ঝুঁকির সমাজ ও জুয়ার সংস্কৃতি

প্রভাবশালী লোকদের ছত্রচ্ছায়ায় বিভিন্ন ক্লাবে গড়ে ওঠা ক্যাসিনোগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছে
প্রভাবশালী লোকদের ছত্রচ্ছায়ায় বিভিন্ন ক্লাবে গড়ে ওঠা ক্যাসিনোগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছে
>

সাম্প্রতিক ক্যাসিনো-কাণ্ড দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এ দেশে আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে, তা প্রায় অজানা ছিল। বিশ্বের অনেক দেশে ক্যাসিনো বৈধ, কিন্তু বাংলাদেশে পুরোপুরি অবৈধ। সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু প্রভাবশালী লোকের ছত্রচ্ছায়ায় বিভিন্ন ক্লাবে গড়ে ওঠা ক্যাসিনোগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছে। আধুনিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অন্যতম অনুষঙ্গ ক্যাসিনো। আবার মানবসভ্যতার বিকাশের শুরু থেকেই মানুষের মধ্যে জুয়া বা ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা লক্ষণীয়। ‘জুয়া, আধুনিক পুঁজিবাদ ও রাষ্ট্র: ঝুঁকিপূর্ণ সমাজমুখী যাত্রা’ শিরোনামের একটি লেখার তিন পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হচ্ছে আজ। লিখেছেন কথাসাহিত্যিক ও যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক আফসানা বেগম

বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে জুয়ার আয়োজনের সঙ্গে আধুনিক পুঁজিবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সমাজ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় জুয়ার আসর যুগোপযোগী পণ্যে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাদী সমাজে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদনের মাধ্যমে ‘সম্ভাবনা’কে পুঁজি করে বিচিত্র ব্যবসা ফাঁদা হয়। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী রজার কাইলোইসের মতে, দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে প্রতিযোগিতা তথা চ্যালেঞ্জকে যেকোনো ধরনের সুযোগের সম্ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন রকম খেলা বা ব্যবসা সৃষ্টি করা সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, কাইলোইস যে ধরনের সমাজের উল্লেখ করেছেন, সেখানে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সাধারণ মানুষ— প্রত্যেকে বিচিত্র প্রতিযোগিতার মধ্যে নিমগ্ন থাকে; সে কারণে সামগ্রিকভাবে প্রত্যেক অস্তিত্ব প্রতিযোগিতার একেকটি উপাত্ত হয়ে ওঠে। তখন ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক তথা রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নির্ভর করে সুযোগের সম্ভাবনার ওপর। এই প্রক্রিয়ায় সমাজ দ্রুত একটি ঝুঁকিপূর্ণ সমাজে পরিণত হয়। ঝুঁকিপূর্ণ সমাজে প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকি নেওয়া স্বাভাবিক, আর সে কারণেই ঝুঁকির চাহিদা তৈরি হওয়াও যুক্তিসংগত। জুয়া খেলা ঠিক তেমন এক পণ্য, যা সহজে এই চাহিদা মেটাতে পারে। এর মধ্য দিয়ে মানুষ সহজাত ব্যক্তিগত ঝুঁকি গ্রহণের চর্চা এবং সমাজে টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

জুয়ার ইতিহাস এবং সমাজ পরিবর্তনের ধাপে ক্যাসিনো ব্যবসাকে গ্রহণ বা বর্জনের যুক্তি বিশ্লেষণ-সংক্রান্ত মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিপ্রেক্ষিতটি আরেকবার মনে করা যাক।

চলমান ঘটনাবলি
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ‘আকস্মিকভাবে’ জানা যায় যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর নিয়মিতভাবে চলে আসছিল। প্রাথমিক অভিযানে ঢাকার গুলিস্তান, ফকিরাপুল ও বনানীর চারটি ক্যাসিনো র‍্যাব সিলগালা করে দেয়। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কিছু নেতা দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। দেখা গেছে, মতিঝিল থানার মাত্র ৫০ গজ দূরত্বে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ক্যাসিনোর কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চলছিল। ক্যাসিনো ছাড়াও টি-২১ ও পি-২৪ নামের দুটি চালু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের সন্ধান পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে জুয়াড়িরা গেম বাছাই করে বেট করতে পারতেন।

মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ ও দিলকুশা স্পোর্টস ক্লাবগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে স্মৃতিবিজড়িত নাম। একসময় যে ক্লাবগুলো চমৎকার খেলা উপহার দিয়ে মাঠে দর্শক মাতাত, সেই ক্লাবগুলো এখন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনে মনোনিবেশ করেছে।

পুলিশ শুরুতে দাবি করেছিল ক্যাসিনোর অবস্থান ও কার্যকলাপ সম্পর্কে তাদের কিছু জানা ছিল না। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে যে পুলিশের প্রহরায় নিরাপদভাবে আন্তর্জাতিক মানের ক্যাসিনোগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। বিনিময়ে পুলিশ প্রতিটি ক্লাব তথা ক্যাসিনো থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা পেত বলে অভিযোগ আছে। ব্যবসায় সাহায্যকারী নেপালি নাগরিকেরাও পুলিশের সহায়তায় নিজের দেশে চলে যান বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট যুবলীগ নেতারা গ্রেপ্তার হলে তাঁদের অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে একেবারে শূন্য থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রের কাছাকাছি আসতে পেরে তাঁরা বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন। তাঁদের উত্থানের পথে কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

২০০৯ সাল থেকে ক্যাসিনোয় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক সরঞ্জাম কখনো অন্য দ্রব্যের সঙ্গে লুকিয়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ আমদানির নিয়ম মেনে ‘খেলনাসামগ্রী’ হিসেবে দেশে আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে যেহেতু কারও কোনো ধারণা ছিল না, তাই এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও আইন ছিল না। ক্যাসিনো ব্যবসার উপস্থিতিকে যেহেতু অস্বীকার বা উপেক্ষা করা হয়েছে, তাই প্রয়োজনীয় আইন বা নীতিমালার ব্যাপারেও ভাবা হয়নি।

দেশে বা রাজধানীতে কতসংখ্যক ক্যাসিনো ছিল বা আছে, তা জানা যায়নি। তবে র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেছেন যে সব ক্যাসিনো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অভিযান চলাকালে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘যেখানে অবৈধ ক্যাসিনো, সেখানেই অভিযান।’ যদিও দেশে কোনো বৈধ ক্যাসিনোর অস্তিত্ব নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ‘ক্যাসিনো নীতিমালার মধ্যে এনে চালু করা হবে, নাকি একেবারেই বন্ধ করা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’ তাঁর কথার প্রতিধ্বনি হয়েছে পর্যটনসচিবের মুখে, যিনি বলেছেন, ‘পর্যটন বিকাশের জন্য এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনে ক্যাসিনো ও নাইট ক্লাব থাকবে।’ তিনি আরও বলেছেন, অবৈধ ক্যাসিনো বন্ধ করে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বৈধভাবে ক্যাসিনো চালানো যায়।

অপরাধবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেছেন, দেশ পুঁজিবাদী দর্শনের মধ্যে
প্রবেশ করেছে, বিশ্বায়নের উপযুক্ত সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার উন্নয়নের মডেলের মধ্যে যদি যেতে হয়, তবে এ ব্যবসাগুলো বন্ধ না করে একে কত নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালানো যায়, তা দেখা উচিত। তাঁর বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী সেটা পারবেন।

এর আগের গল্প
ঢাকায় ক্যাসিনোর অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি যেহেতু অনেক ঢাকাবাসী, বেশ কিছু গণমাধ্যম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটা ‘প্রকাশ্য গোপন’ ব্যাপার ছিল, তাই জীবনানন্দীয় কায়দায় প্রশ্ন উঠেছে, ‘এত দিন কোথায় ছিলেন?’

প্রথমে ২০১৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত, ‘খেলার ক্লাবে জুয়া চালাতে ৫৬ রিট’ শিরোনামের প্রতিবেদনটির কথা উল্লেখ করতে চাই। প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, ‘রাজধানীর স্পোর্টিং ক্লাবগুলোতে রাত হলেই বসে জুয়ার আড্ডা। এটি টিকিয়ে রাখতে গত সাড়ে চার বছরে হাইকোর্টে ৫৬টি রিট করেছেন জুয়াড়িরা। শুধু রাজধানীই নয়, বিভিন্ন জেলায়ও অবাধে চলছে জুয়া। পুলিশ ও র‍্যাব সূত্র জানায়, এ বছরের সাত মাসেই রিট হয়েছে ৩৪টি। এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া আবেদনকারীর “আইনানুগ” ব্যবসায় বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য মামলার বিবাদীদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।’ বিস্তারিত প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘বছরের পর বছর ধরে ক্লাবগুলোতে নিপুণ, চড়চড়ি, ডায়েস, ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, রেমিসহ বিভিন্ন রকমের তাস খেলা বা কথিত “ইনডোর গেমস”-এর নামে জুয়া খেলা চলছে।’ প্রতিবেদনটিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জুয়ার আড্ডা তথা ক্যাসিনো কার্যক্রম চালানো ক্লাবগুলোর নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ করা হয় যে ঢাকায় জুয়ার আড্ডার কেন্দ্র মূলত মতিঝিল ও ফকিরাপুল, যার নিয়ন্ত্রণে আছেন যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা।

২০১৭ সালের ৭ জুলাই বণিক বার্তা ‘অবৈধ তবু বড় হচ্ছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন ছাপে। প্রতিবেদনে স্পোর্টস ক্লাবগুলো ক্যাসিনোতে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে স্পষ্টভাবে তখনকার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দপ্তরকে ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানানো হয়।

২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ ‘জুয়ায় ভাসছে রাতের ঢাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ক্লাব ও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে রাত গভীর হলেই বসছে কোটি কোটি টাকার জুয়ার আসর। প্রভাবশালী মহলের শেল্টারে রাজধানীতেই অন্তত দেড় শ জুয়ার স্পট চলছে। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা এসব জুয়ার আসর খোলা থাকে, পাহারায় থাকে নিজস্ব অস্ত্রধারী টিম। এদের আইনি ঝামেলা থেকে সুরক্ষা দেন খোদ পুলিশ প্রশাসনেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা। একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি স্পটে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়। সে হিসাবে রাজধানীর জুয়ার স্পটগুলোতে দৈনিক ৩০০ কোটি টাকা উড়ছে।’ রিপোর্টটিতে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার বাইরেও রূপনগর ও উত্তরায় রমরমা ক্যাসিনো আছে বলে উল্লেখ আছে।

এই প্রতিবেদনগুলো এটাই প্রমাণ করে যে ক্যাসিনোর উপস্থিতির খবর সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্রমাগত উপেক্ষা করছিলেন। উপরন্তু আইনের ফাঁক গলে রিট আবেদনের মাধ্যমে আদালত থেকে ব্যবসা চালানোর অনুমতি নিয়ে তাঁরা দিনের পর দিন স্পোর্টস ক্লাবের নামে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। তাই এ রকম আকস্মিক অভিযান ছাড়া ব্যবসাগুলো সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়তো অসম্ভব হতো। তবে দেশে সঠিক সময়ে বিচারের সংস্কৃতি ও আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা ও সততার চর্চা থাকলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। এই পরিস্থিতির পরে জুয়ার স্বরূপ, সমাজে বৈধ কিংবা অবৈধ ক্যাসিনোর উপস্থিতি ও তার বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

জুয়ায় ঝুঁকির ব্যবহার
জুয়ার কেন্দ্রে আছে ঝুঁকি। প্রশ্ন হলো, ঝুঁকি নেওয়ার সংস্কৃতিকে কেমন করে পণ্য প্রস্তুত ও বিপণনের মাধ্যমে সমাজে বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়া যায়? প্রশ্নটি আরও নির্দিষ্টভাবে করলে, আধুনিক পুঁজিবাদ, রাষ্ট্র এবং মানুষের ঝুঁকি নেওয়ার সহজাত প্রবৃত্তিকে একযোগে কাজে লাগিয়ে কী করে পৃথিবীময় ঝুঁকিকেন্দ্রিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠা করা যায়? বাস্তব এবং সত্য এটাই যে ঘরের কোণে বসে করা সূচিকর্মের জায়গা যেমন নিয়েছে পোশাকশিল্প বা এমব্রয়ডারি মেশিন, বাড়িতে বাড়িতে প্রতি বেলা কষিয়ে রান্নার জায়গায় যেমন এসেছে শত শত খাবারের দোকান আর দ্রুত তৈরি করা খাবার, সেই একই ধারাকে অনুসরণ করে দ্রুতগামী পুঁজিবাদের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য রাতারাতি লাভবান হতে ইচ্ছুক গ্রাহকের কাছে আসে জুয়া। ঝুঁকি মূলত খেলায় অংশগ্রহণের আগ্রহ জাগিয়ে তোলে, ব্যক্তিগত ভোগ বা ক্ষতির বিষয়টি সেখানে ধর্তব্য নয়। সমাজে লাভবান হওয়ার জন্য ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়টি যখন মুখ্য হয়ে ওঠে, তখন শ্রমের বিনিময়ে ধীরগতিতে আয় বাড়ানোর দীর্ঘদিনের সংস্কৃতিকে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। আমেরিকান লেখক ও সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক গারডা রেইথের মতে, ঝুঁকির প্রবৃত্তি তথা ঝুঁকির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ সমাজে সেদ্ধ হতে হতে জুয়ার ব্যাপক আয়োজন একসময় স্বাভাবিক বলে মনে হয়, যা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসনের ধার ধারে না। তখন ব্যবসার আয়োজন আর অংশগ্রহণ 

হয় মূলত অর্থের জন্য এবং কেবলই অর্থ উপার্জনের নিমিত্তে।

সমাজ ও আইনে অনুমোদন পাওয়া বৈধ কিংবা অবৈধ ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে পুঁজিবাদী সমাজ ধীরে ধীরে ফুলে-ফেঁপে ওঠে। শিল্পের প্রসারের প্রাথমিক ও মাঝামাঝি সময়টিতে নানা রকমের উপাদানে শিল্পের প্রতিষ্ঠাই ছিল মূল লক্ষ্য। তখন থেকেই অর্থবিত্তে লাভবান এবং সম্পদশালী হওয়াকে সামাজিক অগ্রসরতা বলে গণ্য করা হতো। একই প্রক্রিয়ায় উনিশ শতকের শেষের দিক থেকে ব্যক্তিগত সম্পদ এবং ভোগ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। তারপর থেকে পুঁজিবাদী সমাজের কেন্দ্রে রয়েছে আয় ও ভোগ বাড়ানোর ক্রমাগত যাত্রা, যাকে একযোগে বলা হয় ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’। অর্থনৈতিক উন্নয়নই সমাজে আয় ও ভোগের চাহিদাকে সরলরূপে প্রতিষ্ঠা করার মূল হাতিয়ার। প্রাথমিক অবস্থায় পুঁজিবাদ মানুষের শ্রম-উপার্জিত অর্থকে মূল্য দিত। কিন্তু পশ্চিমে আধুনিক পুঁজিবাদের প্রভাব কেবল ভোগের প্রতিই মানুষকে মনোযোগী হতে শেখায়।

ইতিহাসে জুয়া
যেদিন গুহামানব শিকারের আশায় গুহার বাইরে বেরিয়েছিল, সে নিশ্চয় ধরে নিয়েছিল এবং ঝুঁকি নিয়েছিল যে আজ হয় খাদ্য পাবে অথবা নিজেই কারও খাদ্যে পরিণত হবে। এভাবে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নেওয়া বা বাজি ধরা তার সহজাত প্রবৃত্তিতে পরিণত হয়েছে। হয়তো প্রস্তর যুগে কিংবা তারও আগে এক টুকরো হাড় বা পাথর কেটে বা খোদাই করে দরকারি কিছু বানাতে গিয়ে কেউ বানিয়ে ফেলেছিল ছক্কার মতো কোনো জিনিস। অসাবধানে তা হাত থেকে মাটিতে পড়ে গড়িয়ে গিয়েছিল। এসব কল্পনা বটে, তবে কেবলই কি কল্পনা? জুয়া এতই পুরোনো যে বলতে গেলে ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন।

তবে সব রকমের জুয়ায় মানুষ খেলা বা আনন্দের মজা পায় না। জীবন-জুয়া একটি অবধারিত কার্যক্রম। কিন্তু জুয়ায় জেতার সহজাত আগ্রহ কার নেই? হোক না সে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী। মৌমাছি থেকে শুরু করে বাঘ কি সিংহ—কিছু পাওয়ার আশায় ঝুঁকি সে নেবেই। ২০০৫ সালে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যাকাকে জাতের বানর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিকারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। প্রতিদিন একই পরিমাণ নিরাপদ খাবার সংগ্রহের ব্যাপারে সে সহজেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। মানুষের ক্ষেত্রেও তা–ই ‘ধরিব মত্স্য খাইব সুখে’ জাতীয় জীবনযাপনের বদলে ঝুঁকি নিয়ে জ্যাকপট ধাওয়া করা বিচিত্র কিছু নয়।

আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী আলফ্রেড ক্রোয়েবার বলেছেন, পৃথিবীতে কারা জুয়া খেলেছে, তা গোনার চেয়ে কারা কখনো খেলেনি, তাদের গুনে ফেলা সহজ। তাঁর মতে, ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার বেশির ভাগ আদিবাসীর মধ্যে জুয়ার সংস্কৃতি আছে, যদিও বৌদ্ধ ও ইসলামধর্ম জুয়াকে অনুমতি দেয় না। ক্রোয়েবার এবং আরও কয়েকজন নৃবিজ্ঞানীর গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে জুয়া জীবনধারণপদ্ধতি, ধনী হতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কিংবা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। যে সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রচলন নেই, তারাও নিয়মিত জুয়া খেলেছে। সমুদ্রের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলোতে জুয়া হিসেবে অবশ্য একই খেলার প্রসার ঘটেনি কিন্তু খেলার মূল ধারাটি এক; যেখানে খেলার আয়োজন হয়েছে, সেখানকার আচার-ব্যবহার এবং সংস্কৃতি খেলার নিয়মকানুন ও পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে।

‘জোড় না বেজোড়’, ‘হ্যাঁ কিংবা না’—এসবই হয়তো সবচেয়ে পুরোনো ধরনের জুয়া খেলা। ইতিহাসের বিভিন্ন বর্ণনানুযায়ী প্রস্তর যুগে যেখানে এ রকম জুয়ার আবির্ভাব হয়েছিল, সেই আফ্রিকায় এই আধুনিক যুগেও একই জুয়ার প্রচলন আছে। প্রাচীন ছক্কা দেখতে হাড়ের একটা টুকরোর মতো ছিল বটে। বছরের পর বছর পরিবর্তনের মাধ্যমে আজকের আকৃতি এসেছে। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মাঝখানে আজকের যে ইরাক, সেখানে হাড় দিয়ে বানানো পাঁচ হাজার বছর আগের অবতল ছক্কা পাওয়া গেছে। মেসোপটেমিয়ার সব ইতিহাসেই প্রত্নতত্ত্ববিদেরা হাড় দিয়ে বানানো ছক্কার উল্লেখ করেন। মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় দুই দিক অবতল আর দুই দিক উত্তল ছক্কা পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যায়, নিয়মিত জুয়া খেলা হতো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল গ্রিস ও রোমে। অনেক পরে, দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে এশিয়া ও ইউরোপে জুয়া খেলার প্রচলন হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ছক্কার জায়গায় তাসের ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভ্রমণরত মানুষেরা নির্দিষ্ট জায়গায় নানা রকমের জুয়ার একত্র সমাবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ক্যাসিনো তৈরি করে। ষোড়শ শতাব্দীতে জুয়ার ধারণাকে কাজে লাগিয়ে ইতালিতে লটারির প্রচলন হয়। এভাবে ভেনিসে প্রথম থিওরি অব প্রবাবিলিটির বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে জুয়ার জগতে অভাবিত পরিবর্তন আসে। কাছাকাছি সময়ে ইউরোপে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাংকিং শুরু হয়। ধারণা করা হয়, বাণিজ্যিকভাবে জুয়ার প্রচলন বাণিজ্যিক ব্যাংকিংকে উদ্বুদ্ধ করে।

রোমে অগাস্টাসের সময়ে সামাজিক উৎসবে জুয়ার আয়োজন হতো। বাণিজ্যিকভাবে জুয়ার জন্য ক্যাসিনো নির্মাণ, অর্থাৎ রুলেট, তাস, স্পিন আর ছক্কার ব্যবহার শুরু হয় আরও পরে। ১৬৫০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে ইউরোপে বাণিজ্য তথা পুঁজিবাদের প্রচলন হলে বাণিজ্যিক ক্যাসিনোর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। লাইসেন্সধারী বাণিজ্যিক ক্যাসিনো প্রথম শুরু হয় ভেনিসে। প্রধানত হাম্মামখানাগুলোতে ক্যাসিনো নির্মাণ করা হয়। এদিকে দপ্তদশ শতাব্দীতে উপনিবেশ শাসনের মাধ্যমে অখণ্ড ভারতে জুয়া, ঘোড়দৌড় আর ক্যাসিনোর উদ্ভব ঘটে। নিজের অঞ্চল থেকে দূরে থাকা ইংরেজরা নিজেদের বিনোদনের জন্য তাস খেলা, ব্যক্তিগত স্থানে ক্যাসিনো এবং প্রকাশ্যে ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করে। ষোড়শ বা দপ্তদশ শতাব্দীর বেশির ভাগ সময়ে মোগলরা ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মদ বা জুয়ার নিষেধাজ্ঞা পালনে শিথিলতার পক্ষপাতী ছিল। তবে ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত জুয়া, মদ ও সংগীতের ওপর আওরঙ্গজেবের আরোপ করা কঠোর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকে। পরে ইংরেজরা ধীরেসুস্থে ক্যাসিনো ও ঘোড়দৌড়ের প্রসার ঘটাতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জুয়ার কেন্দ্র হয়ে ওঠে কলকাতা। সরকারি কর্মচারী ও সেনাবাহিনীর লোকেরাই খেলায় অংশগ্রহণের উপযুক্ত বিবেচিত হতেন। কলকাতায় এমন বিশেষ ধরনের ঘোড়দৌড়ের প্রচলন হয়েছিল যে আজও সারা পৃথিবীতে তার নামডাক আছে। একই সময়ে ঢাকার রেসকোর্সেও প্রতি রোববার ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হতো।

শেষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বহু ভারতীয় নাগরিক ঘোড়দৌড়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। কারণ, হিন্দু বা ইসলাম ধর্মের নিয়মের সঙ্গে তা ছিল অসংগতিপূর্ণ। মহাত্মা গান্ধী উল্লেখ করেছিলেন যে জুয়ার অভ্যাস মদের নেশার চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু পরে একসময় বলেছিলেন যে আইন করে জুয়া ঠেকানো সম্ভব নয়, যতক্ষণ না জুয়ায় নেশাগ্রস্ত মানুষ নিজের মনোবল দিয়ে একে ঠেকায়। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, তারা যেন উপলব্ধি করে জুয়া প্লেগের চেয়েও ভয়াবহ ঘাতক, ভূমিকম্পের চেয়েও ভয়ানক ধ্বংসকারী। আর জুয়া এমন জিনিস যা মানুষকে ‘মর্মে মর্মে মারে।’

আমেরিকায় জুয়ার প্রচলন হয় মূলত ১৮১০ সালের পরে। তবে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত নেভাদা (লাস ভেগাস) ছাড়া আর কোথাও ক্যাসিনো ছিল না। ১৯৯০ সালে সরকার যখন ক্যাসিনোকে বৈধ ঘোষণা করে তা থেকে অর্থ উপার্জনের নিয়ম চালু করে, তখন থেকেই ক্যাসিনোর ব্যবসা ব্যাপক হারে শুরু হয়। নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ ডেভিড জি শোয়ার্টজ তাঁর রোল অব বোনস: দ্য হিস্ট্রি অব গ্যাম্বলিং (২০১৩) বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে জুয়া বা ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা থেকে জুয়াকে আইন এবং সমাজের চোখে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এই বৈধতাই ধীরে ধীরে সমাজে জুয়ার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে। তবে সত্যিকার অর্থে পৃথিবীতে ক্যাসিনোর চেয়ে অনেক আগে বৈধতা পেয়েছিল ঘোড়দৌড়। তাই বলতে গেলে ঘোড়দৌড় আর ক্যাসিনো, দুইয়ে মিলে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংস্কৃতি আর কৃষ্টি তৈরি করেছে।

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ক্যাসিনো আছে আমেরিকায়, প্রধানত লাস ভেগাসে। ক্যাসিনো থেকে সরকার ও ব্যবসায়ী, উভয়েরই আয় প্রচুর। তবে ২০০৭ সাল থেকে চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাও ক্যাসিনো খাতে আয়ের দিক দিয়ে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে ম্যাকাও পৃথিবীর ‘জুয়ার রাজধানী’ বলে পরিচিত। ১৮৫০ সালে পর্তুগিজ উপনিবেশ সরকার জুয়াকে সেখানে বৈধ ঘোষণা করে। তখন থেকে কেবল ক্যাসিনো নয়, ঘোড়দৌড়, গ্রেহাউন্ড কুকুরের দৌড়, নানা রকমের স্পোর্টস বেটিংসহ যেকোনো রকমের জুয়াই সেখানে লাভজনক ও জনপ্রিয় ব্যবসা। এই অঞ্চলের ক্যাসিনো ব্যবসা মেইনল্যান্ড চীনের ব্যবসায়ীদের অধীনে আছে।

ক্যাসিনো শিল্প নাকি বিজ্ঞান?
ক্যাসিনো ক্রমেই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান সংস্কৃতির ভেতরে নতুন এক সংস্কৃতি হিসেবে হাজির হয়েছে। এবং এটা মূলত এক অভিজাত সংস্কৃতি। নিয়ন লাইটে ঝলমলে পরিবেশ, খাবার ও পানীয়র প্রাচুর্য, সুসজ্জিত নর-নারী, প্রয়োজনে আলো-আঁধারি—এই হয়ে উঠেছে চিরাচরিত ক্যাসিনোর চেহারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আদি অকৃত্রিম ক্যাসিনোর তেমন বদলেছে বলে মনে হয় না। যে রুলেট হুইল বা ব্ল্যাকজ্যাক আজকের দিনে জেমস বন্ডের চলচ্চিত্রে দেখতে পাওয়া যায়, তা ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত ইউরোপীয় লেখক ল্যান ফ্লেমিংয়ের ক্যাসিনো রয়্যাল উপন্যাসে বর্ণনা করা রুলেট হুইল আর ব্ল্যাকজ্যাকের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। ক্যাসিনো সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত আচার-আচরণ সবচেয়ে বেশি লুফে নিয়েছে শিল্প-সংস্কৃতির জগৎ, বিশেষ করে সাহিত্য ও চলচ্চিত্র।

চলচ্চিত্র বা সাহিত্যে ক্যাসিনো এবং তার সংস্কৃতিকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়, যেন তা কোনো বিজ্ঞান বা গণিত নয়, তা আসলে শিল্প। ধরা যাক, ১৯৭৩ সালের দ্য স্টিং সিনেমার দৃশ্যে রবার্ট রেডফোর্ড আর পল নিউম্যানকে দেখলে মনে হতে পারে যে পোকার গেমে জিততে হলে বিজ্ঞান বা গণিতের ধারণা সামান্যই লাগে, যা লাগে তা হলো অভিনয়ের দক্ষতা। ছবিতে নিউম্যানের চরিত্রটি এলোমেলো, বোকাসোকা আর মাতালও। তবে তাঁর ভূমিকাই খেলায় জেতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতপক্ষে, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যখন আবেগ বা অনুভূতি লুকানোর জন্য বিশেষ ভঙ্গি করে থাকি, যাকে বলে পোকার ফেস, তা করা গণিতকে কাজে লাগিয়ে খেলায় জেতার চেয়ে কঠিন। যে পারে সে পারে। যেমন লেডি গাগা পোকার গেমের টেবিলে বসে গাইতে থাকেন, ‘নো, হি কান্ট রিড মাই পোকার ফেস’। সেভাবেই দর্শক যখন নিউম্যানের মুখভঙ্গির সঙ্গে খেলায় জেতার সম্পর্ক খুঁজে পান, তখনই তাঁর জিততে পারা হয়ে ওঠে শিল্প।

আফসানা বেগম: কথাসাহিত্যিক ও যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক

আগামীকাল: পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনুষঙ্গ ক্যাসিনো