ঢাকায় মশার উৎপাত

ঢাকা মহানগরের বাসিন্দারা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। কিছু সংবাদমাধ্যমে এ সম্পর্কে কিছু খবর ছাপা হয়েছে। এটা প্রাথমিক কাণ্ডজ্ঞানের কথা যে মশার উপদ্রব বাড়ে তখনই, যখন মশকনিধন কার্যক্রম থাকে না। গত বছর ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবের সময় নাগরিক সমাজের প্রবল সমালোচনার চাপে মশকনিধন কার্যক্রমে যে তৎপরতা দেখা দিয়েছিল, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এর মানে কি এই যে ডেঙ্গু  জ্বর কিংবা মশাবাহিত কোনো রোগ প্রায় মহামারির আকার ধারণ না করা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের চেতনায় কোনো সাড়া পড়তে নেই? তাদের টনক শুধু তখনই নড়বে, যখন হাজার হাজার মানুষ মশার কামড় খেয়ে রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল-ক্লিনিক-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়বে? 

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সারা বছর নিয়মিতভাবে মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়ে গেলে মশার উপদ্রব এমন মাত্রায় বেড়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। ডেঙ্গু জ্বর নেই, সমাজে শোরগোল নেই—এই ভেবে দুই সিটি করপোরেশন মশকনিধন কার্যক্রমে শিথিলতা দেখালে অচিরেই আমরা আবারও বড় বিপদের মুখোমুখি হতে পারি। তা ছাড়া, এখন ডেঙ্গুর মৌসুম নয় বলে কেউ কোথাও এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে না—এটাও সত্য নয়। কদিন আগেই খবর বেরিয়েছে, ২৫০ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিপদের কথা হলো, ঢাকায় মশার উপদ্রব ইতিমধ্যে যা বাড়ছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বেড়ে যাবে আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই। 

ঢাকা মহানগরে মশার ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করে এবং মশার প্রজনন-পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়, এমন একটি গবেষক দলের পক্ষ থেকে কদিন আগে বলা হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা মহানগরে মশার ঘনত্ব রেকর্ড মাত্রায় বেড়ে যাবে। এক সপ্তাহের জরিপ থেকে তারা এই অনুমানে পৌঁছেছে। এ মাসের মাঝামাঝি থেকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে; মশার লার্ভাগুলোর পূর্ণাঙ্গ মশায় পরিণত হওয়ার এটা উপযুক্ত সময়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত ওই গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক কবিরুল বাসার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, অতি জরুরি ভিত্তিতে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে মশার প্রজননস্থলগুলোতে মশার লার্ভা মারার ওষুধ ছিটাতে হবে, নইলে মার্চে ঢাকায় মশার উৎপাত ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। 

কিন্তু মশকনিধন কার্যক্রমে দুই সিটি করপোরেশনকে যথেষ্ট তৎপর দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে খবর বেরিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তত ১৮টি ওয়ার্ডে মশার লার্ভা মারার ওষুধ ছিটানোর যন্ত্রগুলোর একটা বড় অংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। অন্যগুলোর অবস্থা যে ভালো নয়, তা বোধগম্য। কারণ, ডেঙ্গুর মৌসুমে অনেকটা দিশেহারা হয়ে তড়িঘড়ি করে প্লাস্টিকের তৈরি ওই যন্ত্রগুলো বিদেশ থেকে কিনে আনা হয়েছিল অনেক টাকা খরচ করে। খুব তাড়াতাড়িই যে সেগুলোর অধিকাংশ অকেজো হয়ে গেছে, এ জন্য কাউকে কোনো জবাবদিহি করতে হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু এরই মধ্যে আবারও অনেক টাকা ব্যয় করে চীন থেকে নতুন যন্ত্র আনা হচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। সেগুলো যেন গুণগত মানসম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

মশার লার্ভা মারার ওষুধ ও তা ছিটানোর যন্ত্রের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। সারা বছর নিয়মিতভাবে সেগুলো ছিটানোর ব্যবস্থাটাকে স্থায়ী চর্চায় পরিণত করা প্রয়োজন। এটা কোনো মৌসুমি ব্যাপার নয়।