন্ট যদি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, তাহলে কী করতে হবে, তা সংবিধানে বলা আছে। তিনি অক্ষম হলে তাঁর জায়গায় কে বসবেন, তা–ও বলা আছে। কিন্তু ট্রাম্প যে গদিতে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন, সেটি প্রমাণের সব পথ বন্ধ হয়ে আছে।

ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি সাইরাস আর ভেন্স জুনিয়র ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আনা একটি অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। এর পাশাপাশি আরও একটি ভয়ানক অভিযোগ আছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। সেটি হলো কর ফাঁকি। কিন্তু নিম্ন আদালত ও আপিল বিভাগ এ তদন্ত চালানোর পক্ষে মত দিলেও ট্রাম্প তাঁর আয়কর বিবরণী প্রকাশ করেননি। উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে চলা তদন্ত থামাতে তিনি মামলা করেছেন।

অভিশংসন ছাড়া মার্কিন সংবিধান প্রেসিডেন্টকে যাবতীয় অপরাধের তদন্ত থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে যুক্তি দিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবীরা শুরু থেকেই এ আয়কর বিবরণী প্রকাশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন।

তবে আপিল আদালত ট্রাম্পের দায়মুক্তির যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, সাইরাসের কার্যালয় ট্রাম্প নয়, তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাছে নথি চেয়েছে; যা মোটেও প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এখন বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে ফয়সালা হবে।

ট্রাম্পের সমর্থনে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ ভিক্টর ম্যারেরো লিখেছেন, শুধু প্রেসিডেন্ট নন, তাঁর আত্মীয়স্বজন এবং তাঁর ব্যবসাসংশ্লিষ্ট সবাই আইনত আইনের ঊর্ধ্বে।

প্রেসিডেন্ট যেকোনো ধরনের অপরাধসংক্রান্ত বিষয় থেকে সাংবিধানিকভাবে দায়মুক্ত। ফলে তাঁর কোনো কাজের তদন্ত করা, মামলা করা, তাঁকে গ্রেপ্তার করা কিংবা বিচার করা—কিছুই করা আইনসম্মত হবে না।

ট্রাম্প ও তাঁর কৌঁসুলিরা এখন অভিশংসন প্রস্তাব আনাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তাঁরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো কাউকে কোনো তথ্য দেবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।

ডেমোক্র্যাটরা এখন বুঝতে পারছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনার চেষ্টা কাজে লাগবে না। ট্রাম্পের অনুগত বলে পরিচিত বিল বারের অধীন বিচার মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনবে বলে একেবারেই মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ট্রাম্পকে আরও বেপরোয়া করে তুলবে।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

ল্যারি বেন হার্ট : মার্কিন লেখক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার