মেয়র পদপ্রার্থীর ওপর হামলা

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনী প্রচারে উত্তাপও তত বাড়ছে। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারকাজ চালাবেন, ভোট চাইবেন এবং ভোটারদের কাছে সিটি করপোরেশন নিয়ে তাঁদের চিন্তাভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাবেন, এটাই স্বাভাবিক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে মতভেদ থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা কোনোভাবেই হামলায় রূপ নিতে পারে না। 

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার ঢাকা উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যখন গাবতলী এলাকায় প্রচারকাজ চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর ওপর হামলা হয়। তাবিথ আউয়ালের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সমর্থক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মুজিব সারোয়ারের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সারোয়ার এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেননি। তাঁর দাবি, ‘যদি বাইরের লোক পোস্টার ছিঁড়ে অশ্লীল স্লোগান দেয়, এটা তো কেউ সহ্য করবে না।’ এর মাধ্যমে তিনি প্রকারান্তরে হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ঘটনা তদন্তের নির্দেশে দিয়েছে। কিন্তু সেই তদন্তে কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সারোয়ারের বক্তব্য আমলে নেওয়া হবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। 

সত্যি সত্যি যদি কেউ পোস্টার ছেঁড়ে কিংবা অশ্লীল স্লোগান দেয়, কাউন্সিলর প্রার্থী বা তাঁর সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা চালাতে পারেন না। এ রকম ঘটনা ঘটলে এর প্রতিকারের পথ হচ্ছে আইনের আশ্রয় নেওয়া। নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জানাতে পারতেন। কিন্তু সেসব না করে একজন মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা শুধু আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়, ফৌজদারি অপরাধও। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে যেমন এই হামলার প্রতিকার চাই, তেমনি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানাই। 

 বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর এটাই প্রথম হামলা নয়। এর আগে ১২ ও ১৩ জানুয়ারিও তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা হয়। উত্তরের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এ ঘটনাকে বিএনপির নিজেদের মধ্যে মারামারি বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা খুবই দুঃখজনক। 

তিনি আক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি সহানুভূতি না জানাতে পারলও অন্তত নিশ্চুপ থাকতে পারতেন। একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর অপকর্মের দায় কেন একজন মেয়র প্রার্থী নিজের কাঁধে নেবেন? নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষায় যেমন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব আছে, তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদেরও দায়িত্ব আছে। সবার সহযোগিতায় নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে অভিযোগকারী ও নির্বাচন কমিশনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশন বলেছে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ এসেছে, তার প্রায় সবটাই তারা নিষ্পত্তি করেছে। কিন্তু অভিযোগকারীরা বলছেন, তাঁরা প্রতিকার পাননি।

নির্বাচনী আচরণবিধির ক্ষেত্রে শুরু থেকে কমিশনের ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ করা গেছে। অনেক প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। এ ব্যাপারে ইসি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হলো। বুধবার হাইকোর্টের এক রুলে সারা দেশে নির্বাচনের সময় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্লাস্টিক আচ্ছাদিত বা লেমিনেটেড পোস্টার উৎপাদন, ছাপানো ও প্রদর্শন বন্ধের বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের এখনো সপ্তাহখানেক সময় আছে। যদি কমিশন এই সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের নির্বাচনী আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারে, তাহলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন না হলেও নির্বাচনটি অন্তত প্রহসনের রূপ নেবে না। 

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০১৫-এর পুনরাবৃত্তি নয়, ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, এটাই প্রত্যাশিত। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সুমতি ফিরে আসুক।