করোনাভাইরাসের বিপদ

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গতকালের নিউইয়র্ক টাইমসগার্ডিয়ান–এর প্রধান সংবাদ ছিল করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা নিয়ে। গত কয়েক দিনে ইতালিতে প্রায় ১৫০ ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পর দেশটি এই সংক্রামক ব্যাধি মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে; মিলানের আশপাশের অন্তত ১০টি শহরকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে; স্কুল–কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

এর আগেই খবর পাওয়া গেছে দক্ষিণ কোরিয়ায় এক দিনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে; ইরানে সংক্রমণ বাড়ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ লেবানন ও ইসরায়েলে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। আর সিঙ্গাপুরে পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এক বাংলাদেশির আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে; তারপর থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে সেখানকার আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ থেকে ভাইরাসটি অন্যান্য এলাকায় ও চীনের বাইরে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সংস্পর্শ রোধ করার লক্ষ্যে চীনে আসা–যাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও চীনের বাইরে ৩০টি দেশ ও অঞ্চলে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এবং এখন খবর পাওয়া যাচ্ছে যে চীনে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে, কিন্তু অন্যান্য দেশে তা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা; কারণ, তারা বলছে চীনের কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ ছাড়াই বা চীন সফর না করেও অনেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। এটি স্বস্তির বিষয়, কিন্তু বৈশ্বিক পরিসরে সংক্রমণ বৃদ্ধির যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আমাদের নিশ্চিন্ত থাকার সুযোগ নেই। বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় হলো, চীনে যেমন তেমনই অন্যান্য দেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে অধিকতর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। নিউইর্য়ক টাইমস উল্লেখ করেছে, ইতালিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ কিছু এলাকায়; এই সংকট মোকাবিলায় দেশটির সাফল্যের ওপর নির্ভর করবে পুরো ইউরোপ মহাদেশের সাফল্য। অর্থাৎ ইতালি এক বিরাট পরীক্ষার মুখোমুখি।

বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জনঘনত্বের দেশগুলোর অন্যতম; এ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটলে তা এক বিরাট জাতীয় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যা আমরা কোনোভাবেই চাই না। সে কারণে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। সরকার এ বিষয়ে সচেতন আছে; একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ সফরে না যাওয়ার পরামর্শ প্রচার করা হয়েছে। বিমানবন্দরে বিদেশফেরত সব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য ফরম পূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজন হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস শনাক্ত করাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ জোরদার করতে হবে; প্রতিটি পরিবারকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ামাত্র তাকে হাসপাতাল–ক্লিনিক–স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে।

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সরকারি পর্যায়ের সতর্কতা ও প্রস্তুতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও সচেতনতা ও সতর্কতা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রগুলোতে সচেতনতা বাড়ানোর বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন; রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা আরও বাড়াতে হবে।