জাহাঙ্গীরনগর সংকট

উন্নত ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের উচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পাস পুলিশের ওপর ন্যস্ত থাকে। আমাদের ক্যাম্পাসগুলোয় তেমন কিছু নেই। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তক্ষয়ী ও হিংসাশ্রয়ী ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে, যা প্রক্টরিয়াল আইন বা শিক্ষকসুলভ অনুশাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ক্যাম্পাসে সহিংসতা মোকাবিলার পথ কী, সেটা সত্যিই এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, ক্যাম্পাসের শান্তি রক্ষায় পুলিশের পদ্ধতিগত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ যেমন বিপজ্জনক, তেমনি ক্যাম্পাস পুলিশের ধারণা এখানে আদৌ কাজ করবে কি না, সেটাও এক প্রশ্ন। তবে আর যা–ই হোক ক্যাম্পাসে ‘শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার’ দায়িত্ব কোনো বিবেচনাতেই কোনো ছাত্রসংগঠনকে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারি ছাত্রসংগঠন ক্রমেই অলিখিতভাবে ‘ক্যাম্পাস পুলিশ’ হয়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনায় তার প্রমাণ মিলল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলন যদি ‘সীমা’ অতিক্রম করে থাকে, উপাচার্য যদি অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে
থাকেন এবং আইন বা শৃঙ্খলাবিধি যদি সত্যিই বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে সামনে বিকল্প কম ছিল? ১৯৭৩ সালের আইন কম বলে? সেই আইনের
কোথাও ছাত্রসংগঠনের ভূমিকা স্বীকার করা হয়নি। সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের সহিংস হামলার পর উপাচার্যদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের সঙ্গেও আমরা পরিচিত। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম একটি তৎপরতা বা আইন হাতে তুলে নেওয়ার পর উপাচার্য বলেছেন, ‘আমি আনন্দিত’। তিনি
একটি সংগঠনের হামলার ঘটনাকে এমনকি ‘গণ-অভ্যুত্থান’ বলে ঘোষণা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে উদাহরণ তৈরি হলো, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ‘অবরুদ্ধ’ হওয়ার প্রবণতা ইদানীং গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপাচার্যদের আমরা একইভাবে ছাত্রলীগের প্রতি ‘কৃতজ্ঞ’ হতে দেখব?

বর্তমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধিকরণ অভিযানের ভ্রূণ কিন্তু তৈরি হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকেই। উন্নয়ন কাজে চাঁদা দাবির অভিযোগের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরে যেতে হয়েছে। সেই একই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির তিন ছাত্রলীগ নেতা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্র ও শিক্ষকদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তাঁর পরিবারের এর সঙ্গে যুক্ততা রয়েছে। ফলে এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

অনির্দিষ্টকাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণায় সংকটের সমাধান পাওয়া যাবে না।