কী ঘটতে চলেছে রাশিয়ার রাজনীতিতে?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এএফপি ফাইল ছবি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এএফপি ফাইল ছবি

রাশিয়ায় এখন একটি নতুন সরকার। খুবই কৌশলগতভাবে এ সরকার গঠন করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিক সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়ে তা গণভোটে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং এরপরই প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের গোটা মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। পদত্যাগের পর মেদভেদেভ বলেছেন, ‘আমাদের দেশের প্রেসিডেন্টকে প্রয়োজনীয় সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিন। প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবগুলো রাশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করবে।’

পুতিনের এ ধরনের পদক্ষেপে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখন রাশিয়ায় জনগণের মধ্যে এ জল্পনাকল্পনা চলছে যে ২০২৪ সালের পরও যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারেন, সে জন্যই পুতিন সংবিধান পরিবর্তনের এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, টানা দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকা যায় না। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিনের মেয়াদ যখন শেষ হবে, তখন তাঁর বয়স হবে ৭১। কিন্তু প্রচলিত আইন অনুযায়ী, ৭১ বছর বয়সী কোনো নেতার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের বিধান নেই। এ জন্য রুশ সংবিধান পরিবর্তনের এই চেষ্টা পুতিনের। যদিও পুতিনের দাবি, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে সরকারপদ্ধতির পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

পুতিন যে কিছু একটা করবেন, তা আগে থেকেই অনেকে অনুমান করছিলেন। তবে এটা স্পষ্ট ছিল না যে তিনি সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব দেবেন। পুতিন ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন, জোসেফ স্তালিনের পর তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাশিয়ার শাসক হিসেবে রয়েছেন। এবং এই ২০ বছর ধরে তিনিই রাশিয়ার রাজনীতিতে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন।

প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কারগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ মাত্র দুটিতে সীমিত করা (এখন পর্যন্ত, এই সীমা পরপর দুই মেয়াদ); এ ছাড়া আর যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ভবিষ্যতে রুশ প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৫ বছর ধরে সে দেশে থাকতে হবে; প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা নিয়োগের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে নয়, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের হাতে থাকবে; নিরাপত্তা–সম্পর্কিত সরকারি পদগুলোর প্রধানকে নিয়োগ করার ক্ষমতা থাকবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের হাতে; স্টেট কাউন্সিলের হাতে (এমন একটি সংস্থা, যা দেশের নির্বাহীদের পরামর্শ দিয়ে থাকে) আরও ক্ষমতা দেওয়া হবে।

পুতিনের চূড়ান্ত খেলাটি কী হবে, তা আমরা এখনো জানি না। তাঁর কাছে প্রচুর বিকল্প রয়েছে—তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফিরে আসতে পারেন, তাঁর ইউনাইটেড রাশিয়া দলের প্রধান হিসেবে থাকতে পারেন বা নতুন ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্টেট কাউন্সিলের প্রধান হতে পারেন। কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুর সুলতান নাজারবায়েভ ক্ষমতায় থাকার জন্য এ রকম নানা কিছু করেছিলেন। কেউ কেউ এমনটাও বলছেন যে পুতিন যৌথ রাশিয়া-বেলারুশীয় ইউনিয়নের শাসক হবেন, যা নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত অবস্থান যা–ই হোক না কেন, পুতিন নিশ্চিত করেছেন যে ২০২৪ সালের পর তিনি যে পদেই থাকুন না কেন, তিনিই দেশের প্রধান রাজনৈতিক চালক হিসেবে থাকবেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ হতে পারবেন না।

দিমিত্রি মেদভেদেভকে ইতিমধ্যে ক্রেমলিনের নিরাপত্তা কাউন্সিলে (আরেকটি পরামর্শক সংস্থা) ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
পুতিন এ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। অনেক পর্যবেক্ষক এ পদে মেদভেদেভের নিয়োগের কারণে তাঁকে প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করছেন। কেননা, প্রতিরক্ষা এবং বিদেশনীতির বিষয়ে কথা বলার আরও ক্ষমতা তাঁকে দেওয়া হয়েছে (যদিও উভয় বিষয়ে চূড়ান্ত কথা বলার অধিকার পুতিনেরই রয়েছে)। মেদভেদেভের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়া শাপেবর হয়েছে বলা যায়। কারণ, এমনিতেই নানা অজনপ্রিয় পরিকল্পনা নিয়ে তিনি দেশের ভেতরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে পেনশন সংস্কার পরিকল্পনা। নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়াটা মেদভেদেভের জন্য তাঁর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের একটা সুযোগ।

মেদভেদেভের স্থলে দেশটির কর পরিষেবার সাবেক প্রধান মিখাইল মিশুসতিনের নিয়োগ পার্লামেন্ট ইতিমধ্যে অনুমোদন করেছে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেছেন। তবে মিশুসতিনকে পুতিনের উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছে না। এমনকি তাঁকে পুতিনের প্রেসিডেন্সির মেয়াদকালের শেষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দেখা হচ্ছে না; অন্য কাউকে এ পদে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এখন এবং ২০২৪ সালের মধ্যে অনেক কিছু ঘটতে পারে। সম্ভবত রাশিয়ার রাজনীতির একমাত্র নিশ্চিত বিষয় হলো এখন এবং ২০২৪ সালের মধ্যে অনেক কিছু ঘটবে।

টাইম থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
আয়ান ব্রেমার: টাইম পত্রিকার সাংবাদিক ও কলামিস্ট