কেশবপুরের বিলে জলাবদ্ধতা

খেতখামারের সঙ্গে ফসলের প্রক্রিয়াকরণ, খাদ্যগুণ বাড়ানো, বিপণনের পরিকাঠামো তৈরিসহ গোটা কৃষিব্যবস্থাকে খাদ্যশৃঙ্খলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত করতে সরকার কাজ করছে। কিন্তু তারপরও কৃষক মার খাচ্ছেন। অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি তো আছেই। অনেক সময় বাম্পার ফসল ফলিয়েও শেষমেশ বাজারে যোগ্য দাম না পাওয়ার কষ্ট আছে তাঁর।

কৃষকের ধারাবাহিক সেই কষ্টের গল্পের সর্বশেষ অধ্যায়ে যুক্ত হয়েছেন যশোরের কেশবপুরের বিল এলাকার চাষিরা। সেখানকার পাঁজিয়ার বিল, হদ, পাথরা, মাগুরখালী ও বুড়ুলিয়া বিলের চার হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। বিগত বছরগুলোতে বোরো মৌসুমে পানি নেমে যাওয়ায় অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এবার পানি নামছে না। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বোরো ধানের আবাদ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সরকারের সহায়তা না পেয়ে কৃষক নিজেদের খরচে পানি নিষ্কাশন করছেন। সেচের কাজ এক মাস ধরে চলছে। প্রতিদিন সেচের জন্য কৃষকের ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রত্যেক কৃষক বিঘাপ্রতি ১ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও ১৫ দিন সেচ দিতে পারলে বিল আবাদের উপযোগী হবে। তবে কৃষকের এই টাকায় কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। সাহায্য করতেও কেউ এগিয়ে আসছে না। অর্থাভাবে এই সেচকাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে সেচকাজে সহায়তার জন্য কৃষক আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ইউএনওর কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া মেলেনি।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বুঝতে হবে, এসব বিলে বছরে একটিমাত্র ফসল হিসেবে বোরো ধান হয়। আর কোনো ফসল হয় না। ধান না লাগাতে পারলে এখানকার কৃষককে না খেয়ে মরতে হবে। তাঁরা সেচের জন্য এক দফা টাকা দিয়েছেন। এখন আর তাঁদের হাতে টাকা নেই। এখন টাকার জন্য সেচ বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের মহা বিপদে পড়তে হবে।

কৃষক মহা বিপদে পড়বে আর সেই বিপদ দেশবাসীকে স্পর্শ করবে না—সেটা হয় না। কৃষকের ভালো থাকা না–থাকার ওপর দেশের ভালো থাকা না–থাকা এখনো বহুলাংশে নির্ভর করে। সেই দিক বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে এই সেচে সরকারের এগিয়ে আসা দরকার। এর জন্য যে আহামরি পরিমাণের কোনো অর্থ লাগছে, বিষয়টি তা–ও নয়। সংশ্লিষ্ট মহলের সদিচ্ছাই এর জন্য যথেষ্ট।