স্যান্ডার্স কি পারবেন ডেমোক্রেটিক সিনেট গড়তে?

বার্নি স্যান্ডার্স। রয়টার্স ফাইল ছবি
বার্নি স্যান্ডার্স। রয়টার্স ফাইল ছবি

১৯৮১ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে খবরের সন্ধানে বেরিয়েছিলাম। তখন ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের বার্লিংটন শহরের মেয়র বার্নি স্যান্ডার্সের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। তখন তিনি খুবই আন্তরিক ছিলেন, তবে আমি ভেবে নিয়েছিলাম, ভবিষ্যতে তিনি কোনো কেউকেটা রাজনীতিবিদ হিসেবে আবির্ভূত হবেন না। সেই কারণে আমি তখন মেয়র স্যান্ডার্স সম্পর্কে কিছু লিখিনি। তার মানে, চার দশক আগে আমি একজন রাজনৈতিক প্রতিভা সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করেছিলাম। ভারমন্টের সিনেটর স্যান্ডার্স এখন নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে জয়ী হয়েছেন। বেটিং মার্কেটে (বাজির বাজার) স্যান্ডার্স এগিয়ে থাকলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নভেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করুন, সেটাই বেশির ভাগ মানুষ চাইছেন। না, এটা আমার কথা নয়, জরিপে তা-ই দেখা যাচ্ছে। জরিপ অনুযায়ী ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

স্যান্ডার্স কি ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবেন? না হ্রাস করবেন? তিনি কি ক্যানসাস এবং আলাবামার মতো অঙ্গরাজ্যে সিনেটের প্রার্থী হয়ে ডেমোক্র্যাটদের সহায়তা করবেন? না ক্ষতি করবেন? আমি স্যান্ডার্সকে তাঁর অকৃত্রিমতা এবং উৎসাহের জন্য প্রশংসা করি। তিনি ইয়েমেনের নৃশংসতায় মার্কিন–সংশ্লিষ্টতার অবসান ঘটাতে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের জমি দখলের সমালোচনা করে অস্বাভাবিক রাজনৈতিক সাহস দেখিয়েছেন, এর ফলে একটি রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছে।

স্যান্ডার্সের ভোটাররা ভোট–পরবর্তী মতামতে বলেছেন, কয়েকটি ইস্যুতে তাঁর ইতিবাচক অবস্থানের কারণে তাঁরা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। তবে তাঁর প্রস্তাবগুলো আইনে পরিণত হওয়ার প্রায় কোনো সম্ভাবনা নেই, বিশেষ করে সিনেট যদি রিপাবলিকানদের হাতে থাকে। আপনি যদি একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, একটি নিখুঁত কর ব্যবস্থা, বুদ্ধিমান বিচারক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চান, তবে ট্রাম্পকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে কে সেরা, সেদিকে আপনার দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত।

তাহলে স্যান্ডার্স কি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য? তিনি কি সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সাহায্য করতে পারেন? সত্যই, আমাদের কোনো ধারণা নেই এবং আমরা সবাই আমাদের পছন্দের প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা দেখি। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ল্যারি সাবাতো বলেছেন: ‘নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা সত্যই দর্শকের চোখে পড়ে। কে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য এবং কে নন, তা নির্ধারণে আমরা সবাই ভয়ানক রকমের পারদর্শী।’

সাবাতো উল্লেখ করেন, ১৯৮০ সালে রিপাবলিকানরা যখন রোনাল্ড রিগান নামে স্পষ্টত নির্বাচনের অযোগ্য একজন প্রার্থীকে মনোনীত করেছিলেন, তখন কিছু ডেমোক্র্যাট আনন্দিত হয়েছিলেন। এরপর ২০১৬ সালে একাধিক পণ্ডিত একটি বিষয়ে একমত হয়েছিলেন যে ট্রাম্প নির্বাচনের যোগ্য নন। তাই আসুন, এ ধরনের চর্চায় কিছুটা নম্রতা নিয়ে আসি।

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ ভোটার এখন বলছেন যে তাঁরা একজন উচ্চশিক্ষিত নারীকে ভোট দিতে চান। ১৯৩৭ সালে এ হার ছিল ৩৩ শতাংশ। ৯৬ শতাংশ ভোটার বলছেন যে তাঁরা একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারেন। ১৯৫৮ সালে এ হার ছিল ৩৮ শতাংশ। (ভোটাররা হয়তো একটু বাড়িয়েই বলছেন, তবে প্রবণতাটা স্পষ্ট।) এ ছাড়া আরও একধরনের প্রার্থী রয়েছেন, যাঁদের প্রতি আমেরিকানরা বৈরী মনোভাব পোষণ করে চলেছেন, তাঁরা হলেন সমাজতন্ত্রী। মাত্র ৪৫ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে তাঁরা একজন সমাজতন্ত্রীকে সমর্থন দিতে ইচ্ছুক। বয়সের কারণে স্যান্ডার্স বাধার মুখে পড়তে পারেন, কেননা মাত্র ৬৯ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে তাঁরা ৭০ বছরের বেশি বয়সের প্রার্থীকে বিবেচনা করতে পারেন।

জো বাইডেনকে অনেকে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচনা করেছিলেন, তবে তিনি পরাজিত হয়ে চলেছেন। বাটিগিয়েগ একটি উজ্জ্বল প্রতিভা, তবে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ। মাইকেল ব্লুমবার্গ ভালো প্রার্থী, তবে প্রতিষ্ঠানবিরোধী আন্দোলনের এ মুহূর্তে তিনি প্রতিষ্ঠানপন্থী ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর দক্ষতার প্রমাণ এখনো হয়নি।

স্যান্ডার্স নিউ হ্যাম্পশায়ারে জো বাইডেনকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ‘যোগ্যতা’ অর্জনের এই নির্বাচনে তাঁকে আরও অনেক দূর পাড়ি দিতে হবে। অন্যান্য রাজ্যের প্রাইমারির ফলাফল বলে দেবে শেষ পর্যন্ত স্যান্ডার্স নাকি অন্য কেউ হবেন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
নিকোলাস ক্রিস্টফ: মার্কিন সাংবাদিক ও কলাম লেখক