প্রতিক্রিয়া: 'একজন ধীমানদা ও উপাচার্যের ব্যাটিং'

ক্রিকেট ব্যাট হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান
ক্রিকেট ব্যাট হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান

একজন ধীমানদা ও উপাচার্যের ব্যাটিং’ নামের একটি উপসম্পাদকীয় ১০ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। লেখক প্রথম আলোর সিনিয়র সহসম্পাদক সারফুদ্দিন আহমেদ। উপাচার্য ক্রিকেট ব্যাট হাতে নিয়ে বল মারার চেষ্টা করছেন, এমন একটি ছবির সমালোচনা করা হয়েছে এই লেখায়।

উপাচার্য এ কাজ করেছিলেন শিক্ষকদের পূর্বনির্ধারিত একটি খেলার উদ্বোধন ঘোষণা করতে গিয়ে। প্রসঙ্গত, সে সময় এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলছিল। লেখকের মূল প্রশ্ন ছিল, এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্য ক্রিকেট খেলার উদ্বোধন করতে পারেন কি না। প্রতিটি ঘটনার একটি প্রেক্ষাপট থাকে। ঘটনার পূর্বাপর, তার আনুষঙ্গিক পরিস্থিতি ও ‘কনটেক্সট’ বিবেচনায় না নিয়ে ‘জাজমেন্টে’ গেলে ভুল ডিসকোর্স তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। খেলার ছবিটি ঘিরে লেখক একটি কল্পকাহিনি সাজিয়েছেন।

উপাচার্য নিজে ধর্ষণের বিচার চেয়েছেন। তিনি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। সার্বক্ষণিক তদারক করেছেন, শিক্ষকদের মানববন্ধনে যোগ দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া ধর্ষণের শিকার মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কিন্তু ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেনি। এমন এক প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের পূর্বনির্ধারিত একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে উপাচার্যের ব্যাট হাতে নেওয়াকে খুব নেতিবাচকভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

তদুপরি লেখক লিখেছেন, ‘বিনোদনের বাইরেও যে অন্য উদ্দেশ্যে ক্রিকেট খেলা হয়, তা প্রথম ব্যাট হাতে দেখিয়ে দিয়েছিলেন বিএনপির নেতা তারেক রহমান।’ লেখক খুবই অযাচিতভাবে এখানে তারেক রহমানের জীবনের একটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। দুটি ঘটনার মধ্যেই ক্রিকেট আছে—এ ছাড়া আর কোনো মিল নেই।

লেখক প্রশ্ন রেখেছেন, মেয়েটি যদি উপাচার্যের নিজের মেয়ে হতেন, তাহলে কি তিনি এভাবে বল-ব্যাট নিয়ে মাঠে পড়ে থাকতে পারতেন? এই প্রশ্ন অবান্তর। উপাচার্য মাঠে পড়ে ছিলেন না। তিনি কেবল প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন। শিক্ষকদের খেলার উদ্বোধন কি ধর্ষণের শিকার মেয়েটির প্রতি আদৌ কোনো উপেক্ষা প্রমাণ করে?

ওই দিন উপাচার্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও খেলাধুলাসংক্রান্ত আরও কয়েকটি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন, গবেষকদের কয়েকটি ওয়ার্কশপ উদ্বোধন করেছেন। শিক্ষার্থীরাও তাঁদের ক্লাস ও পরীক্ষা অব্যাহত রেখেই ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়েছেন। লেখক যেভাবে নিজের শৈশবের কোথাকার কোন ধীমানদার সঙ্গে তুলনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছেন, তা খুবই দৃষ্টিকটু। 

আবুল মনসুর আহাম্মদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক