ঘর বরাদ্দের নামে অর্থ আত্মসাৎ

সরকার ঘরহীন মানুষের জন্য বিনা মূল্যে ঘর তৈরি করে দেওয়ার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা সর্বমহলেই প্রশংসিত হয়েছে। একইভাবে প্রশংসিত হয়েছে খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচিও। কেননা, খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা—প্রত্যেক নাগরিকের এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণে যেকোনো আধুনিক রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। যখন এসব কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পালিত হয়, তখন সাধারণ মানুষ উপকার পায়। কিন্তু যখন এসব কর্মসূচিকে ঘিরে প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে, সেবাপ্রার্থীরা বঞ্চিত হয়।

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর অসহায় দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে সরকারিভাবে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে এলাকাবাসীর জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। অন্তত এই কর্মসূচির আওতায় কিছু মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন। কিন্তু ১ ডিসেম্বর প্রথম আলোর ময়মনসিংহ সংস্করণে যে খবর ছাপা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নালিতাবাড়ীর যেসব গরিব নারী-পুরুষ এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের কাছে গিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপজেলার কেন্দুয়াপাড়া গ্রামের এক অসহায় নারীর ঘর পাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে আসগর আলী নামের ব্যক্তি তাঁর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাঁকে টাকা ফেরত দিতে বলেন। কিন্তু ওই লোক টাকা ফেরত না দিলে ইউএনও তাঁকে আটক করেন। এরপর ওই ব্যক্তি মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। আমলাতলী গ্রামের আনসার আলীর কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারক চক্র গা ঢাকা দিয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি গ্রামে বুকিং মানির নামে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা করে তুলে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

কেবল খবরে বর্ণিত ওই কয়েকজন ব্যক্তি নন, আরও অনেক গরিব নারী-পুরুষ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকে ভয়ে প্রতারকদের বিরুদ্ধে নালিশও করেননি। সরকারের একটি জনবান্ধব কর্মসূচিকে ঘিরে প্রতারক চক্র এ অপকর্ম করার দুঃসাহস কীভাবে পেল? এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরাও দায় এড়াতে পারেন না। তাঁরা বলতে পারেন, নালিশ পাওয়ার পর কয়েকজন প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, অর্থ আদায় করে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিরা কেন প্রস্তুতির কাজটি ঠিকমতো করলেন না? তাঁরা যদি তালিকাভুক্ত অসহায় নারী ও পুরুষদের কাছে আগেভাগে জানিয়ে দিতেন ঘর পাওয়ার জন্য কোনো অর্থ দিতে হবে না, তাহলে হয়তো প্রতারক চক্র এ অপকর্ম করতে পারত না। গ্রামের জনজীবন শহরের মতো বিচ্ছিন্ন নয়। প্রায় সবাই সবাইকে চেনে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কয়েকজন প্রতারকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে দিয়েছেন, এটি যথেষ্ট নয়। প্রতারকদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।