ঢাকা মহানগরীতে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সন্ধানে

>
ছবি : প্রথম আলো
ছবি : প্রথম আলো
গত ১৯ নভেম্বর ২০১৯, প্রথম আলো ও বুয়েট অ্যালামনাই অ্যসোসিয়েশনের আয়োজনে ‘ঢাকা মহানগরীতে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সন্ধানে’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

ঢাকা মহানগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করতে পারলে মহানগর দূষণে আক্রান্ত হবে।

কীভাবে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সুপারিশ আসবে। এখন এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন এম ফিরোজ আহমেদ।

এম ফিরোজ আহমেদ
এম ফিরোজ আহমেদ

এম ফিরোজ আহমেদ
আজকের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো কীভাবে ঢাকা মহানগরে টেকসই পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায়। ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মূলত চার স্তরবিশিষ্ট। প্রথমত, বর্জ্যের উৎস। দ্বিতীয়ত, বর্জ্যের বিন ও ট্রান্সফার স্টেশন। তৃতীয়ত, বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহন এবং সবশেষে চূড়ান্ত ডিসপোজাল।

আমরা যদি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে চাই, সে ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হয়। এক. ব্যবহৃত টেকনোলজির কার্যকারিতা। দুই. ব্যবস্থাপনায় আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও তিন. ব্যবস্থাপনার প্রতি স্তরের পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা।

পরিবেশ রক্ষায় সচেতন না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য ঢাকা রেখে যাওয়া সম্ভব হবে না। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে মোট ১২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিদিন এই শহরে ৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব ট্রান্সফার স্টেশন ও ডাস্টবিন থেকে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ করা। এরপর সেগুলো চূড়ান্ত ডিসপোজাল সাইটে নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ডিসপোজ করা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গ্রাহকদের কাছ থেকে গৃহকরের ৩ শতাংশ পরিচ্ছন্নতা কর আদায় করে। এটা পরিবহন ও ডিসপোজালের জন্য যথেষ্ট নয়। অথচ স্থানীয় সমিতিগুলো বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের তিন গুণ টাকা আদায় করে।

বর্জে্যর পরিমাণ কমানো, বর্জে্যর পুনর্ব্যবহার ও রিসাইক্লিং সম্পদ কনজারভেশনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটা টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশে অসংগঠিতভাবে বর্জে্যর পুনর্ব্যবহার ও রিসাইক্লিং হয়ে আসছে। প্রকৃতপ‌ক্ষে বাংলাদেশে মূল্যবান দ্রব্যাদি বর্জ্য থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাদা করে বিক্রি করা হয়। এক হিসাবমতে ঢাকায় ১ লাখ ২০ হাজার বর্জ্য সংগ্রহকারী বর্জ্য থেকে প্রতিজন দিনে প্রায় ১৫০ টাকা আয় করেন।

ঢাকা সিটিতে রাস্তায় যত্রতত্র ময়লা ফেলার অভ্যাস ঢাকাবাসীর। ঢাকা সিটিতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য প্রধান সড়কগুলোতে ফুটপাতের পাশে নির্দিষ্ট দূরত্বে ছয় হাজার ময়লার বিন স্থাপন করা হয়। কিন্তু স্থাপনের এক বছরের মধ্যে এই বিনগুলো হারিয়ে যেতে থাকে।

ঢাকা নগরীতে গণসচেতনতার অভাবে কোনো ভালো চেষ্টা বেশি দিন চালানো যায়নি।

সিটি করপোরেশনের রাস্তার পাশে বর্জ্যের বিন রাখা বন্ধ করতে হবে।

পথচারীদের জন্য দোকান বা প্রতিষ্ঠানের দরজার পাশে বিন রাখার নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে পথচারীসহ সবাইকে সচেতন করা জরুরি।

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস সংগ্রহসহ স্যানিটারি ল্যান্ডফিল বর্জ্য ডিসপোজালের উপযুক্ত পদ্ধতি বলে মনে হয়।

এটি তুলনামূলকভাবে সহজ ও কম ব্যয়বহুল। জৈব বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট তৈরি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। রিসাইক্লিং ও কম্পোস্টিং করলে সবটুকু বর্জ্যই ব্যবহার করা সম্ভব।

ঢাকার বর্জে্য বর্ষায় আর্দ্রতা বেশি থাকায় এই পদ্ধতি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত এনার্জি পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

ল্যন্ডফিলের জন্য জমি না পেলে ইনসিনারেশন পদ্ধতি বিবেচনায় আসতে পারে। রাস্তার পাশে ট্রান্সফার স্টেশন বন্ধ করা উচিত। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করলে দুর্গন্ধ ও বর্জ্য ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হতে পারে।

সুলতান আহমেদ
সুলতান আহমেদ

সুলতান আহমেদ
রাজউকের পূর্বাচল, উত্তরা বা ঝিলমিল প্রকল্পে ইকোলজিক্যাল সিস্টেমের কথা চিন্তা করে রেখে আমরা বর্জ্য ডাম্পিং ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। সুয়ারেজের জন্য পাইপলাইন করা হয়েছে। ট্রান্সফার স্টেশন করে বর্জ্য ট্রান্সফার ও পরিবহনের ব্যবস্থা করেছি, যেন কোনো বর্জ্য নষ্ট না হয়।

অপচনশীল দ্রব্য, যেমন পলিথিন রিসাইকেলের আওতায় আনা প্রয়োজন। তা না হলে এগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাজউক বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ব্যবসায়িকভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন, তাহলে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা খুব সহজ ও লাভজনক হবে।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে মাত্র তিন কাঠা জায়গায় বুয়েটের এক ছাত্র একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন, যেখানে ৫০ হাজার মানুষের মল ও রান্নাঘরের ময়লা একসঙ্গে করে সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে অর্গানিক তৈরি করা হয়েছে।

এটি এখন কৃষিকাজ বা ছাদবাগানে ব্যবহৃত হচ্ছে। যদি সরকার শহর ও গ্রামের মাঝামাঝি এ ধরনের কোনো স্টেশন বসায়, তাহলে অনেক বর্জ্য যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

জামালপুরে তৌফিকুর রহমান ওয়ানটাইম প্লাস্টিককে লোকাল টেকনোলজি দ্বারা উচ্চ তাপে গলিয়ে পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিন উৎপাদন করছেন।

জামালপুরে এটা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা পলিফুয়েল নামে পরিচিত। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত হয়েছে ৬৪ জেলায় এই পদ্ধতি কার্যকর
করা হবে।

আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়ালের উৎপাদনব্যবস্থা অনেকটা একমুখী। যেমন কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদনের পর আমরা উচ্ছিষ্ট ফেলে দিই। এটা রিসাইক্লিং করা গেলে লাভবান হওয়া যাবে।

তরল বর্জ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আমরা ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) কার্যকর করেছি, যা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়েছে। উৎপাদন শেষে বর্জ্যগুলো যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন।

এর ফলে হয়তো উৎপাদন খরচ সামান্য বাড়বে, কিন্তু পরিবেশ ঠিক রাখতে চাইলে ব্যবস্থা নিতেই হবে।

জামিলুর রেজা চৌধুরী
জামিলুর রেজা চৌধুরী

জামিলুর রেজা চৌধুরী
এখনো কিছু জায়গায় ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়। আমরা চাইলেই সব কংক্রিটের ঢাকনা করতে পারি। তখন সেটা বাজারে বিক্রি করার মতো কিছু করা যাবে না। সিটি করপোরেশন চাইলে বুয়েট আরও ভালো কিছু নকশা করে দিতে পারে।

এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের আরেকটা প্রকল্প ছিল বিন স্থাপন। সেই প্রকল্প সফল করা যায়নি। কারণ, বিনগুলোর কিছু চুরি হয়েছে। আর যেগুলো আছে, সেগুলো নগরবাসী ব্যবহার না করে তালা দিয়ে রেখেছে। সিটি করপোরেশন চাইলে ব্যবসায়িক এলাকায় ও দোকানের পাশে রাখার জন্য ফেরো সিমেন্টের (একধরনের হালকা সিমেন্ট) বিন ডিজাইন করে দিতে পারি।

সিটি করপোরেশন কিছু কালো ব্যাগ দিয়ে যায় রেস্টুরেন্টগুলোতে, যা পরিবেশবান্ধব (বায়োডিগ্রেডেবল) নয়। আমাদের দেশি কেমিস্ট জনাব মোবারক পাট থেকে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে না। উৎপাদন খরচ কমিয়ে এটা ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।

অননুমোদিত ডাম্পিং একটা বড় সমস্যা।ময়লা এদিক-সেদিকে ফেলা বন্ধ করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা যেতে পারে। যাঁরা যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলেন, তাঁদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা সহজ হবে।

সিঙ্গাপুরের রাস্তায় কাগজ বা ময়লা ফেললে ১০০ ডলার জরিমানা করা হয়। নিয়মিত রাস্তায় ময়লা ফেলেন, এমন অনেকে আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর সিঙ্গাপুরে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে আর রাস্তায় ময়লা ফেলেন না। তাই শাস্তির বিধান থাকলে এই সমস্যা কমে যাবে।

যেকোনো কাজেই সময় লাগে। যেহেতু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর তেমন কোনো আইন নেই, তাই সময় লাগলেও একটা শক্ত আইন তৈরি করা খুবই প্রয়োজন।

মো. শাহ্জাহান মোল্লা
মো. শাহ্জাহান মোল্লা

মো. শাহ্জাহান মোল্লা
আমাদের দেশের বড় সমস্যা হলো নদীমাতৃক নিম্নভূমি। এ জন্য বেশির ভাগ জমি পানির নিচে। অন্যান্য দেশ পাহাড়ের মাঝে একটা ব্যবস্থা করে বর্জ্য ফেলে। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ নেই।

আমিনবাজারে যে ল্যান্ডফিল আছে বা যে ডাম্পিং গ্রাউন্ড আছে, সেখানে দেখা যায়, চারদিকে পানি থইথই করছে। এভাবে পানি দূষিত হচ্ছে। আমাদের জনসংখ্যা বেশি। সে জন্য যারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে, তাদের অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে প্রকল্পের নকশা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন ও দেখাশোনা করা উচিত।

আমাদের প্রশাসনে পরিবর্তন আনা দরকার। কারণ, বারবার কর্মকর্তার বদলি হওয়ার ফলে অনেক কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তখন আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হয়।

শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলেই হবে না, পানি ও মাটিদূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের ৩২৮টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশন আছে। তার মধ্যে দেখা যায়, মাত্র ৩২টি পৌরসভার নিজস্ব জমি আছে। এ জন্য আমরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের শহরভিত্তিক কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

প্রতিনিয়ত জমির দাম বাড়ছে। তাই সরকারের সহযোগিতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রতিটি পৌরসভার জন্য জমি কেনার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫টি পৌরসভায় জমি কেনা হয়েছে।

আমাদের শুধু বর্জ্য রিইউজ ও রিসাইক্লিং করতে হবে বলা হয়। অথচ রিকভারির কথা সিস্টেমের কোথাও বলা নেই। থ্রিআর না বলে এখন ফাইভআর রিফিউজ, রিডিউস, রিইউজ, রিপারপাজ ও রিসাইকেল নিয়ে কাজ করার সময় এসেছে।

এ ছাড়া জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যেন তারা কম বর্জ্য তৈরি করে। আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে। তাই স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম
আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম

আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম
কেন বর্জ্য ডাইভারশন হচ্ছে না, বিষয়টা নিয়ে ভাবা উচিত। এ ক্ষেত্রে কোনো বেঁধে দেওয়া নিয়মকানুন নেই। ভারতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ছয়টা মূল আইন রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো আইন নেই। এ জন্য কোন ধরনের বর্জ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করব, তা আমাদের জানা নেই। এ ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে খুব ভালো হয় বলে মনে করি।

এ ছাড়া সব সিটি করপোরেশনে এক রকম সমস্যা নয়। তাই অবস্থাভেদে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা জমির স্বল্পতাকে অন্যতম কারণ ধরে থাকি। আমরা বলি আমিনবাজারের চারপাশে পানি। কিন্তু উত্তর সিটি করপোরেশন এমন কোনো স্থানে ৪০ বা ৫০ একর জমি দেখাতে পারবে না, যেখানে জমি ভরাট করা সম্ভব।

শহরগুলোর জন্য স্ট্র্যাটেজিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা রাখতে হবে। একসময় ঢাকার মাতুয়াইল ছিল আজকের আমিনবাজারের মতো। কিন্তু এখন সেখানে গেলে মনে হয় শহরের ভেতর আরেকটি শহর। তাই আমার মতামত, শুধু টাকার কথা না ভেবে কীভাবে সঠিক উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায়, সেদিকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

গত বছর ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে আয় হয়েছে ৪৬ কোটি টাকা কিন্তু খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। তাই সিটি করপোরেশনের নিজের অর্থায়নে এই কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সুতরাং, সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এখানে ভাবতে হবে কতটুকু খরচ সরকার দেবে? অন্য খাত থেকে কতটুকু আসবে ও সিটি করপোরেশন কতটুকু বহন করবে?

আমরা শুধু আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট (আর্থিক সুবিধা) ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করি। আমাদের সরকারিভাবে একটা কার্বন ক্রেডিট সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন। যেমন জাপানের নিজস্ব কার্বন ক্রেডিট সিস্টেম রয়েছে।

ঢাকায় যখন দোকানগুলোর সামনে বিন রাখা হয়, তখন ব্যবসায়ীরা বলেন দোকানের সামনে থেকে বিন সরিয়ে ফেলতে। বিন দোকানের সৌন্দর্য নষ্ট করে। এই ধারণা থেকে তাঁদের বের হতে হবে।

তাই বলতে চাই, সরকার যদি এদিকে সম্পূর্ণভাবে সহায়তা না করে, তাহলে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে যাবে।

মো. জিয়াউল হক
মো. জিয়াউল হক

মো. জিয়াউল হক
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ন্যাশনাল থ্রিআর স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। এখন ফাইভআর চলে এসেছে। এ ছাড়া আমাদের চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা ২০০৮ থাকলেও আমরা সেটা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ, হাসপাতালের মালিকদের ওই বিধিমালাতে সরকার তাদের দায়বদ্ধ করেনি।

যারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবে, শুধু তাদের দায় ও শাস্তির কথা সেখানে উল্লেখ রয়েছে। তাই মালিকদের দায়বদ্ধ করে বিধিমালাটি সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপজ্জনক বর্জ্য ও জাহাজভাঙা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ২০১১-তে একটি বিধিমালা তৈরি হয়। সেই সঙ্গে ২০১৬ সাল থেকে কম্প্রিহেনসিভ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। সব মহলের অনুমতি নিয়ে এটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও সেটা ফেরত এসেছে। আমি মনে করি, চাইলে এখনো এই আইন নিয়ে নতুন করে ভাবা যেতে পারে।

প্রতিটি বাড়িতে অর্গানিক, ইনঅর্গানিক ও গৃহস্থালির বিপজ্জনক বর্জ্যের জন্য তিন ধরনের বিন রাখা উচিত। তা ছাড়া বর্জ্য সেকেন্ডারি স্টেশনে আনার পথে দুটি বিনযুক্ত ভ্যানে আনা উচিত।

এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের, দোকানমালিকদের, পণ্য সরবরাহকারীদের দায়িত্ব আলাদা করেছি। তিন থেকে চার কোটি মোড়ক প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে। এর ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা যায়, এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, ব্র্যান্ড মালিকদের এই দায়িত্ব নেওয়া দরকার। আর এ বিষয়ে আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি ও নিচ্ছি।

ছোট শহরের জন্য আমরা কিছু আন্তর্জাতিক মেথোডলজি পাইলটিং করেছি। এ ছাড়া চারটি শহরে সিভিএল পাইলটিং করেছি। নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, রংপুর ও কুষ্টিয়ায় কম্পোস্টিং করে বায়োগ্যাস ও কার্বন তৈরি হচ্ছে।

কুষ্টিয়ায় এই পদ্ধতি ২০১২ সাল থেকে চলছে। ২০ থেকে ৩০ টন বর্জ্য কম্পোস্টিং প্যানে যাওয়া সম্ভব। এখান থেকে মিথেন সংগ্রহ করা যায়। এই বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন করার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এর বেশি হলে কাজটি কঠিন হয়ে যায়।

তাই বলা যায়, ছোট শহরগুলোর জন্য এক রকম ও বড় শহরগুলোর জন্য অন্য রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্জ্য পুড়িয়ে হয়তো কিছু এনার্জি উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু যেহেতু এটি একটি সম্পদ, তাই অন্য উপায়ে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সম্ভব।

আমরা সম্প্রতি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, গৃহায়ণমন্ত্রী ও পরিবেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য এত বেশি যে এ মুহূর্তে কোনো ব্যবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয়। তাই পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে ঢাকার দক্ষিণ সিটিকে ছোট ছোট করে ভাগ করলে এটা সম্ভব।

মো. দেলোয়ার হোসেন
মো. দেলোয়ার হোসেন

মো. দেলোয়ার হোসেন
বর্জ্য সংগ্রহ করার সময় প্রথম ধাপেই প্রায় ৫০ শতাংশ বাদ পড়ে যায়। যেহেতু বর্জ্য একধরনের সম্পদ, তাই যদি প্রথম ধাপ থেকেই শতভাগ সংগ্রহ করা না যায়, সে ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতি হয়। এখন আমরা কম্পোস্টিংয়ের কথা বলছি, সেখানে প্রচুর প্লাস্টিক থাকে, এর ফলে সঠিক কম্পোস্টিং সম্ভব হয় না।

একসময় আমাদের বাসায় বর্জ্য আলাদা করার জন্য তিনটি বিন দেওয়া হয়েছিল। সেই পদ্ধতি আবার নিয়ে এলে ভালো হয়। যে যত বেশি বর্জ্য সংগ্রহ করছে, তাকে তত বেশি আর্থিক সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এতে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

সকালে যাঁরা রাস্তা পরিষ্কার করেন, তাঁরা যে জায়গায় সামান্য ময়লা রাখার জায়গা (ডাম্পিং) থাকে, সেখানেই ময়লা রাখেন। সাধারণত সেখান থেকে বৃষ্টির পানি পাইপলাইনে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা হয়। যদি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যায়, তাহলে জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমানো যাবে।

এ ছাড়া যাঁরা বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করেন, তাঁদের সঙ্গে যদি আরেকটা ব্যাগ থাকে, তাহলে তাঁরা বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তু সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারেন। ইচ্ছা করলে এগুলো রিসাইক্লিং করা যায়। যদি আমরা বর্জ্যকে সম্পদ হিসেবে নিই, তাহলে এর ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করা সম্ভব। বর্জ্য থেকে যদি শুধু পলিথিন আলাদা করা সম্ভব হয়, তাহলে সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব।

এবার ট্যানারির বর্জ্য নিয়ে কথা বলতে চাই। এই বর্জ্যের শতভাগই সম্পদ। আমি একজনকে বললাম, সেই লোক ২২ টন বর্জ্য থেকে ২ টন জেলেটিন (একধরনের আঠা) উৎপাদন করেন, যাতে তাঁর খরচ হয় ২ লাখ টাকা কিন্তু বিক্রি হয় ৪ লাখ টাকা। মনে হয় এই বর্জ্য থেকে অনেক আয় করা সম্ভব। তাই এখন ১০০ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি তিনি নিয়েছেন।

মোহাম্মদ হোসাইন
মোহাম্মদ হোসাইন

মোহাম্মদ হোসাইন
১৯৯৭ সালে বিদ্যুৎ বিভাগ বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিন্তু আজও সেটা একটা প্রশ্ন হয়েই রয়েছে। আমরা টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না বলে যদি উৎপাদনশীল টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলি, তাহলে ভালো হয়।

কারণ, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা উৎপাদনশীল না হব, ততক্ষণ এই মূল্যবান সম্পদের সঠিক ব্যবহার সম্ভব হবে না। আমরা উৎপাদনশীল হলে এর ব্যবস্থাপনা খুব সহজেই ঠিক হয়ে যাবে।

আজকের আলোচনায় মালিকদের দায়ভার নিয়ে কথা হয়েছে। যদি সত্যি এই দায় কারও ওপর পড়ে, সে নিজ স্বার্থে সব ঠিকভাবে পরিচালনা করবে।

১৯৯৭ সালে দরপত্র আহ্বান করার আগে আমরা বুঝতে পারিনি বর্জ্য যে কত দামি সম্পদ। কারণ, সিটি করপোরেশন এই বর্জ্য দিতে রাজি নয়।

অথচ ওই সময় আমাদের বিদ্যুতের অভাব ছিল। যদি এক মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পারতাম, সেটাই তখন অনেক হতো। বর্তমানে আমাদের বিদ্যুতের অভাব নেই। শুধু সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা এটা নিয়ে কাজ করতে চাই। যদিও এই কাজে খরচ একটু বেশি পড়বে। যদি টাকার দিকে তাকাই, তাহলে হবে না। মূল কথা, সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

তবে আমরা যেসব কথা বলি, সেগুলো দেশের বাস্তব অবস্থা ভেবে বলা উচিত। অনেকেই সোলার পার্ক করতে বলছেন। আরও জমি বাড়িয়ে বেশি উৎপাদন করা সম্ভব বলছেন। কিন্তু জমি কোথায় এই দেশে?

মেয়রদের অনুরোধ করব, আপনারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করুন। আমরা বেশি দামেই কিনতে রাজি। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জে পাইলটিং করছি। কিন্তু আমরা চাই এই যাত্রায় ঢাকা এগিয়ে থাকুক। আশা করি সম্মানিত মেয়র আমাদের সাহায্য করবেন। এ ছাড়া আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হলো সংগ্রহ ব্যবস্থা। সবকিছু ডিজিটাল হলেও এই জায়গায় আমরা সনাতন অবস্থায় আছি। এটা ঠিক হলে অনেক কিছু এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

ইজাজ হোসেন
ইজাজ হোসেন

ইজাজ হোসেন
আমি বলতে চাই বর্জ্য থেকে এনার্জি উৎপাদন করতে চাইলে তাকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর পোড়াতে হলে গ্যাস লাগবে। একটা পোড়াতে গিয়ে আমরা কেন আমাদের আরেকটা এনার্জি নষ্ট করব? আমরা বলতে পারি, এটা যদি এনার্জি প্ল্যান্টে দিয়ে কিছু পাওয়া যায়, তাহলে ঠিক আছে।

সিটি করপোরেশন বর্জ্য দিতে চায় না। ফলে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কারণ দিতে পারে।

আমাদের দেশে বর্তমানে মাটির অবস্থা খুব খারাপ। এখানে কমপক্ষে ১ শতাংশ হারে অর্গানিক কনটেন্ট দরকার, যা আমাদের দেশে কোথাও সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পাওয়া যেতে পারে। তাই কম্পোস্টিং না করে পুড়িয়ে ফেললে এটুকুও ধরে রাখা কঠিন হবে।

টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় শেষ করা সম্ভব নয়। তাই এ পর্যন্ত যে সমাধানগুলো এসেছে, তা পাইলটিং করে দেখা যেতে পারে।

মো. আতিকুল ইসলাম
মো. আতিকুল ইসলাম

মো. আতিকুল ইসলাম
আমার মেয়র হওয়ার আট মাসের অভিজ্ঞতায় প্রথম যেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, তিনি বলেছিলেন, তোমরা মেয়ররা তো কোনো বর্জ্য দিতে চাও না। তিনি এটা বলার পর আমি এর ভেতরে ঢুকতে শুরু করলাম। পরিবেশ সংরক্ষণে ১৯৯৫ সালের আইনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খুব পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া তেমন কোনো আইন নেই। তাই শুধু বিধিমালা না করে আইন করলে বেশি ভালো হয়। কারণ, আইন হলে সেখানে শাস্তির বিধান চলে আসবে। ব্যবস্থাপনা আরও সহজ হবে।

স্থানীয় সরকার বিষয়টি শুধু দেখাশোনা করতে পারবে। দায়িত্ব নিতে হবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে। লোকজন খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছে। ডাব, কোমল পানীয় পান করার প্লাস্টিক দিয়ে নালা ভরে থাকছে। এখন কোকের বোতল প্লাস্টিকের। এই প্লাস্টিকের বোতল এদিক-সেদিক গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। বিদেশে হলে এ জন্য জরিমানা হতো। আমাদের জরিমানার বিধান আনতে হবে। নিয়মকে সুগঠিত করতে হবে।

শহরের সবাই নাগরিক। কিন্তু সুনাগরিক কতজন? শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সকাল নয়টায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে বাসায় চলে যান। কিন্তু এরপর দোকান খুলে ওই দোকানের সামনেই ময়লা ফেলা হচ্ছে। এটাই আমাদের বাস্তবতা।

২০২১ সাল নাগাদ শুধু ডিএনসিসি (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) এলাকায় দৈনিক ৫ হাজার ২০০ টন বর্জ্য তৈরি হবে। এত বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ইনসিনারেশন (বর্জ্য পোড়ানো) ছাড়া সম্ভব নয়। দুটি ইনসিনারেশন প্ল্যান্টসহ ইকোপার্ক করার জন্য সরকারের কাছে ৮২ একর জমি চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ একর ইনসিনারেশন প্ল্যান্টের জন্য। বাকিটাতে ইকোপার্ক করা হবে। এখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রকম গবেষণা করবে। টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়তে সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের দেশের এখন জিডিপি ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এমন অবস্থায় একটি খাত এতটা নিয়মহীনভাবে চলতে পারে না। আর নিয়ম আনতে চাইলে ইনসিনারেশন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

আমরা আজ এখানে যা আলোচনা করেছি, তা নিয়ে পাইলটিং করলে খুব বেশি ভালো হবে বলে মনে হয়। যাঁরা নগর-পরিকল্পনা করেন, তাঁদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, ময়লাটা কোথায় ফেলতে হবে, কোথায় সেকেন্ডারি স্টেশন বসবে, পরিকল্পনার সময় সেটাও যেন বিবেচনায় রাখা হয়।

কীভাবে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা যায়, তা স্কুলে শিশুদের ছোটবেলা থেকে শেখাতে হবে। তাহলে আমরা একটা অবস্থায় আসতে পারব। এ ছাড়া হাসপাতাল ও মার্কেট আমরা একটা নিয়মের ভেতর নিয়ে আসার চেষ্টা করব।

পরিশেষে আজকের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে বলতে চাই, আসুন আমরা সবাই সুনাগরিক হই।

জামিলুর রেজা চৌধুরী

আজকের আলোচনায় কিছু সুপারিশ এসেছে। শাস্তির বিধান রাখতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে যাঁরা সুনাগরিক, তাঁদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। যাঁদের বর্জ্যের পরিমাণ কম, তাঁদের সিটি করপোরেশন ট্যাক্স কমিয়ে দিতে পারে।

রাস্তার পাশে বিশাল জায়গা নিয়ে ময়লার বাক্স থাকে। এগুলো ভীষণভাবে পরিবেশ নষ্ট করে। এসব অন্য কোথাও রাখার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটা ভাবতে হবে।

যারা রাস্তার ময়লা কুড়িয়ে নিয়ে যায়, আমরা তাদের টোকাই বলি। এই টোকাইদের যদি স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে মাস্ক বা হ্যান্ড গ্লাভস দেওয়া যায়, তাহলে ভালো হয়।

জনগণের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। সবশেষে বলব, যদি শক্ত আইন তৈরি করা যায়, তাহলে সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

যাঁরা অংশ নিলেন

জামিলুর রেজা চৌধুরী: জাতীয় অধ্যাপক, সভাপতি, বুয়েট অ্যালামনাই

মো. আতিকুল ইসলাম: মেয়র, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)

সুলতান আহমেদ: চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)

এম ফিরোজ আহমেদ: ইমেরিটাস অধ্যাপক, স্টামফোর্ড ইউনিভর্সিটি বাংলাদেশ

মোহাম্মদ হোসাইন: মহাপরিচালক, পাওয়ার সেল, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ           সম্পদ মন্ত্রণালয়

ইজাজ হোসেন: অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

মো. শাহ্জাহান মোল্লা: অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মানবসম্পদ, মাননিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)

আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম: তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

মো. জিয়াউল হক: পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়

মো. দেলোয়ার হোসেন: প্রফেসর, পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি   বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

জামিলুর রেজা চৌধুরী: জাতীয় অধ্যাপক, সভাপতি, বুয়েট অ্যালামনাই