বিচ্ছিন্নকরণ হোক সর্বাত্মক

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন দেশে কার্যত লকডাউন চলছে। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে সামাজিক বিচ্ছিন্নতাই সবচেয়ে কার্যকর পথ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে করোনা মোকাবিলার যুদ্ধে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে সড়ক, নৌ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সীমিত পরিসরে চলছে বিমান। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালতও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনে কাঁচাবাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, ওষুধের দোকান, খাবারের দোকান ইত্যাদি খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। অফিস-আদালত বন্ধ হওয়ার পর লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। যেভাবে তঁারা গণপরিবহন ও যানবাহনে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরে গেছেন, সেটা সংক্রমণকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবে কি না, সেই আশঙ্কা রয়ে গেছে। যেসব মানুষ গ্রামে গেছেন, তঁাদের ওপর নজরদারি খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধ কমিটি করেছে সরকার। এসব কমিটি যাতে যথাযথভাবে কাজ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এতটা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে যে তা সামাল দিতে বিশ্বের অনেক উন্নত ও শক্তিশালী দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। কিছু কিছু দেশে প্রতিদিন শত শত লোক মারা যাচ্ছে। যেসব দেশ শুরু থেকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আসছে, তাদের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এগোতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বিশ্বের অনেক দেশই নিয়েছে এবং এভাবে সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভারত তিন সপ্তাহের লকডাউন বা অবরোধ দিয়েছে। বাংলাদেশ আপাতত সপ্তাহ দুয়েকের যে বিচ্ছিন্নতার উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে কার্যকর করাই এখন আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আমরা আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সামাজিক বিচ্ছিন্নতার এই উদ্যোগ কার্যকরের ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। প্রত্যেক নাগরিককে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও আইন যথাযথভাবে মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। তবে এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা লকডাউনের উদ্যোগ কার্যকর থাকলেও অনেকগুলো জরুরি সার্ভিস চালু রয়েছে। ব্যাংক, কিছু কিছু কারখানা, ওষুধ ও খাবারের দোকান, হাসপাতাল এবং গণমাধ্যম তাদের কার্যক্রম চালাবে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাতে নির্বিঘ্নে রাস্তায় চলাচল করতে পারেন এবং কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

তবে শুধু এসব সেবা দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের চলাফেরা নিশ্চিত করলেই হবে না, যঁারা এসব সেবা নিতে যাবেন তাঁদের চলাফেরাও নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক যেহেতু খোলা থাকবে, তাই গ্রাহকেরা ব্যাংকে যাবেন, মানুষকে খাবার ও ওষুধ কিনতে বের হতে হবে। পুরো বিষয়টিকে মানবিকভাবে দেখতে হবে। আমরা আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে যঁারা কাজ করবেন, তঁাদেরকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।

একই সঙ্গে জনগণের প্রতি আমরা আইন মেনে চলতে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যেতে অনুরোধ জানাই। সবার সম্মিলিত সহযোগিতার মধ্য দিয়েই এই দুর্যোগে মোকাবিলা করতে হবে।