আকিজের করোনা হাসপাতাল

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কোনো বিশেষায়িত ও সাধারণ হাসপাতাল নেই—আগে থেকে থাকার কথাও নয়। এটাই এখন জরুরি জাতীয় প্রয়োজন। প্রয়োজনের এই ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকায় ৩০১ শয্যার একটি হাসপাতাল তৈরি করছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রুপ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আকিজের নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে হাসপাতালটি তৈরি হলে বিনা মূল্যে সেবা দিত। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতার বাধায় কাজটি স্থগিত হয়ে গেছে গত শনিবার। তেজগাঁও কোনো আবাসিক এলাকা নয়, সেখানে একজন কাউন্সিলর কীভাবে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলার একটি উদ্যোগকে বন্ধ করে দিতে পারেন? সরকার, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ কেবল চেয়ে চেয়ে দেখবে?

 সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দুই সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতাল চালু করে রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে বলে গণমাধ্যম জানাচ্ছে। আমরা একে একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সামাজিক দায়িত্ব পালন হিসেবেই শুধু দেখতে পারি না, দেশবাসীর প্রতি পুঁজিমালিকদের যে দায়িত্ব রয়েছে, আকিজের এই উদ্যোগ তারই পথিকৃৎ।

আমরা দেখেছি, করোনার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে একদল স্বেচ্ছাসেবক মানুষকে সচেতন করা, জীবাণুনাশক বিতরণ, অসুস্থ ও অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে সরকারকে সহায়তা করছেন। সেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক ও নার্সও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তবু মানুষ বসে নেই। এভাবে যদি সামর্থ্য অনুযায়ী সব ব্যবসায়ী, শিল্পমালিক এবং দরদি ব্যক্তিরা মানুষের সাহায্যে নেমে পড়েন, তাহলে করোনার আঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশ কম ক্ষতি নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে। যদি মানুষ না বাঁচে, সমাজ বিপর্যস্ত হয়, তাহলে অর্থনীতিও মারাত্মক খাদে গিয়ে পড়তে পারে। আপন স্বার্থেই তাই দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর করোনা মোকাবিলায় যুক্ত হওয়া উচিত।

আকিজের মডেলটি চীনের উহানের। করোনা ছড়িয়ে পড়ায় চীন সরকার এক সপ্তাহে সেখানে বিরাট এক হাসপাতাল তৈরি করে। তারই আদলে আকিজ গ্রুপ অনুরূপ পন্থায় কাজটি করছে। আকিজ গ্রুপের পরিচালনায় নিম্নবিত্তদের জন্য দেশে বেশ কটি হাসপাতাল রয়েছে। সুতরাং স্বাস্থ্যসেবার অভিজ্ঞতার অভাব হওয়ার কথা নয়। এখন প্রয়োজন হচ্ছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা। করোনাভাইরাস মোকাবিলার উপযুক্ত কাঠামো ও সেবাব্যবস্থা গড়ে তোলা বেসরকারিই হোক আর সরকারিই হোক, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে চললেই হলো। সরকার ও আইইডিসিআরের কাছে প্রত্যাশা, তারা যাতে এই মহতী কার্যক্রম সফল করায় প্রত্যাশিত সাহায্য দেয়। সরকারের নিয়মকানুন থাকবে, কিন্তু তা যেন নিয়মের বেড়াজাল না হয়ে সফলতার শর্ত হয়।

আমরা আকিজ গোষ্ঠীর এই উদ্যোগকে আন্তরিক অভিবাদন জানাই এবং হাসপাতাল নির্মাণে সব বাধা জরুরিভাবে দূর করার দাবি জানাই।