সুন্দরবন উপকূলে আশ্রয়কেন্দ্র

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সুন্দরবন ও এর আশপাশের এলাকার জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন বাঁচানোর জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র না থাকার খবরটি আমাদের বিস্মিত করেছে। একে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।

সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের অধীন চারটি রেঞ্জ ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবী ও জেলেরা আসেন। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোম মৌসুম এবং জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গোলপাতা আহরণ মৌসুম। প্রতিবছর, বিশেষ করে ইলিশ ও শুঁটকি মৌসুমে দুবলারচরসহ সুন্দরবনের আটটি চরে সমবেত হন প্রায় ২০ হাজার জেলে। এ সময় এসব চরে অস্থায়ী ভিত্তিতে জেলেপল্লি গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়সহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে এসব বনজীবী ও জেলের আশ্রয় নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র এখানে নেই।

১৯৯৬ সালে সুন্দরবনের কাছের পাঁচটি চরে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে তিনটিই জরাজীর্ণ হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মাত্র পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। এ কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বহু মানুষ চরম বিপাকে পড়ে। কিন্তু এসব দিকে বন মন্ত্রণালয় ও বন বিভাগের কোনো মাথাব্যথা নেই। এলাকার জেলে, মাছ ব্যবসায়ী ও বনজীবীদের মতে, সুন্দরবনের আশপাশের এলাকায় অন্তত ১৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনীয়সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কোনো উদ্যোগ বন মন্ত্রণালয় নেয়নি। জরাজীর্ণ হয়ে পড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সংস্কারেরও কোনো উদ্যোগ নেই। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে এই উদাসীনতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইলিশ ও শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের কাছ থেকে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে সরকার, অথচ তাদের জীবনের কোনো ভাবনা সরকারের নেই। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বন মন্ত্রণালয়কে বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব চিঠিতে যে কোনো কাজ হয়নি, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

আমরা জানি, সুন্দরবন সংরক্ষিত বনভূমি ও ইউনেসকো কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। তাই চাইলেই বনের যেখানে সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা যাবে না। এ জন্য চাই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আমরা চাই বন মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের উপকূল এলাকায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। যেসব জেলে ও বনজীবী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছেন, তঁাদের জীবন রক্ষার দিকে নজর দেওয়াটা উচিত নয় কি?