সুবিধাবঞ্চিতদের সরকারি ভাতা

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়স্ক মানুষদের সরকারি ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে এক করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সোমবারের প্রথম আলোর ‘বিশাল বাংলা’ পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে সেই পরিস্থিতির নির্মমতা অনুধাবন করা যায়।
প্রতিবন্ধী একজন মানুষ মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পাবেন। বয়স্ক ও বিধবারা পাবেন মাথাপিছু ৪০০ টাকা। কিন্তু লক্ষ্মীকুণ্ডা ও সাহাপুর ইউনিয়নে এই সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় মানুষগুলোর দুর্ভাগ্য হলো, তাঁদের নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে। ভাতা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির জন্য যে যাচাই–বাছাই কমিটি উভয় ইউনিয়নে রয়েছে, তারা তালিকা তৈরিতে একমত হতে পারছে না। কমিটিগুলোর নেতারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়েও দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছেন; তাই তালিকা জমা দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ পেরিয়ে গেছে। ঈশ্বরদী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেছেন, জুন মাসের মধ্যে তালিকা জমা দেওয়া না হলে ওই মানুষগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থ ফেরত যাবে।
অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থ মানুষদের জন্য সামান্য আর্থিক সহযোগিতার যে ব্যবস্থা সরকার করেছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোকজনের এ রকম দ্বন্দ্ব-বিরোধ অত্যন্ত বেদনার। সরকারের ভালো ও জনমুখী নানা উদ্যোগ এভাবে ব্যর্থ হয়, অসহায়-নিঃস্ব মানুষেরা বঞ্চিত হন। কাজের বিনিময়ে খাদ্য, কাজের বিনিময়ে টাকা, ভিজিএফ কার্ড বিতরণ ইত্যাদি সেবামূলক উদ্যোগ অসৎ ও অতি সংকীর্ণ মনের মানুষদের কারণে সমালোচিত হয়। দরিদ্র, নিঃস্ব, অসহায় মানুষদের হক নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি কিংবা লজ্জাজনক অনিয়ম-দুর্নীতি যাঁরা করেন, তাঁরা আসলে অপরাধই করেন। সরকারের নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব গণমুখী কর্মসূচিগুলোর সুফল সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর দুয়ারে নিশ্চিতভাবে পৌঁছে দিতে কঠোর তদারকিমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
ভাতা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা নিয়ে ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুণ্ডা ও সাহাপুর ইউনিয়নের সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মনোনীত প্রতিনিধিদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-মতবিরোধের দ্রুত অবসান ঘটুক। সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা শিগগির নিশ্চিত করুন।