স্বাগত মুজিব বর্ষ

আজ ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফেরার দিন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের ক্ষণগণনার শুরুও আজ থেকে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর যখন আমরা দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি, তখনো তিনি ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। তাঁর নেতৃত্বেই গোটা জাতি স্বাধীনতার আন্দোলনে একাত্ম হয় এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসজুড়ে বন্দী বঙ্গবন্ধুই ছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা। বিশ্বজনমতের চাপে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিজয়ী জাতির নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন। তাঁর এই ফিরে আসা ছিল অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। জাতির জনক। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি দেশ শাসনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এই স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু ধ্বংসপ্রায় দেশটির পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করেছেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে নানা কল্যাণমুখী পরিকল্পনা নিয়েছেন। মাত্র ১০ মাসের মধ্যে তিনি একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন—যার ভিত্তি ছিল জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে রাষ্ট্রকে মুক্তিযুদ্ধের এসব আদর্শের বিপরীতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একজন নেতা, যাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সম্পর্ক গভীর। ঘাতকের বুলেট তাঁকে হত্যা করলেও সে সম্পর্ক মোটেই ছিন্ন করতে পারেনি। যত দিন যাচ্ছে, ততই ইতিহাসে তাঁর নাম সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেভাবে জর্জ ওয়াশিংটনের নাম জড়িয়ে আছে কিংবা ভারতের সঙ্গে যেভাবে মহাত্মা গান্ধীর নাম জড়িয়ে আছে, বাংলাদেশের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের নামও সে রকমই ওতপ্রোত। তিনি এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের প্রায় অর্ধেক সময় তিনি কাটিয়েছেন কারাগারে।

প্রতিবছর ১০ জানুয়ারি উদ্‌যাপিত হয়ে এলেও এবারে তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভিন্নমাত্রা। ২০২০ সাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। সরকারিভাবে বছরটি মুজিব বর্ষ হিসেবে উদ্‌যাপিত হচ্ছে। অত্যন্ত আনন্দের কথা যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ শুধু বাংলাদেশে উদ্‌যাপিত হচ্ছে না, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থাও (ইউনেসকো) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ইউনেসকোর সদস্যভুক্ত যেকোনো দেশের সঙ্গে যৌথভাবে কিংবা ইউনেসকো সদস্যভুক্ত যেকোনো দেশ আলাদাভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন করতে পারবে।

যেকোনো মহৎ ব্যক্তির জন্মশতবর্ষেরই একটি বাড়তি মাহাত্ম্য থাকে, থাকে অনেক আনুষ্ঠানিকতার আচার। সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে,
নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি নেওয়া হবে। কিন্তু এসব আনুষ্ঠানিকতা, স্মরণ ও স্মৃতিতর্পণের বাইরেও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শের যথাযথ বাস্তবায়ন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক লড়াই ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এবং শোষণ ও বৈষম্য বিলোপের জন্য। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য বিলোপ এবং
দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই হবে তাঁর প্রতি আমাদের সর্বোত্তম শ্রদ্ধা নিবেদন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি অমলিন থাকুক, তাঁর কর্ম ও আদর্শ আমাদের পথচলার পাথেয় হোক।

আজ ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে। অন্নদাশঙ্কর রায়ের কবিতার সেই পঙ্‌ক্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান

ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনার এই শুভ মুহূর্তে জাতির এই মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।