করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ

কোনো কোনো যুদ্ধে জয়ের জন্য রক্ষণাত্মক কৌশল উত্তম। আবার কোনো কোনো যুদ্ধে জেতার জন্য নিতে হয় আক্রমণাত্মক কৌশল। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের যুদ্ধের ক্ষেত্রে যেমন এটি প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের বিরুদ্ধেও।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব এক কঠিন যুদ্ধে অবতীর্ণ। এটা এমন এক নতুন সংকট, যা মোকাবিলার স্বতঃসিদ্ধ কোনো কৌশল কারও জানা নেই। ফলে যে যার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই যুদ্ধে রক্ষণাত্মক কৌশল কোনো কাজে দেবে না। নিতে হবে আক্রমণাত্মক কৌশল। অর্থাৎ ভাইরাসের পেছনে পেছনে ছুটলে হবে না, ছুটতে হবে আগে আগে। চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশ এই আক্রমণাত্মক কৌশল নিতে পেরেছে, তারা অনেকটাই সফল হয়েছে। কিন্তু ইতালিসহ যেসব দেশ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা চরম বিপদে পড়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করোনাবিরোধী যুদ্ধের কৌশলকে আমরা কীভাবে দেখব? শুরু থেকে সরকার যে কৌশল নিয়েছিল, তাকে আক্রমণাত্মক বলা যাবে না। বর্তমানে সরকারের কিছু উদ্যোগ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আজ থেকে সেনাবাহিনী নামছে। ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৫ মার্চ থেকে দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর ১৬ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। তারও আগে দেড় মাস আমরা পেয়েছি প্রস্তুতি নিতে। কিন্তু শুরুতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত। সমন্বয়ের অভাবও দেখা গেছে। অনেক দেশ ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাটডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যাতে এই সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে না পারে। আমরা সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। বিশেষ করে সময় পাওয়ার পরও গত দুই মাসে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, করোনাভাইরাস পরীক্ষার যথেষ্ট কিট, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার সরঞ্জাম এবং তাঁদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করা যায়নি।

বিদেশফেরত ব্যক্তিরাই যেহেতু এ দেশে এই ভাইরাস নিয়ে আসার একমাত্র উৎস, তাই তাদের যথাযথ কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাই ছিল একেবারে প্রাথমিক কাজ। এই কাজে বিশৃঙ্খলা ও সিদ্ধান্তহীনতা ছিল। ফলে এই ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অসম্ভব বেড়ে গেছে। মাদারীপুরের শিবচরের পর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধের উপায় হলো মানুষকে মানুষ থেকে দূরে রাখা। অনেক দেশই বেশ আগ্রাসীভাবে কাজটি করেছে। শহর, এমনকি পুরো দেশ পর্যন্ত শাটডাউন করে দিয়েছে। প্রতিবেশী ভারত জনতার কারফিউ জারি করে জনগণকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বার্তা দিয়েছে। জনগণকে নিয়েই তারা এই লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও সচেতনতা সৃষ্টির কাজটি জরুরি। নানা কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে জনগণ এখন এই বিপদ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নয়। সবচেয়ে বড় কথা জোরদার ও আগ্রাসী পদক্ষেপ ছাড়া এই ভাইরাস মোকাবিলা করা যাবে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। মানুষ চায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তাতে সাময়িক ক্ষতি হলেও বাংলাদেশ বিপদমুক্ত থাকবে।

নাগরিকদের প্রতি আহ্বান, আসুন, আমরা সবাই মিলে বিপর্যয় ঠেকাতে সাময়িক কষ্ট স্বীকার করি।