সিলেটে পরীক্ষামূলক প্রকল্প

শহরে, বিশেষ করে রাজধানীসহ সবগুলো মহানগরে বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি মূর্তিমান বিপদের নাম। অনেক সময় তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ার পর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষ মরার খবর শোনা যায়। ঝড়ঝাপটার সময় বিদ্যুতের খুঁটি কখন কার ঘাড়ে পড়ে, তার কোনো ঠিক থাকে না। এসব খুঁটি থেকে রাস্তায় বসানো অস্থায়ী দোকানগুলোতে ‘হুকিং’ করে বিদ্যুৎ নেওয়ার কথাও সর্বজনবিদিত। 

ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এই ধরনের খুঁটিতে ঝোলানো তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা উন্নত দুনিয়ায় কল্পনাও করা যায় না। অন্যদিকে, আমাদের দেশে খুঁটিতে বাঁধা তার বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অন্য কোনো মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা সাধারণ মানুষের চিন্তার বাইরে। 

সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিটি করপোরেশন সম্প্রতি সারা দেশের মানুষকে সেই পুরোনো ধারণা থেকে বেরিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎসেবা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী করে তুলেছে। উন্নত দেশের আদলে দেশে প্রথমবারের মতো সেখানে ভূগর্ভে স্থাপন করা বিদ্যুৎ লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাহ এলাকায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনে সঞ্চালনের মাধ্যমে সিলেট নগরে পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 

একটি পাইলট প্রকল্পে নগরে ১১ কিলোভোল্টের (কেভি) ২৫ কিলোমিটার, শূন্য দশমিক ৪ কেভির ১৮ কিলোমিটার ও ৩৩ কেভির ২ সার্কিট কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার বিদ্যুৎ সাবস্টেশন কেন্দ্র থেকে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন আম্বরখানা হয়ে যাবে চৌহাট্টায়। চৌহাট্টা থেকে একটি লাইন যাবে নগরের জিন্দাবাজার-কোর্ট পয়েন্ট হয়ে সিলেট সার্কিট হাউস পর্যন্ত। আরেকটি লাইন চৌহাট্টা থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত যাবে। এই ব্যবস্থায় রাস্তার দুই পাশের বিদ্যুতের খুঁটি ও অন্যান্য সার্ভিস লাইনের তার অপসারণ করা হবে। ধারাবাহিক কার্যক্রমে পুরো সিটি করপোরেশন এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এটি হলে সিলেট শহর তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হবে। সিলেট নগরকে ডিজিটাল নগর হিসেবে গড়ে তোলার পথে এটি প্রধান ভূমিকা রাখবে বলেও ভাবা হচ্ছে। 

সারা দেশের বড় বড় শহরকে, বিশেষ করে রাজধানীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে এই মডেলের আওতায় আনা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। এতে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত দুর্ঘটনার হার বহুলাংশে কমে যাবে। ‘হুকিং’ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ চুরিও লক্ষণীয় মাত্রায় কমবে। পথচারীদের মাথার ওপর থাকা তারের জঞ্জাল যে দৃশ্যদূষণ করছে, তা থেকেও মুক্তি পাবে নগরবাসী।