মৃতপ্রায় শতবর্ষী পুকুর

ফরিদপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও ইজারাদারদের কবলে পড়ে শতবর্ষী একটি পুকুর যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রায় ১৫ বছর আগে পুকুরের উত্তর ও পূর্ব পাড়ের কিছু অংশ ফরিদপুর পৌরসভা পাঁচজনকে ইজারা দেয়। তাঁরা সেখানে টিনের ঘর থেকে শুরু করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। যদিও ইজারার শর্ত অনুযায়ী, কংক্রিটের ছাদ দেওয়া ভবন নির্মাণ করা নিষেধ। দেড় বছর আগে পুকুরের পাড়ের বাকি অংশ আরও ১২ জনকে ইজারা দেওয়া হয়। তাঁরাও সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। পশ্চিম পাশেও রয়েছে কিছু স্থাপনা। যদিও পৌর কর্তৃপক্ষ পুকুরের ওই স্থান ইজারা দেয়নি। মোট কথা, পুকুরটির চারদিকেই এখন স্থাপনা, আর কোনো খালি জায়গা নেই। জনসাধারণের জন্য সেখানে প্রবেশের পথ নেই। এ ছাড়া পুকুরটি কচুরিপানায় এতটাই পরিপূর্ণ যে ওপর থেকে পানি দেখা যায় না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এভাবে পুকুরের পাড় ইজারা দিতে পারে কি না। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বোঝাই যাচ্ছে, ফরিদপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এখানে আইন লঙ্ঘন করেছে। পৌরসভা নিজেদের আয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইজারা বা ভাড়া দিতে পারে। কিন্তু সেই সুযোগে যাচ্ছেতাই করার সুযোগ নেই। পুকুরপাড় ইজারা দিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি তদারকি না করে ফরিদপুর পৌরসভা বিবেচনা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়নি। তা ছাড়া, তারা দীর্ঘদিন পুকুরটি খননও করেনি। সর্বশেষ খনন হয়েছিল ২৫ বছর আগে। অথচ এটা করা পৌরসভার অন্যতম একটি দায়িত্ব। পুকুর খনন না করায় এটা দিনে দিনে মজা পুকুরে পরিণত হয়েছে। আগে এলাকার লোকজন এই পুকুরে গোসল করত। এখন আর সে উপায় নেই।

যেকোনো এলাকায় পুকুর, খাল থাকাটা খুবই জরুরি। এগুলো বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে এলাকাকে রক্ষা করে। দেশে একসময় প্রচুর জলাধার, পুকুর ও খালবিল ছিল। কিন্তু দখলবাজদের আগ্রাসনের কারণে অনেক পুকুর ও খাল আজ বিলীন হয়ে গেছে। নিজেদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই এসব জলাধার আমাদের রক্ষা করতে হবে।

ফরিদপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উচিত শতবর্ষী ওই পুকুরপাড়ের জমির ইজারা বাতিল করে তা খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এলাকাবাসী যাতে পুকুরে গোসলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে পুকুরের পানি ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা।