হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা

হোলি আর্টিজান বেকারি হামলার সঙ্গে জড়িত সাত আসামির মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। আইন ও বিচারমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আমরা একমত যে—চাঞ্চল্যকর যেসব মামলা দেশের শিকড়ে ধাক্কা দেয়, তার বিচার শেষ করতে পারা একটা সন্তুষ্টির কারণ। তাঁর এই দাবিও যথার্থ যে বর্তমান সরকার সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছে যে এ রকম ঘটনার দ্রুত বিচার সম্ভব। বাংলাদেশ অবশ্য এর আগে জেএমবির দুই শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করার নজির স্থাপন করতে পেরেছিল। 

এ প্রসঙ্গে আমরা সতর্কতার সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে হোলি আর্টিজান বেকারি হত্যাকাণ্ডের পরে সংগত কারণেই বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছিল। দেশের জনগণসহ আন্তর্জাতিকভাবে অনেকের মনেই এই ভয় তৈরি হয়েছিল যে সিরিয়ায় আইএসের পতন ঘটলে তারা তাদের সন্ত্রাসের নতুন ক্ষেত্র এই অঞ্চলে সরিয়ে আনতে পারে। আর সে জন্যই তারা বাংলাদেশকে নিশানা করেছে এবং এখানে জঙ্গিবাদী ভাবধারা বিকাশের চেষ্টা শুরু করেছে। কিন্তু এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ, জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ এবং গতকাল হোলি আর্টিজান হামলার ঘটনার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ভিন্ন বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে। 

বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি থেকে কোনো দেশই মুক্ত নয়। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই একটি অব্যাহত ও চলমান প্রক্রিয়া। তবে এমন কতগুলো উপলক্ষ তৈরি হয়, যখন রাষ্ট্র তার সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। ঢাকার বিশেষ আদালতে হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার গতকালের রায় বাংলাদেশের জন্য তেমনি একটি সামর্থ্যের প্রমাণ। এই সন্ত্রাসী হামলায় আমরা যেমন ২০ জন শান্তিপ্রিয় নিরীহ দেশি-বিদেশি নাগরিককে হারিয়েছি, তেমনি এই বিয়োগান্ত আলেখ্যের মধ্যে আমরা জেনেছি এক বিনম্র বীর ফারাজ আইয়াজ হোসেনের সাহসী আত্মত্যাগের অনন্যসাধারণ গল্প। গতকালের রায় আবারও প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে থাকবে; ঘাতক চক্রের কোনো ঠাঁই বা আশ্রয়-প্রশ্রয় এই দেশে নেই। 

আমরা হোলি আর্টিজানের ঘাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বাংলাদেশ সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আন্তরিক উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফে যাঁরাই সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানাই। এই বিচার–প্রক্রিয়াকে একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। এটা স্বস্তির বিষয় যে হোলি আর্টিজানের ঘটনার পরপর দেশে নিরাপত্তাহীনতার যে বোধ তৈরি হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত তৎপরতার কারণে সেই পরিস্থিতি কাটানো গেছে। 

তবে জঙ্গিবাদের বিস্তারের যে বিপজ্জনক মাত্রা ও আশঙ্কা বাংলাদেশে আছে, সে ব্যাপারে শৈথিল্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা দেখেছি, গত কয়েক বছরে ছোট পরিসরে হলেও আইএস ভাবাদর্শের অনুসারীরা তাদের নাশকতামূলক তৎপরতার একটা পরম্পরা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। তারা কয়েক দফায় নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে নিজেদের সক্রিয়তা জানান দিয়েছে। এমনকি গতকাল রায়ের দিনে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে আসামিদের আচরণ, বিশেষ করে আইএসের টুপি পরিধানের ঘটনার একটা প্রতীকী তাৎপর্য আছে। নিঃসন্দেহে এটা উদ্বেগজনক। এই বিষয়টির একটি দ্রুত তদন্ত দরকার। কারণ, এটা অবশ্যই একটা নিরাপত্তাগত বিচ্যুতি। 

সাত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসির রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা একটি চ্যালেঞ্জ। খালাস পাওয়া আসামির বিষয়ে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আইজিপি। এটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা যে এই মামলার চূড়ান্ত পরিণতি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক কোনো বাধা তৈরি হবে না।