চীনে করোনাভাইরাস

চীনে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার খবরটি খুবই উদ্বেগজনক। এটি শুধু ওই দেশের মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষকেই ভাবিয়ে তুলেছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চীনে এই ভাইরাসে ১ হাজার ৬১০ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ৫৬ জন মারা গেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছেন।

১৯৬০ সালে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস আবিষ্কার করা হয়। তবে কীভাবে এই ভাইরাসের উৎপত্তি, তা জানা সম্ভব হয়নি। করোনা শব্দের অর্থ জ্যোতির্বলয়। সূর্য থেকে ছিটকে পড়া আলোকরশ্মির মতো হওয়ায় ভাইরাসটির নামকরণ হয়েছে করোনাভাইরাস। মানুষ ও পশুপাখি কখনো কখনো (সব সময় নয়) এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটিও হাঁচি-কাশি ও কফের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে।

ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চীন সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে ২৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া চান্দ্রবৎসর অনুষ্ঠান সীমিত করা, ভাইরাসে আক্রান্ত উহান প্রদেশের ১৬টি শহরের সঙ্গে বাইরের সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া, ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ করা। সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে চীনের ২৮টি প্রদেশে। কিন্তু এতসবের পরও সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। চীনের বাইরে কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

এসব দেশের নাগরিক চীন থেকে দেশে ফেরার পর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা যায়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনোভাবেই নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারে না। চীনের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। যার মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই আছেন অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী। সেখানে তাঁরা একধরনের অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। তঁাদের খাদ্য ফুরিয়ে যাচ্ছে বলেও এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন। তঁাদের খাদ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশ মিশনের হাতে ছেড়ে না দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য ও পেশাগত কাজে বাংলাদেশ থেকে চীনে এবং চীন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত মানুষ আসা–যাওয়া করে। তাদের মাধ্যমে যাতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে বিষয়ে সবার নজর দেওয়া জরুরি।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী ও দায়িত্বরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসা, বিমানবন্দরের স্যানিটেশন, ফিউমিগেশন ও আগত যাত্রীদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তদের শনাক্ত করতে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে কেউ সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত কি না, তা শনাক্ত করতে রয়েছে তিনটি থার্মাল স্ক্যানার। শুধু চীন নয়; হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড থেকে আসা কারও মধ্যে যদি জ্বর থাকে, তাহলে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা ও ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা ইত্যাদি।

প্রাক্‌–প্রস্তুতি হিসেবে এসব পদক্ষেপ হয়তো ঠিকই আছে। কিন্তু কোনো কারণে যদি বাংলাদেশে একজন ব্যক্তিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তাহলে এর সংক্রমণ ঠেকাতে কী কী করতে হবে, সেই আগাম ভাবনা ও প্রস্তুতিও থাকতে হবে। মনে রাখা জরুরি যে বাংলাদেশের মতো জনঘনত্বের দেশে এমন ছোঁয়াচে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য হবে। আমরা দেখছি যে চীনের মতো দেশও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে।