প্রাপ্যতা কম, কিন্তু সমহারে বিল

পানির মতো সহজ—বলা হয় বটে, কিন্তু নগরবাসীর কাছে পানির মতো কঠিন সমস্যা কমই আছে। নগরের কম আয়ের মানুষ, বিশেষ করে বস্তিবাসীর কাছে এই সমস্যা আরও কঠিন। পরিহাসের বিষয়, বস্তিবাসী বিত্তবানদের তুলনায় পানি খরচ করার সুযোগ পায় অনেক কম, কিন্তু তাদের পানির বিল দিতে হয় সমহারে।

গবেষকদের মতে, জনপ্রতি প্রতিদিন পানির ব্যবহার হওয়া উচিত ১৫০ লিটার, কিন্তু বস্তিতে দিনে মাথাপিছু ব্যবহার হয় মাত্র ৮৫ লিটার। আর বস্তির বাইরের বাসিন্দারা দিনে গড়ে ৩১০ লিটার করে পানি ব্যবহার করে। অথচ উচ্চবিত্তরা যে হারে বিল দেয়, তাদের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ পানি ব্যবহার করে বস্তির বাসিন্দাদের একই হারে পানির বিল দিতে হয়। এই অন্যায্য ব্যবস্থা দিনের পর দিন চলে আসছে। এমন বৈষম্যমূলক নিয়ম পাল্টানোর কোনো উদ্যোগই দৃশ্যমান হচ্ছে না।

বিদ্যুৎ বিলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সর্বনিম্ন সুবিধা রাখা আছে। পানির বিলের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ধাপ নেই। ফলে পর্যাপ্ত পানির সুবিধা না পেয়েও গরিব মানুষকে ধনীদের সমান পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। এই নিয়ম দ্রুত বাদ দেওয়া দরকার। অনেক বস্তিতে বৈধ পানির সংযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে বস্তিবাসীকে বাড়তি টাকা খরচ করে পানি কিনতে হয়। এ বিষয়ও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন। স্বল্প আয়ের নগরবাসীকে বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েও যে সিটি করপোরেশন ভালোভাবে চলতে পারে, তার উদাহরণ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিল্লিতে দেখা যাচ্ছে। সেখানে দিনে পরিবারপিছু ৭০০ লিটার পানি নিখরচায় দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ‘ফ্রি’ করে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাসহ সব মহানগরে বস্তিবাসীর জন্য নিখরচায় পানির সুবিধা দেওয়াই বিধেয়। সেই ‘ভিক্ষা’ দেওয়া যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত যেন তাদের পেছনে অন্যায্য বিলের ‘কুকুর’ লেলিয়ে না দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যে সুবিধা তারা ভোগ করতে পারে না, তার জন্য তাদের কাছ থেকে যেন অর্থ আদায় না করা হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম অভীষ্ট হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ নাগরিকের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করা। মাথায় রাখা দরকার, বস্তিবাসীর জন্য পানির ব্যবস্থা না করে এই অভীষ্ট অর্জন সম্ভব হবে না।