বরগুনার খাকদোন নদ দখল

দখল-দূষণের কবলে পড়ে বরগুনার অন্যতম খাকদোন নদের সংকুচিত হওয়ার খবরটি উদ্বেগজনক। যেভাবে দখল চলছে, তা অব্যাহত থাকলে একসময় নদটির অস্তিত্বই আর থাকবে না।

গত সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, খাকদোন নদের দক্ষিণ পাড়ের পোটকাখালী এলাকা থেকে মাছবাজার ব্রিজ পর্যন্ত সীমানা এলাকায় কয়েক শ অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে নদ সংকুচিত হয়ে গেছে। একসময় নদের প্রস্থ ছিল ৭৫০ মিটার। এখন কমে ২৫০ মিটারে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ স্থাপনা সম্প্রসারণ করায় নদের প্রায় মাঝ পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। দখল হওয়ার কারণে নাব্যতা–সংকটে পড়েছে নদটি। নাব্যতা-সংকটের কারণে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে নদের পানি দূষিত হচ্ছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ ১৫০ জন দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। ওই তালিকা গত অক্টোবর মাসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানোও হয়েছে, কিন্তু জেলা প্রশাসন এখনো এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের গড়িমসি গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশে একসময় নদীর সংখ্যা ছিল সাত শতাধিক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে, বর্তমানে কোনোরকমে টিকে আছে ৪৩০টি নদী। দখল, ভরাট ও দূষণে এগুলোর বেশির ভাগের অবস্থাই শোচনীয়। নদ-নদীর দখল রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে; কিন্তু সেই নির্দেশনা যে মানা হচ্ছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। সারা দেশেই চলছে নদ-নদী দখলের উৎসব। অবস্থা এমনই যে অনেক নদ-নদীর অস্তিত্ব মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যায় না।

এ রকম তো চলতে পারে না। কারণ, নদীর সঙ্গে আমাদের পরিবেশ ও জীবন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নদ-নদী আমাদের পানির প্রধান উৎস। নদ-নদী থেকেই উৎসারিত হয় জলীয় বাষ্প এবং তা আবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। নদী না থাকলে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হবে। ফসল ফলানো, যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির সঙ্গেও নদীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মোটকথা, নদী না থাকলে মানুষও বাঁচবে না।

জনগণের সম্পদ নদী রক্ষার দায়িত্ব সরকার তথা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের। তাই যেসব নদ-নদী দখল-দূষণের কবলে পড়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে, সেগুলো উদ্ধারে সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। নদ-নদী রক্ষা করতে হবে জাতীয় স্বার্থকে সব ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে। আমরা চাই, বরগুনার খাকদোন নদসহ দেশের আর যেসব নদ-নদী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেগুলো উদ্ধারে সচেষ্ট হবে। নদী রক্ষায় নীতি ও আইন রয়েছে। এসব নীতি ও আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।