করোনা মোকাবিলায় স্বচ্ছতার নীতি বজায় রাখাই সর্বোত্তম

>
ডা. মুশতাক হোসেন
ডা. মুশতাক হোসেন

ডা. মুশতাক হোসেন। ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) এর অন্যতম উপদেষ্টা। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো: করোনা মোকাবিলায় সামর্থ্য নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট?
মুশতাক হোসেন: জরুরি পরিস্থিতিতে সন্তুষ্টির কোনো প্রশ্ন না তোলাই ভালো। কাজটা ঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে কি না, সেটাই মুখ্য। এটা একটা নতুন মহামারি। তার গতিপ্রকৃতি নতুন। বাংলাদেশ পরিস্থিতি কিছুটা অনন্য এটা চীন বা ইতালির মতো নয়। এখানে যেমন বাড়তি কিছু সমস্যা আছে, আবার কিছুর অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। এই রোগ মোকাবিলায় কৌশল গ্রহণে নমনীয় থাকতে হবে।
প্রথম আলো: সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা করানোর বিষয়টিতে অগ্রগতি কোথায়?
মুশতাক হোসেন: 8 মার্চ আমরা প্রথম রোগী পেলাম। তার আগে আক্রান্ত দেশ থেকে এবং আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের লক্ষণের ভিত্তিতে আমরা পরীক্ষা করে চলছিলাম। এরপর সারা দেশে হাসপাতালে যারাই শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে এসেছে, তাদের স্যাম্পল টেস্ট করা হচ্ছে। এতে পরীক্ষা বেড়েছে। আর এদের মাঝে দু–একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের সঙ্গে সরাসরি বিদেশফেরত কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তিদের সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে না। আর এতেই মনে হচ্ছে যে তাদের কারও কারও মধ্যে কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটতে পারে। সেটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। সে অবস্থাটি যাতে আমরা তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সে জন্যই কন্টাক্ট ট্রেসিং, লক্ষণযুক্ত কন্টাক্টের টেস্ট সংখ্যা এখন বাড়ছে এবং আরও বাড়বে। 8 মার্চ এরপর থেকে আমাদের প্রস্তুতি অনেক গুণ বেড়েছে। তবে আমাদের সামর্থ্য ও প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে হবে।
প্রথম আলো: আমরা সংক্রমণের কোন লেভেলে?
মুশতাক হোসেন: আমরা এখন তিন লেভেলের কাছাকাছি। দুই হলো, কিছু রোগী পাওয়া এবং পরিবারের মধ্যে ছিটেফোঁটা পাওয়া। কিন্তু এখন আমরা ক্লাস্টার পাচ্ছি। এটাই কমিউনিটি সংক্রমণের পূর্ব লক্ষণ। ক্লাস্টার হলো একজন রোগীকে কেন্দ্র করে তার পরিবারের সবার আক্রান্ত হওয়া, তার বাইরেও যাওয়া। এই ক্লাস্টারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
প্রথম আলো: আপনি আইইডিসিআরে ছিলেন। এখন কীভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্ত আছেন?
মুশতাক হোসেন: ৯ মার্চ থেকে আইইডিসিআরের অনুরোধে এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আমি একজন রিস্ক কমিউনিকেশন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছি। এর আগে এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএস সিডিসি, বিশ্বব্যাংকের প্রভৃতি সংস্থার অর্থায়নে উপদেষ্টা হিসেবেও কখনো কখনো অবৈতনিক কাজ করেছি। উহানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেখা দেওয়ার শুরুর পর্যায়ে আমাদের শাহজালাল বিমানবন্দরে যে প্রস্তুতি ও মহড়া হয়েছিল তাতেও অংশ নিই। তখন অবৈতনিক হিসেবে কাজ শুরু করেছি।
প্রথম আলো: দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সামর্থ্য ও অবকাঠামোগত কী সমস্যা দেখলেন?
মুশতাক হোসেন: আমি এই প্রতিষ্ঠানে ১৯৯৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছিলাম। এখানে সমস্যা রয়েছে এবং এটি এমন একটা প্রতিষ্ঠান, এখন যতটা ব্যাপকতা নিয়ে কাজ করছে, সে অনুযায়ী যত লোকবল ও অবকাঠামোগত সুবিধা থাকা উচিত, তা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অবস্থিত সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল সিডিসির মতো একে গড়তে হবে। তখন এ সংস্থাটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখতে পারবে। সে জন্য এখনই বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব খাত থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে বেশি বাজেট ও সহযোগিতা দেওয়া উচিত। এই প্রতিষ্ঠানকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি ল্যাবরেটরির সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ল্যাবরেটরি একটা টুইনিং সম্পর্ক রাখে। সিডসি আটলান্টা আইইডিসিআরের সঙ্গে সেটাই রাখছে। অনেক রোগ পরীক্ষা এখানেই হয়। আগের মতো আটলান্টায় পাঠাতে হয় না।
প্রথম আলো: করোনা মোকাবিলায় কী কৌশল বেশি কার্যকর বলে মনে করেন?
মুশতাক হোসেন: বিশ্ব মহামারি বা প্যানডেমিক ঠেকানো মুশকিল। তবে তার বিস্তার পিছিয়ে দেওয়া যায়। উহানের দুই মাস পরে এখানে শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধীরে ধীরে একই প্যাটার্নে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্যান্য দেশে দেখা গেছে এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ রোগীর সংখ্যা লাফ দিয়ে বেড়ে গেছে। আমাদের দেশে সেটা এখনো ঘটেনি বা রোগীর সংখ্যার কোনো উল্লম্ফন ঘটেনি। এখন কৌশল হবে এ উল্লম্ফনটাকে কতটা পিছিয়ে দেওয়া যায়। ভারতও এখন পর্যন্ত কিন্তু ক্লাস্টার পর্যায়ে রয়েছে, উল্লম্ফন ঘটেনি। আমরা পরস্পর দুই প্রতিবেশীকে পর্যবেক্ষণ করছি।
প্রথম আলো: তথ্যের আদান-প্রদান কীভাবে ঘটছে?
মুশতাক হোসেন: অতিসম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সার্ক সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলন করেছেন। সেখানে আইইডিসিআর অংশ নিয়েছে। তবে দিল্লিতে অবস্থিত ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক দপ্তরের মাধ্যমে যোগাযোগটা ঘটছে।
প্রথম আলো: মিয়ানমারের সঙ্গে? জাতিসংঘের মহাসচিব ২৩ মার্চ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মুশতাক হোসেন: মিয়ানমারে সবে শুরু হলো। তবে আমরা মিয়ানমারের দিকে নজর রাখছি। রাখাইনে এখনো কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা যায়নি। রাখাইন রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিশ্চয়ই আমাদের ওপরে প্রভাব ফেলবে। নাফ নদী হয়ে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও যাতায়াত তো আছেই।
প্রথম আলো: কিন্তু এখন পর্যন্ত সবকিছুই হচ্ছে ঢাকাকেন্দ্রিক। লন্ডন প্রত্যাগত সিলেটের যে নারী মারা গেলেন, তাঁর নমুনা ঢাকায় পাঠানোর ক্ষেত্রে কিন্তু দ্রুত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
মুশতাক হোসেন: আমি সেটা সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে নমুনা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় আনার বিষয়টি কিন্তু নতুন করে শুরু হয়নি। এই প্রক্রিয়া আগে থেকেই চলমান ছিল। সারা দেশে আইইডিসিআরের বিভিন্ন সার্ভিলেন্স সেন্টার রয়েছে। সেখান থেকে নানা রোগের পরীক্ষার জন্য নমুনা মহাখালীর আইইডিসিআরে আসে। সেই একই নেটওয়ার্ক কাজ করছে।
প্রথম আলো: কিন্তু বাস্তবে কী ঘটছে। মিরপুরে যে ভদ্রলোক মারা গেলেন, তাঁর ছেলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্যথিতচিত্তে লিখেছেন, তাঁর অসুস্থ বাবার নমুনা টেস্ট করাতে বারংবার ধরনা দিয়েও আইইডিসিআরের মন গলাতে পারেনি। দুই দিন বিলম্বে তারা রাজি হয়েছে। কী বলবেন?
মুশতাক হোসেন: এ বিষয়ে হয়তো পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা বলতে পারি, 8 মার্চের আগে নমুনা সংগ্রহের যে মানদণ্ড অনুসরণ করা হচ্ছিল, তারপরে তাতে বদল ঘটেছে। এর কোনো সন্ধিক্ষণে এ ঘটেছে কি না, সেটা খোঁজ নিলে জানা যাবে।
প্রথম আলো: কিন্তু যত বদলই হোক, পরিসংখ্যান বলছে, আপনারা সব মিলিয়ে ৫০০ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করেছেন। কিন্তু বিশ্বে মহামারি ঘটে গেলেও ঢাকাই হবে ভরসা?
মুশতাক হোসেন: বিশ্ব মহামারি অবস্থায় পৌঁছে গেলে সব রোগীর পরীক্ষা করতে হবে না কিন্তু তার আগে এই ধরনের টেস্ট করার কেস বহুগুণে বেড়ে যাবে। স্যাম্পল সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। তাই বিকল্প বাড়ানো হচ্ছে। আইসিডিডিআরবি ইতিমধ্যেই টেস্ট শুরু করেছে। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডির ল্যাব আছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তারা স্যাম্পল টেস্ট শুরু করবে। আইসিডিডিআরবি সপ্তাহখানেক ধরে করছে। একজনকে তারা শনাক্তও করছে। তবে তাদের কাছে বাইরের নমুনা পাঠানো হচ্ছে না। নিজেদের রোগীই শুধু শনাক্ত করবে তারা।
প্রথম আলো: কিন্তু পরিস্থিতির যা ব্যাপকতা, তাতে শুধু এই তিনটি প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট নয়। আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব?
মুশতাক হোসেন: দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, যেখানেই বায়োসেফটি কেবিনেট আছে, তারাই রোগী শনাক্ত করতে পারবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে বরিশাল বাদে অন্যান্য বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বায়োসেফটি ক্যাবিনেটসহ ল্যাব–সুবিধা আছে। কয়েকটি বিভাগীয় শহরে বড় বড় মেডিকেল কলেজে, যাদের বায়োসেফটি ক্যাবিনেট উপযুক্ত পর্যায়ে আছে, তারাও কোভিড-১৯–এর স্যাম্পল পরীক্ষা শুরু করবে। আইইডিসিআর এসবের কোয়ালিটি নিশ্চিত করবে। এখন প্রশিক্ষণ প্রদান চলছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে রোগ তদারকির জন্য নমুনা পরীক্ষার্থে একটি বায়োসেফটি কেবিনেট দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: তাহলে এত দিন বসে থাকলাম কেন আমরা?
মুশতাক হোসেন: বায়োসেফটি ক্যাবিনেটে এই কাজ শুরু করতে হলে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। সে জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেশন লাগবে। সেই সার্টিফিকেশন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে আইসিডিডিআরবি এই সার্টিফিকেশন ফি নিয়ে করে থাকে। তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এ নিয়ে কথা হয়েছে। এবারে তারা ফি নেবে না, বিনা মূল্যে করে দেবে এই সার্টিফিকেশন।
প্রথম আলো: সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে যে আইসোলেশন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপক ভিত্তিতে যদি রোগী ভর্তি শুরু হয়ে যায়, তখন কী হবে? বাড়ি খোঁজার দরকার নয় কি?
মুশতাক হোসেন: বাড়ি তো বেশ কয়েকটাই নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অবস্থা মহামারি পর্যায়ে চলে গেলে যাঁদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার, তাঁরা অনেকেই হাসপাতালে না-ও থাকতে পারেন। তখন বড় বড় হাসপাতালও কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য পাওয়া যেতে পারে।
প্রথম আলো: এখনই একটি নীতিমালা? স্বেচ্ছায় স্থানান্তর?
মুশতাক হোসেন: আমি আপনার সঙ্গে একমত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে একটা সাধারণ নির্দেশিকা যেতে পারে।
প্রথম আলো: বিশ্বব্যাংক এ রকমের একটি নাজুক পরিস্থিতিতে আপনাকে রিস্ক কমিউনিকেশন পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিল। আপনার অগ্রাধিকার কী?
মুশতাক হোসেন: আমার কাজ হচ্ছে, জনসাধারণ, সায়েন্টিফিক কমিউনিটি এবং চিকিৎসক—তাদের কাছে এই বিষয়ে তথ্যগুলো এমনভাবে পৌঁছে দেওয়া, যাতে তারা নিজেরাই যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যাতে তারা নিজেরা নিজেদের সামর্থ্য বাড়াতে পারে। তাদের কী করতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই পরিস্থিতি বুঝে নিতে পারে। যেমন মানুষকে যদি আমরা বলি, এই রোগের লক্ষণগুলো কী এবং তা কী করে ছড়ায়, তাহলে তারা নিজেরাই ব্যবস্থা নিয়ে সতর্ক থাকবে। এবং এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তিনি কী করবেন, কোথায় যোগাযোগ করবেন, ঝুঁকিটা জানাতে পারলে নিজেই প্রতিকার করার পথ খুঁজে পাবেন। চিকিৎসকেরা আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন যে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কীভাবে কথা বলা উচিত। এই যে আপনার সঙ্গে কথা বলছি এটাও রিস্ক কমিউনিকেশন এর অংশ। কারণ, আপনার মাধ্যমে যত সহজে বার্তা মানুষের কাছে যাবে মেডিকেল পরিভাষায় তা যাবে না। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কেউ কেউ অনেক সময় অনেক কিছু বলে ফেলেন, যা ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা উচ্চ পদে আছেন, তাঁরা কোনো কোনো সময় কিছু কথা বলে ফেলেন, সেটা অনেক সময় সমস্যা তৈরি করে। আইইডিসিআরের পরিচালকের সঙ্গে আমি কাজ করছি। তিনি ভালোভাবে গণমাধ্যমে ব্রিফ করছেন বলে আমার ধারণা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বচ্ছতার নীতি বজায় রাখাই সবচেয়ে উত্তম। দ্রুত মানুষকে প্রকৃত পরিস্থিতি অবহিত রাখতে হবে। মানুষ যখন একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে থাকে, তখন তাঁরা নানাভাবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে। এটা কাটিয়ে তোলা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হয়। তবে তা সততা এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে উতরানো সম্ভব।
প্রথম আলো: আপনি নিজেকে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ মনে করেন কি না?
মুশতাক হোসেন: একজন স্বাধীন কনসালট্যান্ট হিসেবেই আমার নিয়োগ।
প্রথম আলো: এই মুহূর্তের তিনটি অগ্রাধিকারের জায়গা বলুন।
মুশতাক হোসেন: প্রথমত, ধরেই নিতে হবে যে উদ্ভূত প্যানডেমিক পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ অবস্থায় আমরা যেতে পারি। প্রিভেনশন, ডিটেকশন, কনটেইনমেন্ট ও মিটিগেশন—এই চার স্তরের সর্বত্র আমাদের সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুততার সঙ্গে পর্যাপ্ত সম্পদের সমাবেশ ঘটাতে হবে। তৃতীয়ত, যাঁরা মনে করছেন আপনা–আপনি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, এই ধারণা ভুল। এটা ভাঙাতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটা ছোট জায়গায় সংকট তৈরি হলে সেটা গোটা ব্যবস্থাকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। এটা একটা অরগানিক হোল। কোনো একটা অঙ্গ যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, তাহলে গোটা সিস্টেমটাই সাফার করতে পারে। এটা সার্বিকভাবে সরকারের এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আনতে হবে। সে জন্য মনিটর করতে হবে। তাহলেই আমরা এর ধাক্কা সামলাতে পারব।
প্রথম আলো: প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৫০০ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তাদের কীভাবে কাজ করা উচিত?
মুশতাক হোসেন: সবাই সমান গুরুত্বের সঙ্গে অংশীদার, এই মনোভাবটা জাগিয়ে তোলা দরকার। সবাই যাতে দায়িত্বটা ভেতর থেকে অনুভব করে। কমিটিগুলোর হয়তো এই ধরনের পরিস্থিতিতে ঘন ঘন বসতে অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ অত্যন্ত নিবিড় হওয়া দরকার। প্রয়োজনের সময় যাতে আমলাতান্ত্রিক জাঁতায় না পড়ে। কে কাকে ডাকল বা ডাকল না, এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে এটা যেন কেউ না ভাবে। এই সময় কেউ যাতে বঞ্চিত বোধ না করেন যে আমাকে তো খবর দেওয়া হলো না। দায়িত্বপ্রাপ্তদের মনে করা উচিত যে আমার বলার সময় এটা নয়। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সাজেশন দিতে পারেন যে আমি এই কাজটা করতে পারি।
প্রথম আলো: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন। রিস্ক কমিউনিকেটর হিসেবে আপনি কী পরামর্শ দেবেন? একটি বলুন।
মুশতাক হোসেন: আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে যে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন, তার মধ্যে দিয়ে এই একটি বার্তা স্পষ্ট থাকবে যে তিনি নিজেই নেতৃত্বের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। হ্যাঁ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই আছেন, কিন্তু তাঁকে বলতে হবে: আমি এর দেখভালের দায়িত্ব আমি নিজেই নিলাম এবং এর নিয়ন্ত্রণ না করা পর্যন্ত, আমি আমার নজর অন্যত্র সরাচ্ছি না।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
মুশতাক হোসেন: ধন্যবাদ।