অসময়ে পদ্মার ভাঙন

এর নাম নিয়তি। গত বছরও যাঁর গোলাভরা ধান আর গোয়ালভরা গরু ছিল, সেই তাঁকেই এখন পরের জমিতে ঘর তুলে রাত কাটাতে হচ্ছে। পদ্মার থাবায় সব গেছে। বসতভিটা, ঘরবাড়ি—সব। চোখের সামনে অনিশ্চয়তা আর পেটে উদগ্র ক্ষুধা। অথচ মধ্যবিত্তের আত্মসম্মানবোধ হাতও পাততে দিচ্ছে না। খেয়ে না-খেয়ে দিন পার হচ্ছে।

এই ছবি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে নদীতীরবর্তী এলাকার। এখন শুষ্ক মৌসুম। তবু থেমে থেমে পদ্মার ভাঙন জারি আছে। যাঁদের হাতে কিছু টাকা আছে, তাঁরা অন্যের জমি বছরভিত্তিক চুক্তিতে লিজ (ইজারা) নিয়ে ঘরবাড়ি তুলছেন। যাঁদের সে সামর্থ্য নেই, তঁাকে পরের দয়ায় বাঁচতে হচ্ছে।

স্থানীয় পরিসরে এটি অবশ্যই একটি ‘জরুরি অবস্থা’। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সরকার এই ‘জরুরি অবস্থাকে’ দৃশ্যত স্বাভাবিক অবস্থা হিসেবে নিয়েছে। ভাঙন মোকাবিলায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমেও তেমন উচ্চ রব নেই। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে সেখানে ভাঙন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সেখানে ত্রাণের চালের চেয়ে নদীশাসন জরুরি। সরকারকে বুঝতে হবে, নদীশিকস্তিরা একটি দীর্ঘমেয়াদি ট্রমা বা মর্মাঘাতের মধ্য দিয়ে যায়। সেই মর্মাঘাত যদি রাষ্ট্রকে স্পর্শ না করে, তাহলে তা মানবতারই লজ্জা।

্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানকার মানুষ ক্ষুব্ধ। তাঁরা রাজপথ অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনে নামতে চান। সরকারের দিক থেকে বলা হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে ভাঙনে তেমন কিছু করার নেই। তবে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। জুন-জুলাইয়ে ঠিকাদার নিয়োগ হতে পারে। প্রকল্পটির মধ্যে ঘাট রক্ষা, নদীর পাড় রক্ষার কাজ রয়েছে, যা এই এলাকার ভাঙন ঠেকাবে।

এখন কথা হলো, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট আধুনিকায়নের ঘাড়ে চেপে ভাঙন মোকাবিলার যে কথা বলা হচ্ছে, তা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। সহজেই আন্দাজ করা যায়, আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হতে ছয়–সাত মাস লেগে যাবে। তত দিনে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে নদীতীরবর্তী এলাকার বিরাট একটি অংশ বিলীন হয়ে যাবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে এখানকার ভাঙন মোকাবিলায় বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত।