করোনাভাইরাসের সংক্রমণ: ভয়াবহতা নিরূপণ করা জরুরি

করোনাভাইরাস আসলে কতটা সংক্রামক, তা এখনো জানা যায়নি। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস আসলে কতটা সংক্রামক, তা এখনো জানা যায়নি। ছবি: রয়টার্স

জনস্বাস্থ্য কোনো সীমানা জানে না, জানে না কোনো সীমারেখা এবং তার জানা উচিতও নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমরা বিশ্বের অন্য কোথাও সংঘটিত স্বাস্থ্যের উদ্বেগকে যতই আমাদের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করব, আমরা ততই ভালো থাকব।

ইবোলার মতো মারাত্মক রোগ, হামের মতো উচ্চ সংক্রামক ব্যাধি, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ধ্বংসকারী এইচআইভি বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী এইচপিভি আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনুন্নত দেশগুলোতে এখনো সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে এবং এগুলো আমাদের সমস্যাও বটে। সেগুলোর বিস্তার রোধের জন্য আমাদের উত্তেজনার চেয়ে বেশি প্রয়োজন বিজ্ঞানের।

আর এ কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনের উহান শহর থেকে উদ্ভূত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা না করার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক নয়। যদিও ইতিমধ্যে প্রায় তিন হাজার মানুষের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার এবং ১০৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের বেশির ভাগই চীনা নাগরিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনের বাইরে অন্যান্য দেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার জন্য অপেক্ষা করাটা হবে এক অসাধারণ ভুল।

 চীনের ৩০টি শহর ও প্রদেশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে এবং যেকোনো জরুরি অবস্থায় সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। চীন সে দেশে বিদেশি পর্যটকদের আসতে দিচ্ছে না এবং উহান শহরে দ্বিতীয় জরুরি করোনাভাইরাস হাসপাতাল তৈরি করছে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর দেশের প্রথম কাজ হিসেবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি স্বীকার করেছেন যে খুব দ্রুতগতিতে এই রোগের বিস্তার হচ্ছে।

যা এখনো জানা যায়নি তা হলো, এই ভাইরাস আসলে কতটা সংক্রামক। সমালোচকেরা বলছেন, মুখ বাঁচানোর জন্য চীন ধীরে ধীরে এ রোগের খবর প্রকাশ করেছে। তারা এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে যে তথ্য দিচ্ছে, আসলে ভয়াবহতা তার চেয়ে অনেক বেশি।

জনস্বাস্থ্যের পরিধিতে বিশ্লেষণটি নির্ধারিত হয় মৃতের সংখ্যা, আক্রান্তের সংখ্যা এবং আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে। করোনাভাইরাসে মৃত্যু বা আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা না জানলে এটা আসলেই কতটা সংক্রামক এবং মারাত্মক, তা আমরা জানতে পারব না।

আমরা জানি যে করোনাভাইরাস উদ্ভূত হয়েছে উহান শহরের একটি প্রাণীর বাজার থেকে। তবে আমরা জানি না কোন প্রাণী থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের মধ্যে আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিগত দশকে পাঁচটি আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। ২০০৯ সালে এইচ ওয়ান সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের জন্য, ২০১৩ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার প্রাদুর্ভাব, ২০১৪ সালে পোলিও, ২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস এবং ২০১৯ সালে আবারও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ইবোলার প্রাদুর্ভাবের জন্য। তবে এসব রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়নে দুর্বলতা ছিল। উদাহরণস্বরূপ ইবোলার কথা বলা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, ইবোলা মারাত্মক রকমের ছোঁয়াচে। পরে প্রমাণিত হয়, ইবোলাকে যতটা মারাত্মক ভাবা হয়েছিল, আসলে ততটা মারাত্মক নয়। একই ব্যাপার ঘটেছে জিকা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে যা করতে হবে তা হলো প্রথমত, এটা যথাযথভাবে শনাক্ত করা যে করোনাভাইরাসের জন্য আসলেই বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে কি না। আর এ জন্য প্রয়োজন এই ভাইরাসে এ পর্যন্ত কতজন আক্রান্ত হয়েছে এবং কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তার সঠিক সংখ্যাটি জানা। এ জন্য চীনকে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে। সমালোচকদের দাবি যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা না করার জন্য চীন থেকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু চীনকে বুঝতে হবে, এ ক্ষেত্রে কোনো তথ্য গোপন করা মানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলা।

দ্য হিল থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
মার্ক সিগেল: মার্কিন চিকিৎসক ও ফক্স নিউজের মেডিকেল করেসপন্ডেন্ট