গণপরিবহনের তথ্য

দেশের নগরগুলোতে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলার কথা কারও আর অজানা নেই। দীর্ঘদিন ধরে এ বিশৃঙ্খলা চলছে। চট্টগ্রাম নগরীও এর বাইরে নয়। এ নগরের সড়কে অবাধে চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। বাস-মিনিবাস, টেম্পো, হিউম্যান হলারসহ ৮০ ভাগ যানবাহনের নেই ফিটনেস সনদ। কেস স্লিপ দিয়েই চলছে বেশির ভাগ বাস। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। বিভিন্ন সময়ে এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এসব অভিযানে শত শত যানবাহন জব্দ করা হয়। মামলা হয় হাজার হাজার, কিন্তু এসব উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসেনি। বিশৃঙ্খলা দূর হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চট্টগ্রামের ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। 

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরের সব গণপরিবহনের তথ্যাবলি একটি সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসন। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ভেহিক্যাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা ভিআইএমএস। এই তথ্যভান্ডারে প্রথমে বাসগুলোর তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে হিউম্যান হলারের তথ্যাবলিও অন্তর্ভুক্ত হবে। সফটওয়্যারে সংশ্লিষ্ট যাত্রীবাহী গাড়ির নিবন্ধন, বিমা এবং ফিটনেসের যাবতীয় তথ্য থাকবে। কোনো গাড়ির নিবন্ধন বা বিমার মেয়াদ ঘনিয়ে এলে মেয়াদোত্তীর্ণের এক মাস আগে সংশ্লিষ্ট মালিকের কাছে খুদে বার্তা চলে যাবে। এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মালিক গাড়ি নবায়ন করে নেবেন। নিবন্ধন বা বিমা নবায়নের পর ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্ট গাড়িতে একটি স্টিকার লাগিয়ে দেবে। ওই স্টিকারে নবায়নের তথ্যাবলি থাকবে। যে গাড়িতে স্টিকার থাকবে না, সেই গাড়ি আর রাস্তায় থাকতে পারবে না। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের দাবি, নগরে গণপরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ভিআইএমএস পদ্ধতি বেশ কাজে দেবে। 

এটা ঠিক যে যেখানে জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই, সেখানে অনিয়ম, দুর্নীতি হবেই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যদি জবাবদিহি নিশ্চিত করা যেত, তাহলে দেশে নিশ্চিতভাবেই অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা কমে আসত। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে চট্টগ্রামের ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হবে কি না। আমাদের দেশে জনগণের কল্যাণে অনেক সময় অনেক ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু পরে দেখা যায় দুর্নীতি, গাফিলতিসহ নানা কারণে সেগুলো আর বাস্তবায়িত হয় না। তবে আমাদের প্রত্যাশা, চট্টগ্রাম নগরের গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা দূর করার এ উদ্যোগ সফল হবে। চট্টগ্রামে এ উদ্যোগ যদি সফল হয়, তাহলে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য নগরের ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসন এ পদ্ধতি চালু করতে পারে।