শস্যদানা থেকে পলিথিন

ব্যবহারে পলিথিন কিন্তু প্লাস্টিকে তৈরি নয়, এমন ব্যাগই বর্তমান বাস্তবতায় সবচেয়ে দরকারি। এমন ব্যাগের চাহিদা মেটাতে বড় আকারের জৈব পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন করছে বাংলাদেশের একটি কোম্পানি। একুশ শতকে পরিবেশের জন্য একক বৃহত্তম হুমকি হয়ে ওঠা পলিথিন ও প্লাস্টিক থেকে মুক্তি জরুরি ছিল। বিশ্বব্যাপীই এটা নিয়ে কথা হচ্ছে, আন্দোলন ও জনসচেতনতাও হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হবে না, যদি না প্লাস্টিকের সহজ ও সস্তা বিকল্প মানুষকে দেওয়া না যায়। বাংলাদেশের গাজীপুরের এক্সপো অ্যাকসেসরিজ কোম্পানি সেই বিকল্প তৈরিতে হাত, তথা কারখানা লাগিয়ে অভিনন্দনযোগ্য কাজ করেছে। 

এক্সপো অ্যাকসেসরিজের এই শস্যদানা থেকে তৈরি ব্যাগ পরিবেশবান্ধব, নির্দিষ্ট সময়ের পর তা মাটিতে মিশে যায় এবং দেখতেও পলিথিনের মতো। কিন্তু তা তৈরি হচ্ছে শস্যদানা দিয়ে। এর আগে পাট দিয়ে পলিথিন তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি আলু থেকেও পলিথিন তৈরির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন আরেক বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক। কিন্তু পাটের পরে প্রথম শস্যদানা দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উপযোগী পলিথিন তৈরির ঘটনা আরও ইতিবাচক। ইতিমধ্যে কোম্পানিটি পোশাকশিল্পের মোড়কজাতকরণে এই নতুন ব্যাগের ব্যবহারে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে সোমবারের ডেইলি স্টার-এর এক সংবাদ। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্যের মোড়কে ইতিমধ্যে এর ব্যবহারও আরম্ভ করে দিয়েছে বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানা। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোই পরিবেশবান্ধব দ্রব্য ব্যবহারে খুবই উৎসুক। পরিবেশসচেতন ভোক্তা ও ক্রেতারাও এতে খুশি। সুতরাং ব্যবসা ও সর্বজনীন কল্যাণ, দুদিক থেকেই এই জৈব ব্যাগ এক উত্তম বিকল্প। 

বর্তমানে এই পলিথিন ব্যাগের দাম প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যাগের চেয়ে কিছু বেশি। তাই প্রধানত রপ্তানি পণ্যের সঙ্গেই এটার ব্যবহার হচ্ছে। এর সুফল পাচ্ছে বিদেশের মানুষ, যেহেতু এই ব্যাগ তাদের পরিবেশের জন্য উপকারী। কিন্তু বাংলাদেশে, যেখানে ঢাকাতেই প্রতিদিন দুই কোটির মতো পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হয়, সেখানে সব ক্ষেত্রে এই ব্যাগের ব্যবহার হওয়া দরকার। আরও কোম্পানিকে এই কাজে নিয়োজিত করা তাই দরকার। মানুষ যাতে ক্রমান্বয়ে এ ধরনের ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহী হয়, তার জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনা চাই। তার আগে চাই ২০০২ সালে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধে প্রণীত আইনের বাস্তবায়ন। বিকল্প যখন আছে তখন আর আইন অমান্যের সুযোগ দেওয়া চলবে না। দ্বিতীয়ত, পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরির উৎপাদন খরচ কমাতে সরকারের ভর্তুকি, কর রেয়াতের পাশাপাশি সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে প্লাস্টিকের ব্যাগ বাদ দিয়ে জৈব ব্যাগ ব্যবহারে অঙ্গীকারবদ্ধ করতে হবে। সেই কাজটা সরকারকেই আইন বাস্তবায়ন এবং নিবিড় নজরদারির মাধ্যমেই করে যেতে হবে।

২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রে মাছের চেয়ে বেশি হবে প্লাস্টিক বর্জ্য। বাংলাদেশের মাটি ও পানি ইতিমধ্যে প্লাস্টিকের অবশেষে নিদারুণভাবে দূষিত। আগামী প্রজন্মের জন্য এ রকম দূষিত পৃথিবী রেখে যাওয়া অন্যায়। তাই সরকারকে প্রথম ধাপে রপ্তানি পণ্যে, দ্বিতীয় ধাপে বাণিজ্যিক ব্যবহারে এবং তৃতীয় ধাপে সর্বস্তরে জৈব ব্যাগ ব্যবহারে দরকারি নীতিমালা ও বাস্তবায়নের কর্মসূচি নিতে হবে। নিশ্চয়ই মানুষের চেয়ে প্লাস্টিক ও তার ব্যবসা বড় নয়।