চিকিৎসা সুরক্ষা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর উদ্দেশ্যে দেশজুড়ে লোকজনকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া এবং টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করার পর রাজধানীর পথঘাট জনশূন্য হয়েছে; লোকসমাগমের অন্যান্য জায়গাতেও ভিড় নেই। রাজধানীর বাইরে বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক দূরত্ব রচনার পরিকল্পনা কার্যকর হতে শুরু করেছে। তবে এ সিদ্ধান্ত নিতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বিদেশফেরত প্রায় তিন লাখ মানুষ তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ অনেক মানুষের সংস্পর্শে গেছেন। ফলে অচিরেই একসঙ্গে অনেক করোনা রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। সেটা হবে একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

প্রথমত, অত্যন্ত ছোঁয়াচে এ রোগের চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণ পৃথক চিকিৎসাকেন্দ্র প্রয়োজন, যেখানে সব ধরনের লজিস্টিকস সুবিধা থাকতে হবে। এ উদ্দেশ্যে আটটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালের প্রস্তুতি এখনো সম্পন্ন হয়নি।

দ্বিতীয়ত, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স প্রয়োজন, যাঁরা এ দায়িত্ব পালন করতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হবেন। সে জন্য তাঁদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত করোনা-আক্রান্ত প্রায় সব দেশের অভিজ্ঞতা হলো, এ রোগের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক ও নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার দিন থেকেই চিকিৎসকেরা নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতির কথা বলে আসছেন। অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া তাঁরা রোগী দেখবেন না—এমন ঘোষণা তাঁরা দিয়ে রেখেছেন।

ঘোষণা দিন বা না দিন, চিকিৎসকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা যে সম্ভব হবে না। তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে দূর করতে হবে; তা হলে কোনো বিশেষ নির্দেশনা জারি করেও কোনো কাজ হবে না। তাঁরা শুরু থেকেই পিপিইর কথা বলে আসছেন; কিন্তু তাঁদের কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেল, পরিস্থিতি এমন হয়নি যে এখনই চিকিৎসকদের পিপিইর প্রয়োজন হবে। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে স্বয়ং মন্ত্রীর এমন দৃষ্টিভঙ্গি অজ্ঞতাপ্রসূত। আসলে চিকিৎসক, নার্স, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য সংক্রমণ-প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এ সংকট মোকাবিলার এক অতি জরুরি অংশ। অন্য যেসব দেশ এ সংকট মোকাবিলা করছে, তাদের অভিজ্ঞতার দিকে দৃষ্টিপাত করলেই এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে কী বলেছে, পিপিইর কী মান নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেদিকেও আমাদের নীতনির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পিপিইর ঘাটতি দূর করা, পর্যাপ্তসংখ্যক গুণগত মানসম্পন্ন পিপিইর ব্যবস্থা করা। আগামী তিন মাসে আমাদের প্রয়োজন ১০ লাখ পিপিই; কিন্তু এ মুহূর্তে মজুত আছে মাত্র ৬৬ হাজার। গতকাল ১০ হাজার পিপিই চীন থেকে এসেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এটা নগণ্য। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পিপিই সরবরাহ করতে চায় বলে খবর বেরিয়েছে। সেগুলো নেওয়ার আগে খতিয়ে দেখা উচিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের কি না।