সৌদি থেকে শূন্য হাতে ফেরা

সৌদি আরব থেকে নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণির শ্রমিক দেশে ফিরে আসছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই। ফিরে আসছেন না বলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন 

বলাটাই শ্রেয়। কেননা, স্বাভাবিক অবস্থায় শ্রমিকেরা ঘরে ফিরলে স্বজনদের আনন্দিত হওয়ার কথা। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে শ্রমিকেরা দেশে ফিরবেন, তাঁদের বদলে আরেক দল শ্রমিক যাবেন, আমরা এই রীতিই এত দিন দেখে এসেছি। কিন্তু এখন যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের ফেরাটা শুধু অস্বাভাবিক নয়, অমানবিক ও নির্দয়। 

আইনানুযায়ী, সৌদি আরবে ফ্রি ভিসায় গিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। যেই কোম্পানির নিয়োগপত্র নিয়ে শ্রমিকেরা যাবেন, সেই কোম্পানিতে তাঁদের কাজ করতে হবে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে দেশে ফিরে আসতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কর্মীকে ছাঁটাই করে। এসব কর্মী লাখ লাখ টাকা দিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে বিপদে পড়েন। ফলে তাঁরা অন্য কোনো কোম্পানিতে কাজ করতে বাধ্য হন। 

অন্যদিকে যেসব নারী শ্রমিক জীবিকার জন্য সৌদি আরবে গিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সৌদি আরব থেকে নিগৃহীত হয়ে অনেকেই দেশে ফিরে আসছেন। শাহজালাল বিমানবন্দরে এসব নারী শ্রমিকের বিষণ্ন ও বিপন্ন চেহারাই বলে দেয় তাঁদের ওপর কী অমানুষিক নিগ্রহ চালানো হয়েছে। অনেক নারী কর্মীকে বেতন-ভাতা দূরে থাক, ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না। নির্যাতনের কারণে অনেক শ্রমিক সেখানে মারা গেছেন। ফিরে এসেছেন লাশ হয়ে। 

সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক ফেরত আসা নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, যদি কেউ স্পনসরের বাইরে কাজ করেন, পালিয়ে যান কিংবা ইকামা, বর্ডার ও শ্রম আইনের কোনো ধারা ভঙ্গ করেন, তাহলে তাঁকে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করে সৌদি সরকারের অর্থায়নে ডিপোর্টেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পারে। 

কিন্তু যেসব বাংলাদেশি নারী শ্রমিক সেখানে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন, নিয়োগকর্তারা যে চুক্তি লঙ্ঘন করে বেতন-ভাতা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছেন, সে বিষয়ে দূতাবাসের নীরবতা দুর্ভাগ্যজনক। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ শ্রমিকদের সৌদি আইন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি প্রবাসী শ্রমিকদের সদুপদেশ না দিয়ে সৌদি সরকারকে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথাটা জোরালোভাবে জানাবেন আশা করি। এ বিষয়ে কূটনৈতিক প্রয়াস আরও জোরদার করতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সৌদি আরব থেকে নিগৃহীত হয়ে আসা নারী শ্রমিকদের সংখ্যা নগণ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর এই মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। একজন নারী শ্রমিকও সেখানে নিগৃহীত হলে সেটি দেশের জন্য অপমানজনক। যেখানে নিগ্রহের কারণে ফিলিপাইনসহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সৌদিতে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশি নারী শ্রমিক পাঠানোর আগে আরও চিন্তাভাবনা করা উচিত ছিল। সৌদি আরব মানবাধিকারের অনেক কিছুই মানে না। এর অর্থ এই নয় যে নারী শ্রমিক গেলেই তাঁদের নিগ্রহের শিকার হতে হবে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি। সে ক্ষেত্রে সরকারকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে সেখানে গিয়ে কেউ নিগৃহীত হবেন না। জীবিকার জন্য নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে নির্যাতিত হয়ে কিংবা লাশ হয়ে তাঁরা দেশে ফিরে আসবেন। সরকার যখন সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে, তখন তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও তাদের দেখতে হবে।