খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল

সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উদ্দেশ্য মহৎ হলেও রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় লালিত একশ্রেণির দুর্নীতিবাজের কারণে সেটি পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। যাঁদের জন্য এই কর্মসূচি, তাঁরাও উপকার পাচ্ছেন না। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ, যঁাদের বাজারমূল্যে চাল কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁদের সহায়তার জন্যই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করা হচ্ছে ১০ টাকায়।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার শেখপুর বাজারে এক যুবলীগ নেতার গুদাম থেকে ৬৮ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। প্রতি বস্তায় ৩০ কেজি চাল আছে। কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে তিনি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এই চাল নিজের গুদামে মজুত করেছিলেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান চালিয়ে চাল উদ্ধার করে এবং যুবলীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করে।

আবু বক্কর সিদ্দিকী বাঁশকান্দি ইউনিয়নের সিপাইকান্দি গ্রামের ফয়জল মোল্লার ছেলে এবং ছাত্রলীগের বাঁশকান্দি ইউনিয়ন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য। শেখপুর বাজারে আবু বক্কর সিদ্দিকের চালের ডিলারশিপ আছে। তাঁর মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করা হতো। আবু বক্কর যে রাজনৈতিক খুঁটির জোরেই ডিলারশিপ বাগিয়ে নিয়েছেন, তাতে সন্দেহ করার সুযোগ কম। তিনি এমন সময়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ করলেন, যখন সারা দেশ করোনা–সংকটে অবরুদ্ধ এবং গরিব মানুষগুলোর আয়রোজগারের কোনো উপায় নেই।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা–সংকট মোকাবিলা এবং দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শিবচরের সাবেক ছাত্রলীগ ও বর্তমান যুবলীগের নেতা এভাবেই সেই আহ্বানের প্রত্যুত্তর দিয়েছেন। করোনা–সংকট উত্তরণে সরকার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে; যাতে বেশি সংখ্যক দরিদ্র মানুষ উপকার পায়। কিন্তু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল যুবলীগের স্থানীয় নেতা আত্মসাৎ করলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকারভোগী হবে কীভাবে?

ভিজিডি, ভিজিএফের চাল-গম আত্মসাৎ করা কিংবা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রি করার খবর হরহামেশাই গণমাধ্যমে আসে। কিন্তু অপরাধীরা শাস্তি পায় কদাচিৎ। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে অধিকাংশই পার পেয়ে যায়। আমরা আশা করব, বমাল ধরা পড়া আবু বক্কর সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে সেটি হবে না।

 খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আত্মসাৎ করা চাল উদ্ধার এবং আত্মসাৎকারীকে গ্রেপ্তার করায় স্থানীয় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। দেশের অন্যান্য স্থানেও প্রশাসন এভাবে সক্রিয়তা দেখালে রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দুর্নীতিবাজ ও দুর্বৃত্তরা অনেকটাই নিরস্ত হবে। আবু বক্করের শাস্তি নিশ্চিত হোক।