চিনিকলের নষ্ট সার বিতরণ

এ দেশের কৃষক বলা যায় উত্তরাধিকারসূত্রে দরিদ্র। ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা যুগ যুগ তাঁদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে এসেছেন। এই দারিদ্র্যকে পুঁজি করেই দাদন প্রথার জন্ম হয়েছে। দেখা যায়, কৃষককে ফসল বোনার আগেই মহাজনেরা টাকা ধার দেন। ফসল ওঠার পর কৃষক ওই মহাজনের কাছে তা বিক্রি করতে বাধ্য হন। সুদসহ ধারের টাকা তখন ফসলের দাম হিসেবে কেটে নেওয়া হয়। এই মহাজনেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কৃষকদের ঠকান। 

কৃষকদের মহাজনদের হাত থেকে রেহাই দিতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। সেই উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে মহৎ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অল্প কিছু কর্মকর্তার কারণে সরকারের সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। ফরিদপুরে এর সর্বশেষ উদাহরণ দেখা গেল। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মধুখালীতে অবস্থিত ফরিদপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ প্রতিবারের মতো এ মৌসুমেও তাদের তালিকাভুক্ত প্রায় পাঁচ হাজার আখচাষিকে বীজ ও ইউরিয়া সার দিয়েছিল। ফসল ওঠার পর তাদের আখ এই চিনিকলে বিক্রি করতে হবে। বিক্রির টাকা থেকে বীজ ও সারের দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যে ইউরিয়া সার তঁাদের দেওয়া হয়েছে, তা নষ্ট। তা প্রয়োগ করায় আখগাছের জন্য ভালো তো হচ্ছেই না, উল্টো গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা এই সার ফেরত দিতে চাইলেও মিল কর্তৃপক্ষ তা ফেরত নিচ্ছে না। এখন গাঁটের টাকায় তাঁদের বাইরে থেকে সার কিনে খেতে প্রয়োগ করতে হচ্ছে। 

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, চলতি মৌসুমে এ মিলের অধীনে ১০ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা থেকে উৎপাদন হবে এক লাখ মেট্রিক টন আখ। এসব আখচাষির মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বিতরণ করা হয়। সরবরাহকৃত ইউরিয়া সারের এক-চতুর্থাংশই জমাটবাঁধা। বেশির ভাগই পাথর বা ইটের আকৃতির। সাদা ইউরিয়া সার কালচে হয়ে গেছে। 

ফরিদপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল বারী বলেছেন, এবারের মৌসুমে বিতরণ করা সারের একটি অংশ ছিল পুরোনো। সেই সারই জমাট বেঁধে গেছে, কিন্তু গুণগত মান নষ্ট হয়নি। কথা হচ্ছে, সারের গুণগত মান নষ্ট হয়নি, ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত তিনি কীভাবে দিচ্ছেন? 

সরকারকে বুঝতে হবে তালিকাভুক্ত আখচাষিরা যদি প্রতারিত বোধ করেন, তাহলে তাঁরা আগামী মৌসুমে আখ চাষে আগ্রহ হারাবেন। এতে কৃষকের পাশাপাশি চিনিশিল্পও ক্ষতির মুখে পড়বে। ফলে কৃষকের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা এবং যেসব ব্যক্তির কারণে সরকারের ভালো উদ্যোগ পণ্ড হচ্ছে, তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া বিধেয়।