ছাত্রাবাস উদ্ধার আন্দোলন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া ছাত্রাবাসগুলো উদ্ধারের আন্দোলন এখন রাস্তায় চলে এসেছে। হল উদ্ধারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচির কারণে যান চলাচল বন্ধ হওয়াসহ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। একটি ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবির ক্ষেত্রে আন্দোলনের এই ধরন ও পদ্ধতি জনসমর্থন হারাতে পারে। বেদখল হয়ে যাওয়া হল বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দিতে হবে—এটা একটি যৌক্তিক দাবি। কিন্তু এ জন্য জনদুর্ভোগ সৃষ্টি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের দাবি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি হল বেদখল হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট যেখানে প্রবল, সেখানে এই হলগুলো উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন হবে, সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে যে কোনো ফল পাওয়া যায়নি তা-ও নয়, সরকার ইতিমধ্যেই হলগুলো উদ্ধারের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির দায়িত্ব, বেদখল হিসেবে চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর ব্যাপারে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দেওয়া এবং এ ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া। এই কমিটি একটি রিপোর্ট দেওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংযত ও যৌক্তিক আচরণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরুর দিকে পুলিশের বাড়াবাড়ির বিষয়টি পরিস্থিতিকে খারাপ করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুলিশের আক্রমণ থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কেউই রেহাই পাননি। এ ঘটনার জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচিত পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। আমরা মনে করি, পুলিশের এই বাড়াবাড়ির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে সরকার যে প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থান দেখাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
অন্যদিকে, বেদখল হল উদ্ধারের আন্দোলনের সঙ্গে আরও অনেক নতুন নতুন দাবি যুক্ত হচ্ছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখা স্থানান্তরের দাবি উঠেছে। জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান ধর্মঘট এবং সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানার টানিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
বিষয়টি উদ্বেগের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঐতিহ্যবাহী এই আদি অফিসটি এখান থেকে সরানোর দাবি কতটুকু যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত, সেটা ভেবে দেখা জরুরি।
বেদখল হয়ে যাওয়া হল উদ্ধারের সুনির্দিষ্ট দাবি নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেখানে যদি নতুন নতুন দাবি যুক্ত হতে থাকে এবং তা যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তবে আন্দোলন তার লক্ষ্য হারাতে পারে। আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয়টির বেদখল হল উদ্ধারের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার পরিবেশ আরও উন্নত করার দাবিতে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। একই সঙ্গে সরকারের তরফেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া পূরণে সক্রিয় ভূমিকা আশা করছি।