ভোলায় মহাসড়কের পাশে স্কুল

ছোট ছোট শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় হওয়া উচিত নিরাপদ ও নিরিবিলি পরিবেশে, মহাসড়ক থেকে দূরে; যেখানে তারা নির্বিঘ্নে পাঠ নিতে পারবে এবং নিরাপদে আসা-যাওয়া করতে পারবে। কিন্তু জনবহুল এই বাংলাদেশে সেটি প্রায়ই হয় না। অনেক স্থানে হাটবাজার ও সড়ক-মহাসড়কের পাশে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর সেসব সড়কে বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণেও সমস্যা হয়।

তবে ভোলা সদর উপজেলার গুপ্তমুন্সি কোব্বাত আলী হাওলাদার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই বরিশাল–ভোলা–চট্টগ্রাম মহাসড়কটি এমনভাবে বাঁক নিয়েছে, যা খুবই বিপজ্জনক। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। ২০১৯ সালে এ সড়কে বিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী ছোট–বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তারের হাঁটু থেঁতলে যায়।

প্রথম আলোর ভোলা প্রতিনিধি সরেজমিনে দেখেছেন, সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে ওই বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে বরিশাল–ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি অনেকটা ‘দ’-এর আকৃতির মতো আঁকাবাঁকা। তাই পশ্চিম কিংবা পূর্ব দিক থেকে সড়কে দাঁড়িয়ে বিদ্যালয়টি দেখা যায় না। এমনকি দূর থেকেও বিদ্যালয়ের সামনের অংশও দেখা যায় না। সাধারণত বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে গতিরোধক থাকে। কিন্তু এখানে সেটিও নেই। নেই সতর্কীকরণ ফলকও। অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত স্বল্প ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করে থাকে। যেখানে গতিরোধক থাকলেও যানবাহনের চালকেরা সেটি অগ্রাহ্য করেন, সেখানে গতিরোধক চিহ্ন না থাকলে কী অবস্থা তৈরি হয়, অনুমান করা অসম্ভব নয়।

১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২২৬ জন শিক্ষার্থী আছে। দুই পালায় পাঠদান চলে। বিদ্যালয়ের কাছে মহাসড়কে বাঁক থাকায় শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে না যানবাহনটি কত দূরে আছে। ইউপি সদস্য আবদুর রহমান জানিয়েছেন, সন্তানদের পাঠিয়ে অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তায় থাকেন। এ ছাড়া চালকেরা জোরে হর্ন বাজানোর কারণে অনেক সময় শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন, তা–ও শুনতে পারে না।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ভোলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রাসেল ওই মহাসড়কে ট্রাফিক সিগন্যালসংবলিত খুঁটি ও সতর্কীকরণ চিহ্ন বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এত দিন কাজ কেন হলো না? এক বছরে একই বিদ্যালয়ের ছয় শিশুশিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের চৈতন্যোদয় না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পে শিশুর শিক্ষা ও নিরাপত্তা যে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত সেই সরল সত্যটিও তঁারা ভুলে গেছেন। অবিলম্বে বিদ্যালয়ের দুই দিকে মহাসড়কে গতিরোধক ও সতর্কীকরণ ফলক বসানো হোক।