সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ

দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যা বলেছেন, তা সরকারের ঘোষিত নীতির প্রতিধ্বনি হবে, সেটা স্বাভাবিক। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বছরের শুরুতে আহূত সংসদের অধিবেশনে ভাষণ দেন। এমনকি তাঁর বক্তৃতায় যে সরকারের সাফল্য ও কীর্তির কথা থাকবে, তা-ও কারও অজানা নয়।
এসব সত্ত্বেও এবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রেক্ষাপট আলোচনার দাবি রাখে। রাষ্ট্রপতি যখন তাঁর ভাষণে জনজীবনে স্বস্তি এসেছে বলে জানান, তখন দেশের অবস্থা কী? বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলছে। বাস-ট্রাকে আগুন দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে, অনেকেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এর বিপরীতে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার ও নিগৃহীত হওয়ার খবর রয়েছে। রাষ্ট্রপতি যখন উন্নয়নের দীর্ঘ তালিকা হাজির করছেন, তখন দেশের যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত অচল। তাই কোনোভাবেই বলা যাবে না যে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সরকারতবে রাষ্ট্রপতির ভাষণে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে, তার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। দেশের উন্নয়ন ও মানুষের মৌলিক সুরক্ষার জন্য গণতন্ত্রকেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতির ভাষণে এ প্রত্যয়ের পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের দিকনির্দেশনাও দেশবাসী আশা করছিলেন। সেটি এ কারণেও যে জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালে তিনি সরকারি ও বিরোধী দলের শ্রদ্ধা ও সমীহ আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংসদে সরকারের অনুমোদিত ভাষণ পড়ে থাকেন। কিন্তু এই সংসদেই সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ লিখিত বক্তব্যের বাইরে সরকার ও বিরোধী দলের সমঝোতার কথা বলেছিলেন। তাই দেশবাসী বর্তমান রাষ্ট্রপতির কাছেও সে রকম কিছু চাইছিলেন। সাংবিধানিক ক্ষমতা সীমিত হলেও রাষ্ট্রপতি পদটি সর্বোচ্চ সম্মানিত প্রতিষ্ঠান। তাঁর উদ্যোগ যদি চলমান সংকট নিরসনে সামান্য ভূমিকা রাখে, কেন তিনি নেবেন না?