কিশোরীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ

ইভ টিজিং নিয়ে সভা, সেমিনার, কর্মশালা, আলোচনা, লেখালেখি, শোভাযাত্রা ইত্যাদি অনেক হয়েছে। কীভাবে এটিকে প্রতিরোধ করা যায়, এর প্রতিকার কী—এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু মাঝেমধে্যই সংবাদমাধ্যমে ইভ টিজিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। দল বেঁধে একটি মেয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া, পরে থানা-পুলিশে টানাটানি এবং শেষমেশ মেয়েটিরই সব অপবাদ মাথায় নিয়ে ঘরে বন্দী হয়ে থাকার গল্প যেন নৈমিত্তিক গল্প হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই ঘটনা ঘুরেফিরে ঘটেই চলেছে। আজ এখানে কাল ওখানে।

সম্প্রতি ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়েছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার এক কিশোরী। স্থানীয় কয়েকজন বখাটে উত্ত্যক্ত করেছিল তাকে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত নালিশ জানিয়েছিল মেয়েটির অভিভাবকেরা। এরপরও উপজেলা প্রশাসন মেয়েটির পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। বখাটে দুই যুবক সন্ত্রাসীদের নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে কিশোরীর খালা, খালু ও খালার দেবরকে বেদম মারধর করেন। তিনজনই চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় উল্টো বখাটে যুবক কিশোরীর খালা, খালু ও খালার দেবরের নামে মামলা করেছেন। মেয়েটি দুই সপ্তাহ ধরে ঘরবন্দী। সে স্কুলে যেতে পারছে না। তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে আছে। পুরো পরিবার এখন আতঙ্কে আছে।

বোয়ালখালীর এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ও গুরুত্বহীন বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। উত্ত্যক্তকারী বখাটেরা যদি স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তাহলে প্রশাসনের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। এই ধরনের ঘটনা যেহেতু দেশে প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়, সেহেতু সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এর তদন্ত করা দরকার।

প্রশাসনকে বুঝতে হবে, সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যে অপকর্মগুলোকে ‘সামাজিক ব্যাধি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেগুলোর মধ্যে ‘ইভ টিজিং’ বা নারীদের উত্ত্যক্ত করা অন্যতম। এটি এখন মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রেও ইভ টিজিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে নারীদের। ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে অনেক মেয়ে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ কিংবা আত্মহনন পর্যন্ত করে। এই ব্যাধি থেকে সমাজকে রেহাই দিতে প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।

মূলত রাজনৈতিকভাবে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা ও আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না করাসহ নানা কারণে ইভ টিজিং বেড়ে চলেছে। ইভ টিজাররা অপরাধ করেও বারবার পার পেয়ে যাওয়ার কারণে আবারও ইভ টিজিংয়ে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর রাশ টেনে ধরা সম্ভব হবে না।