কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা: উদ্যোগ ও করণীয়

গত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় ‘কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা: উদ্যোগ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

আলোচনা 

আব্দুল কাইয়ুম
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য শিক্ষাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই এ বিষয় সম্পর্কে তারা জানতে পারে না। আমাদের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ, সীমাবদ্ধতা ও করণীয় সম্পর্কে আজ আলোচনা হবে।

সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক
আমরা নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে ‘জেনারেশন ব্রেকথ্রু’ নামে একটি প্রকল্প চালাই। এই প্রকল্পে বেশ কিছু জেলার কয়েকটি স্কুলে কাজ করেছি। আমি নিজেও স্কুলগুলো পরিদর্শন করেছি। প্রকল্পটির প্রভাব অনেক ভালো। এটা এখনো চলছে। আমরা এ বছর প্রকল্পটিকে বর্ধিত করার পরিকল্পনা করেছি।

এ বছর কিছু স্কুলে এ প্রকল্পটি ছিল। সামনের বছর বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুলে এটা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে ইউনিসেফ ও ইউএনএফপিএ কয়েকটি ভিডিও ডকুমেন্টারি করেছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি প্রতিটি স্কুলে যেন এগুলো দেওয়া হয়। এর সাহায্যে শিক্ষক ক্লাসে মাল্টিমিডিয়া পাঠ দেবেন। শিক্ষকেরা যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। তাই মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে দেখালে তাঁর জন্য বিষয়টা অনেক সহজ হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে মিলে আমরা আরও একটি কাজ করেছি। কীভাবে স্বাস্থ্য পরিচর্যা করতে হয়, কীভাবে ওজন–উচ্চতা পরিমাপ করা যায়, ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের নিয়মসহ প্রভৃতি বিষয়ে সারা দেশে আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বইয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ব্যাপারে একটু অবহেলা থাকলেও এখন আমরা এ ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিচ্ছি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যায়াম ও খেলাধুলার ওপর নম্বর দেওয়া হবে।

এ এস এম সায়েম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সজ্ঞায় যাদের বয়স ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে তারাই কিশোর–কিশোরী। এটি হলো শৈশব এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার মধ্যবর্তী একটি সময়।

এখানেই মূলত স্বাস্থ্যের ভিত্তি গড়ে ওঠে। তাই এখানে স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো যেমন ভিন্ন, স্বাস্থ্যসেবার ধরনও ভিন্ন। এই সময়ের মধ্যেই ৭০ শতাংশ অসংক্রামক  রোগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করেই কর্মপরিকল্পনা করতে হবে।

১০ থেকে ১৯ বছর বয়সের কিশোরদের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। এ–সংক্রান্ত শিক্ষাজীবনের একদম শুরুতেই দেওয়া উচিত। ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ এখনো আমরা বন্ধ করতে পারিনি। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী বিবাহিত ৫৯ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের মধ্যে। বাল্যবিবাহের জন্য স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। 

আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি। কীভাবে ছেলেদের এই সেবায় যুক্ত করা যায়, সে বিষয়েও আমাদের ভাবতে হবে।

মোহাম্মদ শরীফ
গত এক দশকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। মাতৃমৃত্যুর হার ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। মাত্র এক দশক আগেও সাধারণ চিকিৎসার জন্যও বিদেশ যেতে হতো।

এখন সে সেবা আমরা বিভাগীয় শহরগুলোতেই পেয়ে থাকি। শুধু কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবায় কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে আমরা সবার সঙ্গে কাজ করছি।

আমরা ‘কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৭-৩০’ তৈরি করেছি। কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহের ফলে অপরিণত বয়সে গর্ভবতী হয়। তখন মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। গ্রামাঞ্চলে এই হার অনেক বেশি।

আমাদের দেশে সামাজিক কারণে অবিবাহিতদের পরিবার পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কিন্তু সুইডেনে আমরা দেখেছি, কলেজ পর্যায়ে এসব শেখানো হয়। আশা করি, এসব সমস্যার সমাধান হবে।

তাবাসসুম আম্বিয়া
আমি কিশোর-কিশোরীদের একজন প্রতিনিধি। আমি সবার পক্ষে বলতে চাই, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা জানতে চাই। সচেতন হতে চাই। আমাদের অনেক কিছু জানার আছে।

আমরা আমাদের মা–বাবা বা শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব জানতে পারি না। ফলে না জানার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আমাদের অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। সেখানে আমার মতো কিশোর-কিশোরীরাও সব ধরনের সমস্যা জানতে পারবে।

পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ক্রীড়ার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। সেখানে অবশ্যই কাউন্সেলিং কর্নার থাকবে। কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিং করাতে হবে।

অনেকাংশেই অভিভাবকেরা অসচেতন। তাঁরা সচেতন হলে সন্তানকে আপনা–আপনিই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।

নন্দলাল সূত্রধর
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিশোর–কিশোরীদের পুষ্টির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কারণ, স্কুল–কলেজেই শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্নভোজের সময় পেরিয়ে যায়। তাই এ সময়ে টিফিনের ব্যবস্থা করতে হবে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি আরও ব্যাপকভাবে হওয়া প্রয়োজন।

কিশোর–কিশোরীদের সুষম খাবার ও পুষ্টিসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় পুষ্টিসেবা প্রতিষ্ঠান, কিশোর–কিশোরীদের পুষ্টি নিশ্চিত করা ও সচেতনতার কাজ  করছে।

বর্তমান সময়ে কিশোর–কিশোরীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে। সচেতনতা তৈরিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশি কার্যকর হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়।

মো. আমান উল্লাহ্কি
শোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। গ্রামাঞ্চলে অভিভাবকদের যে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আছে, তা দূর করতে সচেতনতামূলক কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে আমরা মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অভিভাবক, চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ মোড়লদের অন্তর্ভুক্ত করেছি।

বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহপাঠী দল ও  স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

 দিন দিন যৌন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়বে।

বর্তমানে ২৩টি স্কুল হেলথ ক্লিনিক আছে। আমরা চাই প্রতিটি জেলায় যেন একটি করে স্কুল হেলথ ক্লিনিক থাকে। শুধু স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একক প্রচেষ্টায় সচেতনতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। আশা করি, আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারব। 

সারা হোসেন
কিশোর–কিশোরীদের নির্যাতন থেকে মুক্ত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আলোচনায় বসলে বাল্যবিবাহ কিংবা নারী নির্যাতন নিয়েই কথা বলি। তবে আজ নতুন করে সড়কে নিরাপত্তার কথা এসেছে। তবে এটি সামাজিক ও জাতীয়ভাবেও আলোচনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটার আগেই আমাদের সচেতন থাকতে হবে। যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।

আমাদের অনেক কিশোর–কিশোরী কর্মক্ষেত্রে আছে। তাদের কাছে কীভাবে প্রচার করা যায়, তা নিয়েও ভাবতে হবে। স্কুল ও হেলথ ক্লিনিকগুলোতে যদি কৈশোর স্বাস্থ্যসেবার তথ্য নিয়ে আসা যায়, তবে তা কার্যকর হবে। কোথায় কোন সহযোগিতা পাওয়া যাবে, কী কার্যক্রম পরিচালিত হবে, তা জানাতে হবে।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ওপর আমরা তথ্য চেয়ে আবেদন করে দেখেছি দেশের অনেকগুলো জেলায় এই আইনের অধীনে কোনো মামলাই হয়নি। তবে আশার বিষয় হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ আইনে যে কথাগুলো আছে, তা থেকেই অনেক সমস্যার সমাধান করা গেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আমাদের কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে যে অপরাধগুলো তৈরি হয়েছে, তা কিছু সমস্যা তৈরি করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বলবৎ থাকলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে ভালো কাজ করা কঠিন। এ জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে।

হেলাল উদ্দিন আহমেদ
১০ থেকে ১৯ বছর সময়টি সব ধরনের সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি এ সময়ে উন্নয়ন ব্যাহত হয়, তবে ১৫ থেকে ২০ বছর পর একটি  মূল্যবোধহীন সমাজ হবে। শিশুর নৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা চিন্তা করি। কোনো শিশুর সামনে তার মা–বাবা অনৈতিক কাজ করলে সে শিশুও মূল্যবোধসম্পন্ন হবে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিশুর আশপাশের লোকেরা নেতিবাচক অনেকগুলো কথা তার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়। এতে ওই নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি তাদের ঘৃণা তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে তার সুন্দর মানসিক বিকাশ হয় না।

আমাদের দেশে ৭৪ শতাংশ শিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পড়াশোনায় ভালো না করার জন্য। এই নির্যাতন বন্ধে আইন করা হয়েছে। আবার বলে দেওয়া হয়েছে যে তোমাকে ভালো কিছু করতে হলে জিপিএ–৫ পেতে হবে। এটি একটি বৈপরীত্য অবস্থা। আমাদের এ রকম বৈপরীত্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

পৃথিবীর যত মানসিক রোগ আছে, তার শতকরা ৫০ ভাগ ১৪ বছরের আগে এবং মোট ৭৫ ভাগ রোগ শুরু হয় ২৫ বছরের আগে। অথচ এই সময়ে পড়াশোনার জন্য চাপ দেওয়া হলেও মানসিক বিকাশের জন্য সেই অর্থে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

মো. জয়নাল হক
কিশোর–কিশোরীরা সেবার জন্য এসে যেন কেন্দ্রে থাকা চিকিৎসকদের কাছে ভালো আচরণ পায়। সেবাগ্রহীতা যেন মানসম্মত সেবা পায়, পরবর্তী সময়ে আসার আগ্রহ সৃষ্টি হয়, এমন পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা ধাপে ধাপে প্রতিবছর তিন শ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করছি। পাশাপাশি যারা এই সেবা কেন্দ্রগুলোতে কর্মরত আছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। সর্বোপরি আমরা এই কেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার নিমিত্তে কাজ করেছি। আমরা চাইব এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে, যেন এটি কিশোর-কিশোরীবান্ধব হয়ে ওঠে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়ন সম্ভব।

মো. জিয়াউল মতিন
কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমাদের দেখতে হবে, আমরা সেই মানদণ্ড মেনে চলছি কি না। এ জন্য আমাদের কাজ চলমান। যদি এটি না হয়, তাহলে আমরা আমাদের সেবার মান বিচার করতে পারব না। আর আমাদের কোনো সাধারণ কর্মপন্থাও তৈরি করতে পারব না।

কিশোর–কিশোরীদের প্রত্যেকের সমস্যার ভিন্নতা আছে। এই ভিন্ন সমস্যার সমাধানও করতে হবে ভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। সরকারের একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়। সে জন্য অনেক সহযোগী সংস্থা আছে। তারা পৃথক স্থানে পৃথক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটাতে পারলে বিষয়টি আরও ভালো হতো।

আমাদের কিশোর-কিশোরীদের কেন্দ্রে রেখে চিন্তা করতে হবে। কিশোর–কিশোরীদের গোপনীয়তা, মর্যাদা যেন সেবাদানকারীদের মাধ্যমে ক্ষুণ্ন না হয়, তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় তারা আর সেবাটি নিতে আসতে চাইবে না।

বাদশা মিয়া রুহি
আমরা মূলত ভুলে যাই যে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি হিজড়া জনগোষ্ঠী আছে। তাদেরও কৈশোরকালসহ জীবনব্যাপী অনেক সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে। তারা তাদের সমস্যার কথা কোথাও বলতে পারছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা হয় না।

গুরুজনদের সামনেই চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন। আবার আমার সম্মতি ছাড়াও অনেক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা হয়, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে আলোচনায় আনতে হবে। অন্যথায় তারা এই সেবা থেকে দূরে পড়ে থাকবে।

মাশফিকা জামান সাটিয়ার
যেসব উন্নয়ন সংস্থা আছে, তারা যে একা কাজ করছে এমন নয়। তারা সবাই সরকারের সঙ্গেই কাজ করছে। আমরা প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করেছি। কারণ, বিদেশ থেকে কিছু আনলেই হবে না, প্রেক্ষাপটের সঙ্গে খাপও খাওয়াতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতে আমাদের আইনি কাঠামো অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো। আইনের কাঠামো থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে আমরা তার সুফল পাই না। তবে এই কাঠামোগুলো যাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, তারা যেন এর মাধ্যমে যথাযথ সেবা পেতে পারে এবং একই সঙ্গে সরকার যেন এই কাঠামোগুলোর যথাযথ ব্যবহার করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

আমাদের সেবাকেন্দ্রগুলো শুধু গর্ভপাত বা শিশু জন্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, কিশোর–কিশোরীদের এই বিষয়টি বোঝালে তারা সেবা নিতে আরও উদ্বুদ্ধ হবে। 

আমাদের দেশ ২০২১ সালে নিজেদের মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণা দিলে অনেক দাতা সংস্থা অন্যত্র চলে যাবে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। তাই আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। সময় এসেছে নিজেদেরই করে দেখানোর। 

আবু সাইদ মোহাম্মদ হাসান
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। এর একটি অংশ হলো পরিবার পরিকল্পনাসেবা। তাই এটি বাদ দিয়ে চিন্তার কোনো সুযোগ নেই। পরিবার পরিকল্পনাসেবা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ অথবা মাতৃমৃত্যু প্রতিহত করে না। এটি যৌনবাহিত রোগ থেকেও সুরক্ষা দিয়ে থাকে। যদি আমরা এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করি, তাহলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কোনোটিই অর্জন সম্ভব নয়।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১৫ থেকে ১৯ বছরের মেয়েদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে গর্ভধারণ ও সন্তান  জন্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত জটিলতা। বিয়ের আগে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পায় না। এ–ও জানে না যে সেবাটি কার কাছে গেলে পাওয়া যাবে। এ জন্য তারা ভুলের মধ্যেই থেকে যায়। স্কুলে পাঠের মধ্যে যৌনশিক্ষার কিছু অংশ যুক্ত করা হলেও এখনো পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি যুক্ত করা হয়নি। পরিবার পরিকল্পনাসেবা দিয়েই আমরা ৩০ শতাংশ মাতৃমৃত্যু ও ২০ শতাংশ শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে পারি। সে জন্য স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে একজন করে পরামর্শক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্কুলেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

মোমেনা খাতুন
বর্তমানে পোশাকশিল্পে অনেক কিশোর–কিশোরী কাজ করে। তাদের কীভাবে সচেতন করে তোলা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। ১৯৯৮ সালে যখন এ নিয়ে কাজ শুরু হয়, তখন অনেক দোদুল্যমানতা থাকলেও এখন আমরা তা থেকে বেরিয়ে এসেছি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করলেও সরকারই পরিচালকের ভূমিকায় আছে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করে আসছে। কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাকলেও সেখানে অনেকে যেতে পারে না। এ জন্য আমাদের পরামর্শসেবার ওপর জোর দিতে হবে। কেন্দ্রের সেবার সঙ্গে সেবা প্রদানকারীদেরও বন্ধুভাবাপন্ন করে তুলতে হবে।

বর্তমানে সবাই ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই এটিকে কাজে লাগাতে হবে। বিষয়ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত সিনেমা তৈরি করে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে।

এস এম আসিব নাসিম
আমরা যদি কোনো কিছু ব্যাপকভাবে প্রচার করতে চাই, তাহলে স্কুল একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে। সমাজের মানুষ শিক্ষকদের কথাগুলো শোনে, সহজেই মেনে নেয়। আমাদের কিশোরদের একটি বড় অংশ স্কুলে তাদের বয়ঃসন্ধিকাল পার করে। সুতরাং স্কুলে যৌন প্রজনন ও স্বাস্থ্য বা পুষ্টির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে অনেক বড় একটি অংশকে সেবার আওতায় আনতে পারব। এতে কার্যক্রম অনেক সহজ হয়ে উঠবে। 

মোহাম্মদ মাজহারুল হক
আমাদের কিশোর–কিশোরীদের বড় একটি অংশ স্কুলে বয়ঃসন্ধি কাল পার করে। সুতরাং স্কুলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টিবিষয়ক কার্যকর পদক্ষেপ নিলে প্রজনন স্বাস্থ্য ও শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন আসবে। আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এখনো যেহেতু প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক পাঠদান কার্যক্রমে সাবলীল নয়, কাজেই পাঠ্যবইয়ের ওই সব অধ্যায়ের ওপর সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টারি তৈরি করে শ্রেণিতে প্রদর্শন করা গেলে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে। শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার
গর্ভধারণ থেকে দুই বছর শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। যদি আমরা এই সময়ে ভালোভাবে মায়ের পরিচর্যা করি, তাহলে শিশু ও মা দুজনের জন্যই কল্যাণ হবে। এটি পরবর্তী সময়ে শিশুর বিকাশে সহায়ক হবে।

কিন্তু আমরা তা করতে পারছি না। তবে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো বয়ঃসন্ধিকাল। এটি ভালো কিছু করার দ্বিতীয় ও সর্বশেষ সুযোগ। তাই এই সময়ে আমাদের কিশোর–কিশোরীদের নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক অনেকগুলো কমিটি রয়েছে। কমিটির কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করা জরুরি। ওষুধপত্রের সেবা দেওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিচর্যা ও তথ্যসেবা। 

সচেতনতার সঙ্গে সরবরাহের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় পুরো বিষয়টি এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

নূর মোহাম্মদ
আমাদের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র তৈরি করলেই হবে না। সময়ের ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া–আসার সময় স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যেন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া–আসার পথে সহজেই সুবিধা পেতে পারে।

আমাদের অনেকগুলো কেন্দ্রে রিসোর্সের অভাব রয়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তা সহজলভ্য আছে। সেগুলো ভাগাভাগির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

ফারহানা সামছ্ সুমি
যে প্রতিষ্ঠানগুলো এ নিয়ে কাজ করছে, তাদের প্রত্যেকের কাজের তথ্য–উপাত্ত একত্র করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে এক সারিতে আনা।

মোহাম্মাদ আবদুস সালাম খান
বাংলাদেশে ৩ কোটি ৬০ লাখ কিশোর–কিশোরী আছে, যা অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এখানে যদি আমরা ভালো কিছু করে দেখাতে পারি, তাহলে এর প্রভাব দেশের জনসংখ্যার ওপর পড়বে।

মিডটার্ম অব দ্য রিভিউ সেক্টর কর্মসূচিতে তৃতীয় লিঙ্গের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কারণ, বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বের দাবিদার।

আমাদের সহযোগীদের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। এতে অঞ্চলভিত্তিক সেবার যে বৈষম্য আছে, তা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। মা–বাবা যেন সন্তানদের কৈশোরকালীন সমস্যার কথা গুরুত্বসহকারে শোনেন।

দেশের প্রত্যেক নাগরিককে সুখী, স্বাস্থ্যবান ও অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনক্ষম করে তোলা আমাদের লক্ষ্য। 

রূপকল্প ২০২১ অর্জন এবং রূপকল্প ২০৪১–এ পৌঁছাতে এসব ক্ষেত্রে সফল হওয়ার বিকল্প নেই।

ফিরোজ চৌধুরী
আজকের আলোচনায় কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এসেছে। আশা করি নীতিনির্ধারকেরা এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাববেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

আলোচনায় সুপারিশ

■ শিক্ষকেরা যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। তাই মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে

■ আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে ছেলে ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি

■ প্রতিটি জেলায় একটি করে স্কুল হেলথ ক্লিনিক থাকা প্রয়োজন

■ কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিশোর-কিশোরীর পাশাপাশি অভিভাবকদেরও পরামর্শের আওতায় আনতে হবে

■ সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা দরকার

■ কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৭-৩০ এর কর্মপরিকল্পনা সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন

■ বাল্যবিবাহ ও কৈশোরকালীন গর্ভধারণ রোধে আরও উদ্যোগ 

নিতে হবে

■ কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে 

■ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবিষয়ক পরামর্শের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে পরামর্শসেবা চালু করতে হবে

যাঁরা অংশ নিলেন 

সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক: মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ

মোহাম্মাদ আবদুস সালাম খান: উপসচিব (পরিকল্পনা অধিশাখা), স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়

মোহাম্মদ শরীফ: পরিচালক (মা ও শিশুস্বাস্থ্য), লাইন ডাইরেক্টর (এমসিআরএএইচ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

মোহাম্মদ মাজহারুল হক: সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর

মাশফিকা জামান সাটিয়ার: সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, ঢাকা

সারা হোসেন: অনারারি নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)

মো. আমান উল্লাহ্: প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত), অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড স্কুল হেলথ প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এস এম আসিব নাসিম: সিনিয়র কনসালট্যান্ট, বিশ্বব্যাংক

হেলাল উদ্দিন আহমেদ: সহযোগী অধ্যাপক, শিশু কিশোর পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

নন্দলাল সূত্রধর: ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এনএনএস), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মোমেনা খাতুন: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, কানাডিয়ান ফিল্ড সাপোর্ট সার্ভিস, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স, কানাডা

ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার: পরিচালক, স্বাস্থ্য কর্মসূচি, কেয়ার বাংলাদেশ

নূর মোহাম্মদ: নির্বাহী পরিচালক, পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)

মো. জিয়াউল মতিন: স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক, ইউনিসেফ

আবু সাইদ মোহাম্মদ হাসান: কর্মসূচি বিশেষজ্ঞ, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল, ইউএনএফপিএ

এ এস এম সায়েম: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ইউনিসেফ 

মো. জয়নাল হক: প্রোগ্রাম ম্যানেজার (কিশোর-কিশোরী ও প্রজনন স্বাস্থ্য), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

তাবাসসুম আম্বিয়া সামিরা: কিশোরী সদস্য, বাপসা কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শকেন্দ্র

বাদশা মিয়া রুহি: সদস্য, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি

ফারহানা সামছ্ সুমি: হেলথ অফিসার, ইউনিসেফ

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী: সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো