প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ও ব্যয় বৃদ্ধি

সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার অধীনে নানা রকমের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যয় বৃদ্ধি একটি সাধারণ প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। প্রথমে নির্ধারিত সময় ও প্রথম–প্রাক্কলিত ব্যয়সীমার মধ্যেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার দৃষ্টান্ত অত্যন্ত বিরল; কিংবা নেই বললেই চলে। সব কাজের পরিকল্পনা করা হয় জনগণের স্বার্থে, কিংবা অন্তত কাগজে–কলমে জনস্বার্থের কথা বলে। যে অর্থ ব্যয় করা হয়, তা–ও জনগণের। বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও সেই ঋণের বোঝা এ দেশের জনগণকেই টানতে হয়। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ানোর ফলে জনগণ শুধু সেবা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, তার কষ্টার্জিত করের টাকারও অপচয় হচ্ছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই চর্চাই চলে আসছে। এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে বিশদ তথ্য–উপাত্তসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়; কিন্তু কোনো প্রতিকার হয় না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার দায়ে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি হওয়া দূরে থাক, জবাবদিহিরও মুখোমুখি হতে হয় না। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর রাজধানী পাতায় দুটি সংবাদ প্রতিবেদনের কথা সর্বসাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায়। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ‘সবুজে ঢাকা’ নামে এক প্রকল্পের অধীনে সাতটি পার্কের সংস্কারকাজের জন্য প্রথমে ১৪ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল; পরে তা আরও ১১ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পার্কের সংস্কারকাজ শেষ হয়নি। হাজারীবাগ পার্কের সংস্কারকাজের নির্ধারিত সময় ছিল ছয় মাস, কিন্তু তিন দফায় সময় বাড়ানোর পর ২৬ মাসেও তা শেষ হয়নি।

দ্বিতীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসার একটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র দেড় শতাংশ। প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করার উদ্দেশে্য পাঁচটি খাল খনন ও পুনঃখননের এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ ছিল ৬০৭ কোটি টাকা। তারপর আরও ৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে; কিন্তু কাজের অগ্রগতি যারপরনাই হতাশাব্যঞ্জক। প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে সরকারি অর্থায়নে, কিন্তু ২১ মাসের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরে যখন দেখা যাচ্ছে যে কাজ হয়েছে মাত্র দেড় শতাংশ, তখন এ বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে বলে কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ওয়াসার কাজের বিষয়ে এর আগেও অনেক অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু সেসব অভিযোগের কোনো প্রতিকার হয়েছে বলে জানা যায়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাতটি পার্কের সংস্কারকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা তো বেসরকারি সংস্থা নয়। আসলে সরকারি, আধা–সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি—সব ধরনের সংস্থা–প্রতিষ্ঠানেরই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ও দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা একটি স্থায়ী চর্চায় পরিণত হয়েছে জবাবদিহির অভাবে। সবকিছুর আগে সেই জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।