ভাসানচরে ছিন্নমূল আশ্রয়ণ

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আবাসনের জন্য প্রস্তুত করা ভাসানচরের চরিত্র বদলে যাচ্ছে। সরকার সেখানে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের বসবাসের সুযোগ ও জীবিকার বন্দোবস্ত করে দিতে চায়। খোলা চোখে এটি এক সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত। আমরা একে সাধুবাদ জানাই।

সরকারিভাবে বলা হয়েছে, ভাসানচরে কেউ যেতে চাইলে তাঁর নাম স্থানীয় জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ের মাধ্যমে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে আসতে হবে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে তাঁদের ভাসানচরে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক নাগরিকদের একটি তালিকা তৈরি করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা আবেদন করে সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করবেন, তা ঠিক আছে; কিন্তু আবেদন-নিবেদনের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন সহজ করা হয়। দ্বিতীয়ত, আবেদনের সুযোগের খবর যাতে গণমাধ্যমের বরাতে সবার কাছে পৌঁছায়। তৃতীয়ত, সুযোগপ্রাপ্ত যাঁরা হবেন, তাঁরা যেন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই হয়ে আসেন। এসব প্রশ্ন ওঠার কারণ, অতীতে সমতলে ও পাহাড়ে এভাবে যত আবাসন করানো হয়েছে, তা সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও ফলপ্রসূ ছিল না।

রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জের মতো শহরে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বিপুল। শহরের অবকাঠামো যেমন এঁদের বইতে পারছে না, এঁরাও এসব জায়গায় মানবিক জীবন পেতে পারছেন না। এঁদের প্রতি সরকারের দায়িত্ব অবশ্যই রয়েছে। ভাসানচরে আবাসনে এঁদের যেন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

এসবের আগে ভাসানচরে সত্যিই মানুষের বসবাস এবং সমাজ-সভ্যতা গড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি না, তা দেখা দরকার। নোয়াখালীর এই চরের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের নৌযোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। সেটা স্থাপন করতে হবে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য সেখানে যে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের মানুষের জন্য উপযোগী কি না; তা নিরূপণ করতে হবে। সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিদ্যালয়সহ আইন ও প্রশাসনের কাঠামোও গড়তে হবে। মূল সমস্যা হবে কর্মসংস্থানের। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মানুষ সাধারণত একই সমাজ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। সেটা যেন না হয়, তার জন্য অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বাস্তবায়নের নকশা প্রণয়ন করা দরকার।