ক্যাসিনো-কাণ্ড ও ক্রীড়াঙ্গন

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইয়ংমেনস ফকিরেরপুল ক্লাব দিয়ে শুরু হয়েছিল আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। ওই দিনই অভিযান চলে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও বনানীর একটি ক্লাবে। ২২ সেপ্টেম্বর আরামবাগ, দিলকুশা, ভিক্টোরিয়া, মোহামেডান এবং তার আগে ২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্লাবে ক্যাসিনো বন্ধে হানা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাৎক্ষণিকভাবে মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় র‍্যাব সিলগালা করে দেয় ইয়ংমেনস, ওয়ান্ডারার্স ও মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব। এরপর আরামবাগ, দিলকুশা, ভিক্টোরিয়া, মোহামেডানে তালা মারে মতিঝিল থানা-পুলিশ। সাময়িকভাবে সেটার হয়তো দরকারও ছিল। কিন্তু দুই মাস পেরোলেও বন্ধ ক্লাবগুলো খুলে দেওয়া হয়নি। এতে খেলার স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ক্যাসিনো-কাণ্ডের জেরে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। কেননা, আগামী মাসেই ফেডারেশন কাপ দিয়ে ঢাকায় শুরু হবে ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসুম। সেটিরই অংশ হিসেবে ২০ নভেম্বর ক্লাবগুলোর দলগঠন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন আবাসিক ক্যাম্প করতে হবে। কিন্তু ক্লাব তালাবদ্ধ থাকায় সেখানে খেলোয়াড়দের রাখতে পারছে না ক্লাবটি। অন্যত্র ক্যাম্প করতে গেলে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন, যার ব্যয় বহনে আরামবাগ এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ অপারগ।

সমস্যা সমাধানে ক্লাবটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ক্লাব খুলে দেওয়ার আবেদন করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেউ ক্লাবে যেতে পারছি না তালাবদ্ধ থাকায়। কী করব আর, রাস্তায় বসে কোনোরকমে ফুটবল টিম গঠন করেছি। মতিঝিল থানায় কয়েকবার গিয়েছি। পুলিশ বলেছে, ওপরের নির্দেশ আসেনি। এলে খুলে দেবে।’ ক্লাবটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দ্বারস্থ হন, যাতে ফুটবল ফেডারেশন বিষয়টির গুরুত্ব মেনে ক্লাব খুলে দেওয়ার সুপারিশ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু ফুটবল ফেডারেশনও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা না বলে এ ধরনের সুপারিশ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়।

তাহলে প্রশ্ন আসে, ক্লাবে খেলোয়াড়েরা আসা-যাওয়া করবেন কীভাবে? খেলার প্রস্তুতিই বা তাঁরা কীভাবে নেবেন? সংগঠকেরা বাইরে বাইরে ঘুরবেন কতকাল? ফুটবল মৌসুম শুরুর ঘণ্টা যখন বাজছে, তখন ক্লাবগুলোতে খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের বিচরণও বাড়বে স্বাভাবিক। অথচ এমন সময় ক্লাবের ফটকে তালা ঝোলা মানে খেলোয়াড় ও সংগঠকদের জন্য চরম হতাশারই।

অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত মতিঝিল ক্লাবপাড়ার ছয় ক্লাবের মধ্যে শুধু মোহামেডানই খোলা। ঐতিহ্য হারিয়ে ধুঁকতে থাকা ক্লাবটির ভেতরে যে অডিটোরিয়ামে ক্যাসিনোর জম্পেশ আসর বসত, সেটিতে অবশ্য তালা ঝুলছে। বাকি অংশটা খোলা। এর ফলে মোহামেডান খেলার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে। গুলিস্তানে ওসমানী উদ্যানের পাশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রেও তালা। তবে ক্লাবটির ফুটবল দল গঠনে সমস্যা হয়নি। কারণ, দল গঠনের কাজ চলে অন্যত্র। প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পর থেকেই সেখানে জুয়া হয়ে আসছিল। খেলোয়াড়দের রাখা হয় ভাড়া বাড়িতে। একসময় ক্লাবটির প্রশাসনিক কাজ চলত ইস্কাটনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে। আপাতত এটি সরাসরি দেখভাল করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে আরামবাগের মতো ইয়ংমেনস, ওয়ান্ডারার্স, দিলকুশা, ভিক্টোরিয়ার সমস্যা হচ্ছে। এই ক্লাবগুলো প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে না খেললেও নিচের দিকে খেলে। ক্লাবগুলোর দুই-তিনটি ক্রিকেটও খেলে।

খেলার নামে ক্লাবে জুয়া, ক্যাসিনো চলতে পারে না—এটা যেমন সত্য, তেমনি এ-ও সত্য যে, খেলাকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। ক্লাব ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারকারীদের শাস্তি হওয়া আশু জরুরি। কিন্তু তাই বলে ক্লাব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকতে পারে না। তাই আমরা বলব, বন্ধ ক্লাবগুলো অবিলম্বে খুলে দেওয়া হোক। ক্লাবে আবার ফিরে আসুক খেলার পরিবেশ। ক্লাব হয়ে উঠুক ক্রীড়া কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র।