মুজিব বর্ষ উদযাপন নিয়ে কিছু কথা

মুজিব শতবর্ষ
মুজিব শতবর্ষ

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ১০ জানুয়ারি থেকে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে 

১৭ মার্চ ২০২১, অর্থাৎ জাতির পিতার এক জন্মদিন থেকে আরেক জন্মদিন পর্যন্ত বছরটি উদ্‌যাপিত হবে মুজিব বর্ষ হিসেবে। সে হিসাবে ক্ষণগণনার দিনক্ষণ থেকে মুজিব বর্ষ শুরু হতে বাকি ছিল ৬৮ দিনের কিছু বেশি।

তবে এর আগেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রথম ইভেন্টটি শুরু হয়ে গত শুক্রবার শেষ হয়েছে। সেটি হলো বঙ্গবন্ধু বিপিএল। এটি বিসিবি আয়োজিত বাংলাদেশ ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। এ নিয়ে দুটি কথা বলার আগে বলে নিতে চাই যে যিনি জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃত, বিবিসি জরিপে জনপ্রিয় ভোটে যিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দেশের স্বাধীনতার জন্য, যাঁর কর্ম ও অবদান সারা বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি আদায় করেছে, যাঁর অন্তত একটি ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করেছে, যাঁর প্রতি বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্রনায়ক ও মনীষী শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন, তাঁর শতবর্ষ উপলক্ষে সব আয়োজনে সেই উচ্চতা, মান ও মর্যাদা রক্ষা হওয়া উচিত।

ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হলো ক্রিকেটের একটি বাণিজ্যিক এবং বিনোদনের সংস্করণ। যেকোনো খেলাতেই পেশাদারি থাকুক, সেটা সবারই কাম্য। কিন্তু যে টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়দের নিলামে তোলা হয় এবং সবার লক্ষ্য থাকে অর্থপ্রাপ্তি ও বাজেটের দিকে, এককথায় যেখানে খেলাটির লক্ষ্য একমাত্র বাণিজ্য এবং নিছক চার-ছক্কার বিনোদন, সেটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে, তা সংশ্লিষ্টদের ভাবতে বলব। তার ওপর এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল আকর্ষণ হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন বলিউডের সাম্প্রতিক কালের দুই গায়ক। বঙ্গবন্ধু যে জনগণের হৃদয়জয়ী নেতা, অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। এমন অনুষ্ঠানে কেন মুম্বাইয়ের শিল্পী! যদি সেখানকার কোনো কিংবদন্তি শিল্পীর আগমন ঘটত, তবে একটা কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে দেশের কিংবদন্তিরাও উপেক্ষিত হলেন, আবার অনুষ্ঠানটিও না মানে, না উপস্থিতিতে উতরাল। এটি বঙ্গবন্ধুর প্রতি সুবিচার হয়নি।

কিন্তু আমি যত দূর জানি, বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে আরও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও বিভিন্ন খেলার টুর্নামেন্ট রয়েছে, যেগুলো আশা করছি উপলক্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আয়োজিত হবে। যেভাবে এ বছরের বিপিএলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে এর দেখাদেখি অনেক সংস্থাই না আবার নিজ নিজ নিয়মিত আয়োজনের আগে বঙ্গবন্ধুর নামটা জুড়ে দেয়, সেটা ভয়ের ব্যাপার। এই সূত্রে ক্ষণগণনার কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠানের আলোকে এবং একটি কমিটির সদস্য হিসেবে দু-তিনটি প্রস্তুতি সভায় উপস্থিতির অভিজ্ঞতার আলোকে দু-একটি কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। সম্ভবত ১০ জানুয়ারি ক্ষণগণনার অনুষ্ঠানের চিন্তাটা পরে এসেছে, মনে হয় এটি ছিল তাড়াহুড়ার আয়োজন। জেলা পর্যায়ে এ ধরনের জরুরি আয়োজন সফল করার জন্য সহজ কৌশল হলো প্রশাসনিক নির্দেশনায় স্কুল-কলেজের, বিশেষত স্কুলের, ছাত্র-শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমির সাংস্কৃতিক দলের অনুষ্ঠান আয়োজন। তা ছাড়া আজকাল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকদের কী করণীয় কিংবা ক্ষণগণনার আনুষ্ঠানিকতা কেমন হওয়া উচিত বা বিপুল মানুষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কীভাবে উপভোগ করবে, এ নিয়ে তেমন প্রস্তুতি ছিল না, আদতে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছিল না। অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত কয়েক হাজার মানুষের জটলা—আনুষ্ঠানিকতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়তো গণমাধ্যমের প্রয়োজন মিটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষণগণনার অনুষ্ঠানে উপস্থিত দু-একজনকে জিজ্ঞেস করে মনে হলো না তাঁরা এ অনুষ্ঠানের তাৎপর্য সম্পর্কে কোনো বার্তা পেয়েছেন।

তবে একটি কমিটির প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত হয়ে দেখেছি, বছরের অনুষ্ঠানমালার ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মূল কমিটির সদস্যসচিব নিশ্চয় তাঁর কবিত্বশক্তি ও আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা-অভিজ্ঞতার মিশেল ঘটিয়ে এর বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট ভেবেছেন ও কাজ করেছেন। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবু একটু মৃদুস্বরে বলতে চাই, সুপরিকল্পিত ছক অনুযায়ী সরকারি বাজেট বরাদ্দের ফলে বছরজুড়ে যে বিপুলসংখ্যক অনুষ্ঠান হবে, মনে হচ্ছে তার সম্পূর্ণ না হলেও অনেকটাই পরিচালিত-নিয়ন্ত্রিত হবে সরকারি লোকজনের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধনীতে, যেমন ক্ষণগণনার কেন্দ্রীয় ও জেলা অনুষ্ঠানে, জনগণ ছিল দর্শকমাত্র, এগুলোর পরিণতিও তেমনটাই হবে না তো!

সবিনয়ে একটি কথা বলে রাখা দরকার। আমি খুঁত ধরার বা সমালোচনার মানসিকতা থেকে এমন কথা বলছি না। পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পরে যখন রাজনীতিবিদেরা জেলে বা পলাতক থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন থেকে সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে মাঠে থেকেছি, আবার দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নেওয়া উচিত মনে করে দলটির পক্ষে কিছুটা পক্ষপাতমূলক কলাম লিখেছি। স্বাধীনভাবে কাজটি করার জন্য চাকরিও ছেড়েছি। নিজের কথা বলব না। কথা হলো বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, তাঁর জীবন ও কর্মের তাৎপর্য ও মহত্ত্ব বিভিন্ন টুর্নামেন্ট বা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম, এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের নবীন কর্মীরা কীভাবে বুঝবেন? তাঁদের মনে তিনি আনন্দ-বেদনা, গর্ব-মর্যাদায়, আদর্শে-প্রেরণায় কীভাবে গাঁথা হবেন! অনুষ্ঠান-উৎসবে বছর শেষে সাধারণ মানুষ, বিশেষত নবীন প্রজন্মের মনে কী বার্তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে?

বঙ্গবন্ধু সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী থেকে ইতিহাসের মহানায়কে পরিণত হওয়ার কোনো পর্যায়েই তাঁর সব শক্তির উৎস গণমানুষের সান্নিধ্য থেকে দূরে সরেনি। জনতা ও নেতার এই রসায়ন ও এই বন্ধন কেবল মুখে প্রকাশ করার বিষয় নয়, এটি জীবনযাপনের অঙ্গীভূত বিষয়। সেই জনগণের অংশগ্রহণ কোথায়? তাদের কেবল দর্শক-শ্রোতা বানিয়ে রেখে তাদের নেতা শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন যথাযথ হয় কি?

আমি জানি জন অংশগ্রহণের দাবি তোলা সহজ, কিন্তু বাস্তবায়ন কঠিন। বর্তমান আওয়ামী লীগের জন্য কাজটা আরও কঠিন। নেতাদের মনে রাখতে হবে এর মধ্যে তাঁদের দল ক্ষমতায় রয়েছে ১১ বছর ধরে। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক নতুন নেতা এবং ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে অসংখ্য নেতা-কর্মী তাঁদের দলের, বস্তুত ক্ষমতাসীন দলের, জাহাজের যাত্রী হয়েছেন। এঁরা দলকে ক্ষমতায় দেখে অভ্যস্ত, ক্ষমতার সুযোগ-সুবিধা ভোগে অভ্যস্ত, তাঁরা ত্যাগ ও কষ্ট, সংগ্রাম ও আন্দোলনের কথা শুনেছেন, বক্তৃতায়ও হয়তো বলে থাকেন, কিন্তু এ তো কেবল ধারণা করার বিষয় নয়, এ তো অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়। তাঁদের সেটা ঘটেনি। ফলে এমন নেতা-কর্মী বাহিনীর ওপর নির্ভর করে অনুষ্ঠান করতে গেলে ক্ষণগণনার অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে উপদলীয় কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জায়গায় জায়গায়, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা প্রবল। আর অন্যের দেখাদেখি সারা দেশে বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থা লোকদেখানো অনুষ্ঠানে নেমে পড়বে বলে ভয় হয়।

কিন্তু এই আশঙ্কার কারণে বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ কি সরকারের, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আওতায় এবং প্রধানত আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণেই পালিত হবে? কিংবা এটা কি কেবল আওয়ামী লীগের দলীয় কাজ? তেমনটা হওয়া কি ঠিক? অতিরিক্ত আমলানির্ভরতার ফল কী হয়, তা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন আমাদের বুঝিয়ে ছেড়েছে। ফলে একটা বিকল্প পথ তো ভাবা উচিত, যা হবে জনগণের মুজিব ভাই, জনগণের শেখ মুজিব, পরবর্তীকালে আদরের-সম্মানের ডাক বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সাধনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

আমার বিনীত প্রস্তাব হলো, বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু সমমনাদের নিয়ে সর্বদলীয় কমিটি গঠন করেছেন। শেখ হাসিনাও ২০০৮-এর নির্বাচনের সময় এবং এর আগেও জোট গঠন করেছেন। কিন্তু ক্ষমতায় দল যতই পাকাপোক্ত হচ্ছে, ততই যেন জোটের গুরুত্ব লাঘব হচ্ছে। দলেও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চেপেই জোটভুক্ত অন্যদের পক্ষে নির্বাচনে বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে, তা ঠিক। কিন্তু রাজনীতি কেবল নির্বাচনী বিজয়ের হিসাব নয়। এ অনেকটাই দাবা খেলার মতো, বিভিন্ন ঘুঁটির শক্তিতে, ভূমিকায় তারতম্য আছে, কিন্তু কোনোটাই বেদরকারি নয়। আরেকটি উপমা হতে পারে বড় বড় উপকরণ জোড়ার ক্ষেত্রে আঠার ভূমিকা। বড় কাঠের তুলনায় আঠা সামান্য জিনিস কিন্তু তা জোড়া লাগিয়ে কার্যকর করার জন্য অপরিহার্য। আজ সমাজে রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে সংকট গভীরতর হয়েছে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকে থাকার হিসাব কষে চলতে হবে তা মানি, কিন্তু তাতে এ সংকট কাটবে না। এমনকি ঘনীভূতই হতে পারে। তাই আজ সমাজে এমন একটি রাজনৈতিক বাতাবরণ তৈরি হওয়া জরুরি, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথকে সত্যিই সুগম করবে, সে কাজের পথের বাধা দূর করবে। আজ যতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের গীত গাওয়া হোক না কেন বাস্তবে নানা কারণে এই চেতনা কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ হারিয়ে যেতে বসেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ হতে পারে সেই চেতনায় জনগণের জাগরণের এবং তাদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার উপলক্ষ। জামায়াত নিশ্চয়ই এর বাইরে থাকবে, বিএনপি ও তাদের জোটও হয়তো তাই, কিন্তু এর বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়েই বঙ্গবন্ধুকন্যার উচিত হবে হারানো এবং হারতে বসা চেতনা পুনরুদ্ধারে মুজিব বর্ষকে কাজে লাগানো। মনে রাখা দরকার, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রবাসী সরকারের ওপরে সমমনা নেতাদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছিল। তা নানাভাবে কার্যকরী ভূমিকাও পালন করেছিল।

আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠিত হওয়া উচিত, যেমনটা ঘটেছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেই আদলে জেলায় জেলায় কমিটি হতে পারে। তারাই জনসম্পৃক্ত অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করতে পারবে। আর নাগরিক সমাজ সর্বদলীয় কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের আয়োজনগুলো করতে পারে। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের মূল দায়িত্ব হবে সহযোগিতা করা। একইভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নিজ উদ্যোগে স্কুলের পরিসরে অনুষ্ঠান আয়োজন করুক। এর একটা দিকনির্দেশনা থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে। আর একটি কথা ভাবা জরুরি, সরকার যদি সব অনুষ্ঠানের সবটা বাজেটের জোগানদারের ভূমিকা নেয়, তাহলেও ঠিক হবে না। এতে আয়োজনের প্রতি নিষ্ঠা, ভালোবাসা, আন্তরিকতার অভাব ঘটে যাবে। অতীতে সব আয়োজন রাজনৈতিক-সংস্কৃতিকর্মীরা চাঁদা তুলে করেছেন। আমি জানি আজ চাঁদা সহজেই চাঁদাবাজিতে পরিণত হয়। সে বিষয়ে সতর্ক থেকেই জনগণের নিজস্ব উদ্যোগের পথ খোলা রাখা উচিত। নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ধরনের আয়োজনের পরিকল্পনা, কর্মসূচি ও বাজেট সর্বদলীয় কমিটির সংশ্লিষ্ট শাখা কমিটির কাছ থেকে অনুমোদনের শর্ত থাকতে পারে। সরকারি বাজেটের অনুষ্ঠানের চেয়ে এতে বেশি দুর্নীতি এবং অপচয় হবে না বলেই মনে করি। ফলে আমি বলব সরকার মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানমালার জন্য যে কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছে, তা থেকেই মূলত শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রত্যেককে আয়োজন অনুযায়ী কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিলে বাকিটা তারা নিজেরাই ব্যবস্থা করবে। অতীতে বাংলাদেশ যখন ছিল গরিব মানুষের দেশ, তখন অনেক বড় বড় কাজ সাধন করতে পারলে আজ যখন কিনা সত্যিই আমাদের রাষ্ট্রীয় এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে কয়েক গুণ, তখন কেন পারব না।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রাষ্ট্রক্ষমতার আয়োজনে উদ্‌যাপিত হবে, নাকি জনতার সার্বিক অংশগ্রহণে হবে, সেটা ভাবার বিষয়।

আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক