সেন্ট মার্টিনে প্লাস্টিক বর্জ্য

দেশে একটিই মাত্র প্রবালদ্বীপ আছে। সেটি সেন্ট মার্টিন। এটির আয়তন মাত্র ৩৬ বর্গকিলোমিটার—সুনির্দিষ্টভাবে এই তথ্য হয়তো সবার জানা নেই, কিন্তু দ্বীপটি যে খুবই ছোট এবং সৈকতে প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য ফেলা যে দ্বীপটির জন্য সাংঘাতিক ক্ষতির কারণ, তা মোটামুটি সব পর্যটকই জানেন। পরিতাপের কথা, এরপরও এই দ্বীপে নির্ধারিত জায়গায় প্লাস্টিকসামগ্রীসহ অন্যান্য বর্জ্য ফেলার চর্চা প্রায় নেই।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেন্ট মার্টিনের মাত্র দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে দেড় ঘণ্টায় ১২০ কেজি (৩ মণ) প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন। এর বেশির ভাগই ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য কাপ, প্লেট ও চিপসের খালি প্যাকেট। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্পর্শকাতরতা সম্পর্কে যাঁদের সামান্যতম ধারণা আছে, তাঁরা এই খবরে শিউরে উঠবেন।

‘গো গ্রিন’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে পরিচ্ছন্নতায় যোগ দিয়ে শিক্ষার্থীরা এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পান। গো গ্রিন হচ্ছে প্রকৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেচার কনজারভেশন ক্লাবের একটি কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষাসফরের আওতায় এই কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা তিন দিন অবস্থান করে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালান।

নেচার কনজারভেশন ক্লাব বলছে, দ্বীপটির পূর্ব সীমানার মাঝামাঝি অংশের দেড় কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা অপচনশীল দ্রব্য, যেমন নাইলন বা প্লাস্টিক দ্রব্যের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। নাইলন ও প্লাস্টিকজাত চিপস প্যাকেট, চায়ের কাপ, বোতল, পানির বোতল, পানির গ্লাস, প্লেট, ডাবের পানি খাওয়ার স্ট্র, খাবার প্যাকেট, ভাঙা চশমা বা কাঠি, মাছ ধরার জালের টুকরা, নাইলন দড়ির টুকরা ছাড়াও পোড়ামাটি ও ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া যায়। দেড় ঘণ্টায় মোট প্লাস্টিক বর্জ্য সংগৃহীত হয় ১২০ কেজি। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭৮ কেজিই ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক।

এই দলটি পরিচ্ছন্নতা অভিযান শেষে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তারা বলেছে, এই প্রবালদ্বীপের প্রতিবেশ রক্ষায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা একেবারেই নেই। অর্থাৎ এ দ্বীপটি যতটা মূল্যবান, সে অনুযায়ী একে মূল্যায়ন করার যোগ্যতা পর্যটকেরা বা স্থানীয় লোকজন এখনো অর্জন করতে পারেননি। এ কারণেই শিক্ষিত-অশিক্ষিতনির্বিশেষে সবাই প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট জায়গায় না রেখে যেখানে–সেখানে ফেলে চলে যাচ্ছেন।

দ্বীপটিকে পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রচারাভিযান নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। তবে শুধু প্রচারাভিযান দিয়ে দ্বীপটিকে বাঁচানো যাবে না। প্রশাসনকে এ বিষয়ে এখনই কঠোর হতে হবে। দ্বীপটিতে যাওয়া অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদেরও এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদাহরণ অনুসরণ করা দরকার। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করা গেলে প্লাস্টিক বর্জ্যের মতো নীরব ঘাতকের হাত থেকে দ্বীপটি রেহাই পেতে পারে।