ময়মনসিংহ গণগ্রন্থাগার

যেখানে বেশির ভাগ সরকারি গণগ্রন্থাগার পাঠক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পাঠক আসা উৎসাহব্যঞ্জক। গ্রন্থাগার হলো জ্ঞানসমুদ্র, যেখানে সব শ্রেণি ও বয়সের পাঠক এসে তাঁদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটাতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে অনেকের পক্ষেই প্রয়োজনীয় বইটি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহ গণগ্রন্থাগারটি আগে ছিল ছোট বাজারের একটি ভাড়া বাড়িতে। ২০১০ সালে সার্কিট হাউস মাঠের জিমনেসিয়াম সেন্টারের পাশে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়। গত বছর এটিকে বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যদিও লোকবল বাড়ানো হয়নি। এই গ্রন্থাগারের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, মুসলিম গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় এর পাঠক সংখ্যাও বেশি। শিক্ষার্থী ছাড়াও চাকরিজীবী ও চাকরিপ্রত্যাশীরাও এই গ্রন্থাগারের নিয়মিত পাঠক। চাকরিপ্রত্যাশীরা যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেও গণগ্রন্থাগার নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন, সেটাও নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই।

পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গণগ্রন্থাগারটিতে ৬২ হাজার বই আছে। নিয়মিত আসেন এ রকম কয়েকজন পাঠক জানিয়েছেন, বর্তমানে গণগ্রন্থাগারটি সপ্তাহে পাঁচ দিন খোলা থাকে—সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক এক দিন বন্ধ রেখে বাকি ছয় দিন খোলা রাখারও দাবি তাদের। এই গ্রন্থাগারে একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, ময়মনসিংহ কর্নার, মহিলা কর্নার, রবীন্দ্র ও নজরুল কর্নার এবং অপর কক্ষে শিশু কর্নার ও পত্রিকা পাঠের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি ইংরেজি, একটি স্থানীয় পত্রিকাসহ শীর্ষস্থানীয় ১৩টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়।

আক্ষেপের বিষয়, গণগ্রন্থাগারটিতে পাঠক বাড়লেও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়েনি। বর্তমানে ১২০ জন পাঠক একত্রে বসে এখানে বই পড়তে পারেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সে ক্ষেত্রে লোকবল ও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে হবে। যোগ করতে হবে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ এর বিনিময়ে পাঠকদের কাছ থেকে ন্যূনতম ফি বা মাশুল নিতে পারে। গণগ্রন্থাগার সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও এর ধরন ভিন্ন। পাঠক তখনই গণগ্রন্থাগারের প্রতি আগ্রহী হবে, যখন তারা সেখানে গিয়ে মনের খোরাক পাবে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার অন্যদের জন্যও অনুসরণীয় হোক।