ঢাকায় একটা দমবন্ধ অবস্থার মধ্যে আছি: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
>সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান। তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে ঢাকার পরিবেশ, নগরজীবনসহ নানা সমস্যা ও সেগুলো সমাধানের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে কথা বলেন।

প্রথম আলো: আপনি তো ঢাকা মহানগরীর স্থায়ী বাসিন্দা। এখানে আপনি কেমন আছেন?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: ঢাকায় একটা দমবন্ধ অবস্থার মধ্যে আছি। প্রচণ্ড অস্বস্তিকর অবস্থায় আছি। যতক্ষণ বাসার মধ্যে থাকি, ততক্ষণ তা–ও একটু স্বস্তি; কিন্তু বাসা থেকে বের হলেই অস্বস্তি, দুর্ভোগ। কোথাও যাব, সেটার জন্য দু-তিন দিন আগেই পরিকল্পনা করতে হয়। আমরা যারা কর্মজীবী, আমাদের একই দিনে দুটি মিটিং থাকতে পারে। যদি এমন হয়, একই দিনে আমাকে হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানি করতে যেতে হবে, আবার গুলশানে একটি মিটিং করতে যেতে হবে, তাহলে আমাকে গুলশানের মিটিংয়ের সময়টা নিতে হয় সকাল ৯টায়; যাতে করে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে মিটিংটা শেষ করে হাইকোর্টে চলে আসতে পারি। কখনোই আমার মিটিংটা বেলা দুইটার পরে নেওয়ার সুযোগ নেই; যদিও আমি জানি যে হাইকোর্টে আমার শুনানি শেষ হয়ে যাবে। কারণ, হাইকোর্ট থেকে রওনা হয়ে কখন গুলশান পৌঁছাতে পারব, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

প্রথম আলো: অর্থাৎ ঢাকা মহানগরে রাস্তাঘাটে চলাচলের সমস্যা? গৃহে সব ঠিকঠাক?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: না। ঘরে কিছুটা স্বস্তির মধ্যে থাকি, এটা বললাম বটে। কিন্তু সেই স্বস্তির মাত্রাটাও আগের মতো নেই। বাসার ভেতরে এখন যথেষ্ট পরিমাণ মশা। এটা উদ্বেগেরও বিষয়। কারণ, আপনি যদি পত্রপত্রিকা পড়েন তাহলে দেখবেন, এই মৌসুমে, যখন ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম নয়, তখনো প্রায় আড়াই শ মানুষ ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মানে বাসার মধ্যেও আপনি খুব নিরাপদ বোধ করছেন, তা নয়।

প্রথম আলো: আর?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমার পরিবারের কিছু সদস্য চিকিৎসা নিতে ব্যাংককে যায়। সেখানকার ডাক্তার তাদের বলেছে, তোমাদের এই যে একটা কাশি হচ্ছে, যেটা দীর্ঘদিনেও সারছে না, এটা হচ্ছে তোমাদের বায়ুদূষণের কারণে। এ কাশির পেছনে অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তোমরা যখন বাইরে বেরোবে শুধু তখনই মাস্ক পরবে না, বাসার ভেতরেও হেপা ফিল্টার ব্যবহার করবে। কারণ, তোমাদের ঘরের ভেতরের বাতাসও দূষিত।

প্রথম আলো: তাহলে আপনার কথা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরে এই মুহূর্তের প্রকট সমস্যাগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণ, মশার উপদ্রব ও সে কারণে ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি এবং যানজটের কারণে চলাফেরায় ভোগান্তি ও সময়ক্ষেপণ উল্লেখযোগ্য। এগুলো কিন্তু স্থায়ী সমস্যা। অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামতি ইত্যাদি কারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বছরের পর বছর ধরে চলেছে। এসবের যেন শেষ নেই। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দিকে কারও নজর আছে বলে মনে হয় না...

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমার এক বন্ধু আছে নেদারল্যান্ডসের; এক দাতা সংস্থায় কাজ করে। ওকে প্রায় প্রতিবছরই ঢাকায় আসতে হয়। সে আমাকে বলে, গত বছর তোমাদের যান চলাচলের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমি ভেবেছিলাম, ওটাই সবচেয়ে খারাপ; এর চেয়ে খারাপ আর হতে পারে না। কিন্তু এবার এসে দেখি, তার চেয়েও বেশি খারাপ হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব! ওরা যে খারাপটা দেখে যায়, তার পরেও যে আরও খারাপ হতে পারে, এটা ওরা ভাবতেই পারে না।

প্রথম আলো: কিন্তু আমাদের এই অবস্থা কেন? কেন আমরা ঢাকায় একটা স্থিতিশীল, স্বাভাবিক নগরজীবন পাচ্ছি না?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: দেখেন, আমার মনে হয়, ঢাকা মহানগরের অভিভাবকত্বের অভাব। এ অভাব দিনকে দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এই যে আমরা বলি ‘নগরপিতা’, আমার কাছে এটা সম্পূর্ণ অর্থহীন একটা শব্দ এবং উপাধি বলে মনে হয়। আপনি যদি এবারের ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা লক্ষ করে থাকেন, তাহলেও আপনি দেখে থাকবেন, তাঁদের পোস্টার, তাঁদের ব্যানার ইত্যাদির প্রাচুর্যের কারণে ঢাকা নগরের চেহারাটা কেমন হলো এটা নিয়ে তাঁদের কোনো চিন্তা ছিল না। তাঁদের এত পোস্টার-ব্যানার দেখে তাঁদের ভোটাররা স্বস্তি বোধ করছে না বিরক্তি বোধ করছে, এটা নিয়ে তাঁদের কোনো চিন্তা ছিল না। সবার বাড়ি বাড়ি চিকা মেরে চলে যাচ্ছেন। আমার অনুমতি ছাড়া আমার বাড়িতে চিকা মারার অধিকার তো আপনার নেই। কিন্তু সেই পর্যায়ের সভ্যতা-ভব্যতা বোধের মধ্যে আমরা আসিনি। আজকের যুগে, যখন স্লোগান হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ, তখন এভাবে লাখ লাখ, কোটি কোটি পোস্টার ছাপিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা তো বন্ধ হওয়া উচিত ছিল।

প্রথম আলো: বন্ধ হয়নি কেন?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: ঢাকা মহানগরের নেতৃত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁদের একজনের সঙ্গে আরেকজনকে কথা বলতে, আলোচনা-পরামর্শ করতে আপনি দেখবেন না। আপনি দেড়-দুই বছর শুনছেন যে ঢাকা শহর বায়ুদূষণের দিক থেকে ১ নম্বর। কিন্তু ঢাকা যে বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে ১ থেকে ৪ নম্বরের মধ্যে, এটা কিন্তু আপনি ছয়-সাত বছর শুনছেন। টিআইবি যদি বলে সরকারের এই বা ওই সংস্থায় দুর্নীতি হচ্ছে, তাহলে ওই সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা সঙ্গে সঙ্গে টিআইবির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। টিআইবির অনুসন্ধান বস্তুনিষ্ঠ নয়, টিআইবি বিদেশিদের দালাল, টিআইবি পয়সা পায় কোথায় তার অনুসন্ধান করা হবে ইত্যাদি বলেন। কিন্তু গ্রহণযোগ্য বিদেশি নানা গবেষণার ভিত্তিতে বারবার বলা হচ্ছে যে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য নগরীগুলোর প্রথম চারটির মধ্যে একটি, তা নিয়ে তো কোনো আলোচনা-প্রতিবাদ দেখলাম না, তা নিয়ে তো কোনো সমন্বয় সভা দেখলাম না, কোনো কমিটি দেখলাম না।

প্রথম আলো: অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামতি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কি আপনি সমন্বয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে বলছেন?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: একটা নগরীতে যখন বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, তখন আমি বুঝি যে কিছু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে ঢাকা শহরের বাতাস পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত হয়ে যাবে, তা তো গ্রহণযোগ্য নয়। পৃথিবীর আর কোথাও কি মেট্রোরেল নির্মাণ করা হয় না? ফ্লাইওভার করা হয় না? রাস্তাঘাট নির্মাণ হয় না? হচ্ছে তো। কথা হচ্ছে, ঢাকা শহরটা এতিম। এর পিতা বা মাতা বলে কিছু আছে বলে আমার কখনো মনে হয়নি। এবং দিন যত যাচ্ছে, ঢাকা শহরে একটা জিনিস বাড়ছে। তা হচ্ছে জমির দাম। ঢাকা শহরে কত মানুষ থাকতে পারে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। যেখানে আগে ৬ তলা হতো, সেখানে দিয়ে দাও ১২ তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি। যেখানে ১২ তলা হতো, দিয়ে দাও সেখানে ১৬ তলা। কিছু কিছু পেশাজীবীও এসবের পক্ষে বলেন, যাঁরা বহুতল ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে সেটি বলেন। কিন্তু ঢাকা শহরে মানুষ পানি পাবে কোথায়, গ্যাস পাবে কোথায়, বিদ্যুৎ পাবে কোথায়, পয়োনিষ্কাশনের কী ব্যবস্থা হবে, রাস্তাঘাটে যানবাহন বাড়ার চাপের কী হবে—এগুলো নিয়ে ভাবা হয় না। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পরও রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক হচ্ছে না, একদম প্রাথমিক চাহিদাগুলোর সুরাহা হচ্ছে না। এসব বিষয়ে কোনো পরিকল্পনার কথাও আমরা জানি না। কিছু বললেই আমরা শুনি, একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরের খেলার মাঠগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাইভেট ক্লাবগুলোর নামে সেগুলো দখল করা হচ্ছে। ঢাকা শহরের পার্কগুলো শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পরে আপনারা রমনা পার্কের মতো আরেকটি পার্ক দিতে পারেননি। কিছু বললে আপনি তিন একরের পার্কের মধ্যে আপনি একটা ফোয়ারা বসান, একটা সি-স বসান, একটা স্লাইড বসান। এটা তো আমরা চাই না। পার্কগুলোর খোলামেলা, গাছপালায় ভরা প্রাকৃতিক পরিবেশ কেন নষ্ট করতে হবে?

প্রথম আলো: ঢাকায় লোকসংখ্যা বেশি হচ্ছে আয়রোজগার ও কর্মসংস্থানের সুযোগের কারণে। এ শহরের শিল্পকারখানা অনেক; রাজধানী শহরের ভেতরে...

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমার প্রশ্ন, ঢাকা শহর থেকে পোশাক কারখানাগুলো কেন সরিয়ে নেওয়া যাবে না? কেন কেরানীগঞ্জ ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যায়? কেন সরকার সেখানে আবাসন গড়তে পারে না? আমি প্লটের কথা বলছি না, ফ্ল্যাটের কথা বলছি। কেন সরকার পারল না নারায়ণগঞ্জে, সাভারে, গাজীপুরে, টঙ্গীতে? গণপরিবহনের জন্য বাস সার্ভিস ঠিক হয় না, আমার ট্রেন ঠিক হয় না; কিন্তু আমার মেট্রোরেল হয়ে যায়। আমি বলছি না যে মেট্রোরেল অপ্রয়োজনীয়। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হতো, আমি বলতাম যে এত বিপুল ব্যয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের আগে ঢাকা শহরের বাস সার্ভিসটা ঠিক করুন। আপনি বাস সার্ভিস ঠিক করতে পারেন না; বাসমালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। এমনকি বাসচাপা দিয়ে মানুষ মেরে ফেললেও তাদের বিচার করে শাস্তি দিতে পারেন না। আপনি পারেন বিরোধী মত নির্মূল করতে। আপনার উন্নয়নের সংজ্ঞার যে বিরোধিতা করবে, তাকে ঠিকই টার্গেট করা হয়। কিন্তু বাসমালিকদের সঙ্গে তো পারলেন না। সড়ক পরিবহন আইনটা প্রয়োগ করতে পারলেন না। সব মিলিয়ে আমি মনে করি, ‘নগরপিতা’ ইত্যাদি আর বলা উচিত নয়। বরং ঢাকাকে আমার এতিম মনে হয়। আমি কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক দলকে বলতে শুনিনি, আসুন আমরা আলোচনা করি, ঢাকাকে কীভাবে বসবাসের উপযোগী করা যায়।

প্রথম আলো: আপনি কী মনে করেন? কীভাবে ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী করা যায়?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমি মনে করি, সমন্বয়ের ব্যবস্থা দরকার। বর্তমান সরকার নগর সরকারের ধারণা মানতে চায় না। তারা মনে করে, সরকারের ভেতরের সরকার আরেক সমস্যা করবে। ঢাকা শহরের সমস্যাগুলো সমাধান করা সহজ নয়। এ জন্য একটা ভিশন বা দর্শন থাকা প্রয়োজন। আজ থেকে ধরা যাক, ২০ বছর পরে ঢাকাকে আমি কেমন দেখতে চাই? আমি জানি না তো। আমি জানি, ৬ তলা ১২ তলা হবে; ১২ তলা হবে ১৬ তলা, ১৮ তলা। তাই আমার একটা দর্শন লাগবে যে আমি বাসযোগ্য ঢাকা চাই। বাসযোগ্য ঢাকা মানে কী? তরুণ-যুবকের কাছে এর মানে কী, গৃহিণী নারীর কাছে এর মানে কী, কর্মজীবী নারীর কাছে এর মানে কী, কর্মজীবী পুরুষের কাছে এর মানে কী, বয়স্ক মানুষ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের কাছে এর মানে কী, সংস্কৃতিকর্মীদের কাছে এর মানে কী। একটা দর্শন যখন স্থির হবে, তখন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজউক, ওয়াসা, ডেসা—সবাই এই দর্শনকে ভিত্তি করে একটা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। ১০ বছরে হোক, ১৫ বছরে হোক, সেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। একটা দর্শন থাকা, সেই দর্শনের আলোকে একটা সমন্বয় সংস্থা গঠন করা প্রয়োজন। ঢাকা থেকে জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা-উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

প্রথম আলো: রাজধানী ঢাকা নিয়ে আমরা কথা বলি। সারা দেশের অন্য বড় শহর বা জেলা শহরগুলো নিয়ে তেমন কথা শোনা যায় না। সেগুলোর অবস্থা কী?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: খুব খারাপ। এবং দিন দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, কোনো জায়গাতেই কোনো কিছু পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে না। অপরিকল্পিতভাবে সবকিছু বাড়ছে। ভূমি গ্রাস সেসব শহরেও ঘটছে; পুকুর, খাল ও অন্যান্য জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবস্থা খারাপ। রাস্তাঘাটের অবস্থা কোথাও কোথাও ভালো, কিন্তু অধিকাংশ জায়গায় খারাপ। জেলা শহরগুলোতেও যানজট বাড়ছে; রাস্তাঘাটের বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। আর প্রচুর কৃষিজমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বেসিক সংক্রামক রোগ শনাক্তকরণের যন্ত্রপাতির অভাব; গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দুর্বল। সব মিলিয়ে জেলা শহরগুলোর ও পৌর শহরগুলোর আগের সেই অবস্থা আর থাকছে না। শহর-গ্রামের মিশ্রণে যে সুন্দর জনপদ ছিল, সেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শহরও নয়, গ্রামও নয়; কদর্য রূপ ধারণ করছে। কারণ, তারা কোনো পরিকল্পনার ভিত্তিতে এগোচ্ছে না। আমার জানামতে, বেশির ভাগ পৌরসভারই মাস্টারপ্ল্যান ফাইনাল হয়নি। আর মাস্টারপ্ল্যান ফাইনাল হলেই–বা কী হতো; ঢাকা শহরের মাস্টারপ্ল্যানের সর্বনাশ তো করেছে রাজউকই। তাই এখান থেকে তারাও শিখবে। রাজধানীতে যা হয়, জেলা শহরগুলোতেও তার অনুকরণ করা হতে পারে। এখানে যখন তুরাগ নদ দখল করা হয়, তখন একটা জেলা শহরেও সে রকমই কোনো নদী বা খালের সেই অবস্থা হতে পারে। রাজধানীতেই যখন ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান কেটেকুটে জলাশয়কে হাউজিং দেখানো হয়, তখন যেসব পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান আছে, সেগুলোর চেয়ারম্যানরাও একই কাজ করবেন। জেলা শহরগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হবে। কারণ, সেগুলোতে কোনো পরিকল্পনা নেই, দক্ষ জনবল নেই, কিছু থাকলে তাদের রাখতেও পারছে না, আর যার যেখানে মন চায় সেখানে নিজের ইচ্ছেমতো দালান গড়ে তুলছে।

প্রথম আলো: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম