হালদায় মৃত ডলফিন

দেশের একমাত্র মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে আবার একটি মরা ডলফিন ভেসে উঠেছে। করোনাকবলিত এই সময়ে দিশেহারা দেশবাসীর কাছে এটি হয়তো বড় কোনো দুঃসংবাদের ‘মর্যাদা’ পাবে না। একটি ‘অতি তুচ্ছ’ প্রাণী কোনো না কোনো কারণে মরে ভেসে উঠেছে—এমন খবরের মধ্যে বিশেষ তাৎপর্য খুঁজতে যাওয়াকে অনেকে বাড়াবাড়িও সাব্যস্ত করতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না। কিন্তু প্রথম আলোয় প্রকাশিত এই ‘তুচ্ছ’ খবরের মধ্যে যে অতি গুরুতর ও উৎকণ্ঠিত হওয়ার মতো বিষয় নিহিত আছে, তা পরিবেশসচেতন নাগরিকেরা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারছেন।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ডলফিনটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। যে জেলেরা ডলফিনটির মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন, তাঁরা মনে করছেন, নদীতে চলাচল করা বালুবাহী ড্রেজার কিংবা যন্ত্রচালিত নৌকার আঘাতে এটির মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে গত আড়াই বছরে এই নদীতে ২৩টি ডলফিন মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং সেগুলোর বেশির ভাগের গায়ে একই ধরনের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

যাঁরা বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করেন, তাঁরা জানেন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত অতি বিপন্ন প্রজাতির একটি জলজ প্রাণী হচ্ছে মিঠাপানির ডলফিন। বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে হালদায় ছিল ১৭০টি। তার মধ্যে অনেকগুলোই গত আড়াই বছরে মারা পড়েছে। যান্ত্রিক নৌযান ও বালুবাহী ড্রেজারের যান্ত্রিক পাখার আঘাতে ডলফিনগুলো যাতে না মরে, সে জন্য সরকার নদীতে বালুমহালের ইজারা বাতিল করেছে। কিন্তু সরকারি সেই আদেশ খাতাপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। বাস্তব অবস্থা হলো, বালুবাহী ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌকা অবাধেই চলছে।

হালদা নদীর রাউজান অংশের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে চলছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও যান্ত্রিক নৌযানের চলাচল। সামনে মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম। এই সময়েও এসব ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌকা চলাচলে বিরাম নেই। সে কারণে মা মাছসহ ডলফিন মারা যাচ্ছে। প্রশাসনের চোখের সামনেই যেহেতু এসব চলছে, সেহেতু দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে। প্রাণিবৈচিত্র্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ডলফিনের এই মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ এবং সামগ্রিক পরিবেশ নস্যাতে ভূমিকা রাখা ফৌজদারি অপরাধের শামিল বললে অত্যুক্তি হবে না। এই গুরুতর অপরাধ বন্ধে হালদায় নিষিদ্ধ নৌযান চলাচলের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চালানো দরকার।