'মাটির হাসপাতাল'

বাংলাদেশের পরিবেশ বৈচিত্র্যময় আছে। একেক জায়গার পরিবেশ একেক রকম। এক অঞ্চলের মাটির সঙ্গে অন্য অঞ্চলের মাটির পার্থক্য রয়েছে। তাই মাটির পুষ্টি উপাদান সব জায়গায় এক রকম নয়। এ জন্য ফসল বোনার আগে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। মাটি পরীক্ষার এ কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেবা ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানটি ফসলি জমির মাটি পরীক্ষা করে বলে দেয় তাতে কী কী উপাদানের অভাব রয়েছে। মাটিতে কতটা সার প্রয়োগ করলে বেশি ফসল উৎপাদন হবে। আমাদের মতো কৃষিনির্ভর দেশের এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বলে কৃষকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটি মাটির হাসপাতাল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে কৃষকেরা আসেন তাঁদের জমির মাটি নিয়ে। চিরকুটে লিখে দেন নিজের নাম-পরিচয় আর কোন ফসলের চাষ করতে চান তা। সেই মোতাবেক মাটি পরীক্ষা করে এক সপ্তাহ পরে মৃত্তিকা ইনস্টিটিউট থেকে দেওয়া হয় পরামর্শ কার্ড। জমিতে কোন উপাদান কী পরিমাণে আছে এবং ফসলভেদে কী পরিমাণে সার ও অন্যান্য জিনিস প্রয়োগ করতে হবে, তা লিপিবদ্ধ থাকে ওই কার্ডে।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটি মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের ভূমি ও মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। তাই কৃষকের দিশা ও ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দেশের অনেক কৃষকই জানেন না এই প্রতিষ্ঠানের কথা। ফলে তাঁরা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক কৃষকের না জানার পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে, সারা দেশে এই ইনস্টিটিউটের কার্যালয় গড়ে তোলা হয়নি। মাত্র ২৪টি জেলায় এর কার্যালয় রয়েছে। এই ২৪টি জেলার সব কৃষকই যে এই ইনস্টিটিউট সম্পর্কে জানেন তা-ও নয়। জানলেও সরকারি এ অফিস থেকে ঠিক কী ধরনের সেবা কৃষকেরা পেতে পারেন, তা তাঁরা জানেন না। ফলে তাঁরা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আমাদের দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সব কৃষকের ফসল উৎপাদনের সঠিক জ্ঞান নেই। বেশি উৎপাদনের আশায় অনেকে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন। কীটনাশক ছিটান। ফলে নষ্ট হয় মাটির উর্বরতা শক্তি। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফসল উৎপাদন হয় না। সব কৃষকের কাছে মৃত্তিকা ইনস্টিটিউটের সেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

এ জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কার্যালয় গড়ে তুলতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের সেবা ও গবেষণা কার্যক্রমের তথ্য দেশের সব কৃষক, বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।