মন্ত্রণালয়ের কাজে শম্বুকগতি

শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ৩০২টি বেসরকারি কলেজকে সরকারি ঘোষণা করে। এর অর্থ হলো, প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি বেতন স্কেলে বেতন পাবেন। শিক্ষার্থীরাও সরকারি কলেজের নির্ধারিত ফি দেবে। কিন্তু ১৭ মাস চলে যাওয়ার পর কোনোটাই কার্যকর হয়নি। এসব কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা আগের নিয়মে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। আর শিক্ষার্থীদেরও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে উচ্চ ফি ধার্য ছিল, সেটাই গুনতে হচ্ছে। তাহলে সরকারের ওই ঘোষণার দাম কী?

একজন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘তিন শতাধিক কলেজ আত্তীকরণ (শিক্ষকদের) করতে না পারলে আবার বেসরকারি করে দাও। লেখাপড়া ধ্বংস করে দিয়ো না।’ এটি তাঁর একার কথা নয়। সব শিক্ষক-কর্মচারীর। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের কর্ণকুহরে এসব ক্ষোভ-আক্ষেপ কিংবা বেদনার কথা পৌঁছাবে কি না, পৌঁছালেও সেসব তাঁরা আমলে নেবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

বেসরকারি শিক্ষকদের সরকারি শিক্ষক হিসেবে আত্তীকরণ করতে কতগুলো শর্ত পূরণ করতে হয় এবং সেটি যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ৩০২টি কলেজ সরকারি ঘোষিত হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৪৪টি কলেজের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ১৭ মাসে ৪৪টি কলেজের যাচাই–বাছাইয়ের কাজ শেষ হলে বাকি কলেজের কাজ শেষ করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। সে ক্ষেত্রে এক ঘোষণায় ৩০২টি বেসরকারি কলেজকে সরকারি ঘোষণার অর্থ কী? এটি কি শিক্ষকদের সঙ্গে প্রবঞ্চনা নয়? যে ৪৪টি কলেজের শিক্ষকদের যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হয়েছে, সেসব কলেজের শিক্ষকেরাও এখনই নতুন স্কেলে বেতন পাচ্ছেন না। কেননা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকা প্রথমে যাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি স্কেলের পুরো সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

এসব কলেজ জাতীয়করণ বা সরকারি করার এ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ ছিল না, সেগুলোতে একটি করে বেসরকারি কলেজকে সরকারি করা। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে সারা দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজকে সরকারি করা হয়। এ ছাড়া কাছাকাছি সময়ে আরও ৩১টি কলেজকে সরকারি করা হয়। সেই হিসাবে সরকারি হওয়া মোট কলেজ ৩০২টি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আগে একজন মন্ত্রী ছিলেন। এখন মন্ত্রীর সঙ্গে একজন উপমন্ত্রী যোগ হয়েছেন। তারপরও কাজে এই ধীরগতি কেন? সরকারি কলেজের শিক্ষকদের যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি যেভাবে চলছে, তাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকারের উদাসীনতা ও অবহেলাই প্রকাশ পেয়েছে। সরকারি কলেজগুলোর যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ না হওয়ায় সেখানকার শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সরকারি ঘোষণার পরও উল্লিখিত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের উচ্চ হারে ফি দিতে হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বেসরকারি কলেজের অনেক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলেও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকও আছেন। তাঁদের দুশ্চিন্তা আরও বেশি।

সরকারকে অবিলম্বে যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি শেষ করে শিক্ষকদের সরকারি বেতন স্কেলে তাঁদের প্রাপ্য পুরো বেতন দিতে হবে। এ নিয়ে আর কালক্ষেপণ নয়।