পুলিশ প্রশ্নে আদালতের পর্যবেক্ষণ

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের দ্রুত তদন্তের বিষয়ে একটা সংবেদনশীলতা রয়েছে। জনগণের ধারণায় এটা অনুপস্থিত। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে বিভাগীয় তদন্ত এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে দ্রুত আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে একটা কর্তৃপক্ষীয় শৈথিল্য অবাস্তব নয়।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করি, পুলিশের বিরুদ্ধে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি কার্যত গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা আইনের শাসনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা চাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি একটি সাধারণ নীতি হোক। পুলিশ বা সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বিশাল। এত বড় বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়া কোনো অবাস্তব বিষয় নয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 রাজশাহীর পুঠিয়া থানার সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় এজাহারের বর্ণনা পরিবর্তন নিয়ে নিহত ব্যক্তির মেয়ে নিগার সুলতানা হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আমরা দৈনন্দিন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে ইদানীং লক্ষ করছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে।’ আমরা মনে করি, আদালতের এই অভিমতে একটি সাধারণ দৃশ্যপটই ফুটে উঠেছে।

এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা যাতে খোদ পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন, সে জন্য বিশেষ সেল আগে ছিল না। নতুন করা হয়েছে। একে আমরা সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানাই। কারণ, আইজিপিকেই এসব বিষয়ে সরাসরি শুনতে হচ্ছে। যেকোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলা পর্যায়ের অভিযোগগুলোর প্রতিকার পুলিশ সুপার এবং ডিআইজিকেই দিতে হবে। সব অভিযোগ ভুক্তভোগীদের পক্ষে রাজধানীতে এসে করা সম্ভব নয়। সুতরাং অভিযোগ সেল প্রতিটি জেলা সদরে থাকতে হবে এবং তাদের সার্বিক তদারকি একটি স্বাধীন কমিশনের কাছে ন্যস্ত করতে হবে।

একটি পদ্ধতিগত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা অনুপস্থিত থাকলে আইজিপির কাছে দায়ের করা অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে না। সেল বলেছে, জনসাধারণ এখন থেকে পুলিশ সদস্যের যেকোনো অপেশাদার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সরাসরি, কুরিয়ার সার্ভিস ও ডাকযোগে অভিযোগ দিতে পারবে। এটা চালু থাক। কিন্তু স্থানীয়ভাবে এর একটা তাৎক্ষণিক সুরাহা থাকতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে বলে আমরা ধারণা করি। এ পদক্ষেপ সংবিধান সমর্থন করে।

 রাজশাহীর পুঠিয়ার ঘটনায় গত ১১ জুন দায়ের হওয়া ওই হত্যা মামলার ঘটনাটি তারই সাক্ষ্য বহন করছে। এ রকম একটি গুরুতর অভিযোগ উঠলেও পুলিশ ছয় মাস ধরে নির্লিপ্ত থেকেছে। ছয় মাস পরে এসে হাইকোর্ট এই মামলার তদন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

পুঠিয়ার ঘটনায় আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্লিপ্ততাও দেখি। সেখানে দুর্নীতির যে দিকটি ছিল, সে বিষয়ে দুদক কর্মকর্তারা দ্রুত সংশ্লিষ্ট হতে পারতেন। কিন্তু তাঁরাও তা করেননি। সে কারণেই হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হয়েছে, যাতে দুদক ২০০৪ সালের আইন ও ২০০৭ সালের বিধি অনুসারে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করে। হাইকোর্টের তো সাধারণভাবে এতখানি বলে দেওয়ার দরকার ছিল না। আইনের শাসনের ঘাটতি প্রকট বলেই হাইকোর্টকে এ ধরনের আদেশ লিখতে হচ্ছে।