গেম অব থ্রোনস নয়, এটা গডফাদারের গল্প

ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

না, ব্রিটিশ রাজতন্ত্র কোনো সংকটে নেই। না, রাজকুমারেরা কোনো ধরনের পীড়নের শিকার হচ্ছেন না। না, সাসেক্সের ডিউক এবং ডাচেসও নিঃস্ব হতে যাচ্ছেন না। না, তাঁরা অরক্ষিতও হবেন না। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিগত কয়েক দিনের ঘটনাগুলো অন্য যেকোনো গণতন্ত্রের বেলায় অকল্পনীয় হলেও এ ক্ষেত্রে সত্যিই কিছু যায় আসে না। 

গোটা জাতি এখন একটি আংটায় আটকানো হয়েছে, অন্ততপক্ষে এর গণমাধ্যম তো বটেই। তবে দ্য রয়্যাল প্রেস কোর এবার তার অত্যন্ত প্রিয় গৎবাঁধা বুলি থেকে জনগণকে বঞ্চিত করতে চলেছে। যেমন যুদ্ধে লিপ্ত প্রাসাদত্যাগী রাজকুমার এক সুন্দরীকে বিয়ে করেছেন এবং রাজতন্ত্রের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছেন ইত্যাদি। কিন্তু গৎবাঁধা বুলিগুলো সব সময় বিবর্ণই হয়। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের এর চেয়ে খারাপ বিষয় সামলে নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।

রাজকুমার হ্যারি এবং মেগান যা ঘটিয়েছেন, তা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্যের পরিবারভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন ঘটনা ঘটেছে। দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠান খুব ভালোভাবেই চলে যতক্ষণ না কিছু কনিষ্ঠ সদস্য বাকি অংশের ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান। কারণ, এসব পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের মূল বিষয় নির্ভর করে তার উত্তরাধিকারের ওপর। অন্য কোনো কিছুর ওপর নয়। কোনো সদস্য যখন প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান, তখন তা হুমকির মুখে পড়ে। এতে বোঝা যায় রক্ত পানির চেয়ে ঘন। 

এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্যান্ড্রিংহাম শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটিশ রাজপরিবার যেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, ঠিক তেমন প্রতিক্রিয়াই দেখিয়েছে পরিবারভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বয়োজ্যেষ্ঠরা সাধারণত গাদাগাদি করে থাকতে, অর্থাৎ পরিবারের সবাইকে নিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকতে ভালোবাসেন এবং যাঁরা এর ব্যত্যয় ঘটান, তাঁদের ভয়ংকরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এটি গেম অব থ্রোনস নয়। এটা হচ্ছে গডফাদার গেম। আপনি একটি ‘পরিবারের’ অর্ধেক হতে পারবেন না এবং যখন আপনি বের হয়ে যাবেন, তখন আপনাকে বাইরেই থাকতে হবে। 

আপনার জনসংযোগ কর্মকর্তাদের পরামর্শে আপনি অবশ্যই যা করতে পারবেন না তা হলো, রাজক্ষমতা বা রাজকীয় মর্যাদার নতুন ধারণা তৈরি করা, যার সঙ্গে বিদ্যমান ধারণার কোনো সম্পর্ক নেই। অন্ততপক্ষে আপনি নিজে থেকে এটি করতে পারেন না। কেননা, এর ফলে পরিবারে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, তা নিশ্চয়ই আপনার কাম্য নয়। আর এসব কারণে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান খুব কমই দুটি প্রজন্মের পরে সাধারণত আর টেকে না। আমি নিশ্চিত যে সাসেক্সরা সফল হবেন এবং তাঁদের সামনে যে ভবিষ্যৎ রয়েছে, তা সমৃদ্ধিশালী হবে। অবশ্য তাঁদের এ পরিকল্পনা করা উচিত ছিল যখন তাঁরা প্রেমিক–প্রেমিকা থেকে বৈবাহিক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে এখনো তাঁদের কোনো উদ্বেগের কারণ নেই। তাঁরা দুজনই খ্যাতিমান। এমনকি টরন্টোর শহরতলিতে বা মালিবুর সৈকতে সংসার করা শুরু করলেও তা তাঁদের জন্য ভালোই হবে। তাঁদের অবশ্যই সুরক্ষা প্রয়োজন, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সেলিব্রিটির মতো তাঁদেরও কিছু বিষয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। 

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের জন্য এর মধ্যে কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। রাজতন্ত্র বা রাজপরিবার সম্পর্কে সবার মধ্যে যে ধারণা আছে, তা অনেকটা অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশা। মানুষ যা যা ভাবে রাজপরিবার সম্পর্কে, যেমন রাজপরিবার খুব প্রগতিশীল বা উদার—তার অনেক কিছুই বাস্তবে নেই। রাজপরিবার সম্পর্কে সবার ধারণা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তবে যদি কোনো বৈশিষ্ট্য এটির জন্য প্রযোজ্য হয়, তবে বলতে হবে এর কোনো একক ‘থিম’ বা একটি নির্দিষ্ট ‘চরিত্র’ থাকতে পারে না। রাজতন্ত্র বেঁচে থাকে, কারণ এটি তাৎপর্যপূর্ণ নয়, প্রভাবশালী নয়, এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যও নয়। এটা মানবরূপে রাষ্ট্রের কল্পনার মূর্ত প্রতীক। এর প্রকৃতি সম্পর্কে তর্ক করুন বা একে কোনো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তুলনা করুন—যা–ই করুন না কেন, এর সবই এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। 

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
সাইমন জেনকিনস দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার কলামিস্ট